জাগান আর বাংলাদেশ। সমাজ ও সংস্কৃতিতে স্বতন্ত্র। পরস্পর দূরত্ব সুস্পষ্ট। তবে মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে যে প্রণয়তৃষ্ণা, মানুষকে ব্যকুলতায় অস্থির করে যে স্নেহকাতরতা, মানুষকে পীড়ন করে যে হিংসা-দ্বেষ, তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই জাপানি মানুষ আর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে। এই দুই দেশের মানুষের জীবন ও জীবন ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে প্রতিবেশীগণ, সহযাত্রী, বাবার দায়িত্ব, কোকিল, গোয়েন্দা, নদীতীরের অ্যালবাম ইত্যাদি গল্পে। গল্পকার নাওমি ওয়াতানাবে এ সকল গল্পে জীবনকে দেখেছেন কখনো জাপানির চোখে আবার কখনো বাঙালির চোখে। তবে সকল সময় তার মন ছিল মানুষের পক্ষে এবং মানবতার প্রতি উচ্চকিত। 'প্রতিবেশীগণ' গল্প গ্রন্থে নাওমি ওয়াতানাবে গল্প বলেননি। বলেছেন জীবনের কথা। স্বপ্ন ও সুন্দরের কথা।
নাওমি ওয়াতানাবের বাংলাদেশের জীবন সংগ্রাম ও তার দেখা বাংলাদেশের নানারকম দৃশ্য 'যাপিত জীবনে আমার বাংলাদেশ" বইয়ে অংকিত হয়েছে। একজন বিদেশী নারীকে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি হাসপাতালে সরাসরি নিযুক্ত করা হয়েছে। এবং সে পরিবার দেশে রেখে একা বাংলাদেশে ৫ বছর বাস করেছে। এই পরিস্থিতি এবং অকল্পনীয় কঠোর দৈনন্দিন জীবন থেকে পাওয়া বাংলাদেশের নানারকম ধারণা ও তার অভিজ্ঞতা এই বইতে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ের কাহিনীর চরিত্র হলো দিনমজুর, ৩ নম্বর বাসের কন্ডাক্টর, শিশু দোকানী ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনের জন্য সংগ্রাম করা মানুষরা। নাওমি ওয়াতানাবে তাদের সুখ ও দুঃখের দৃশ্য ধীরস্থিরভাবে দেখেছে। নাওমি ওয়াতানাবের দৃষ্টির মধ্যে আছে একজন সাধারণ মানুষের মানব প্রেম। তাছাড়া বইতে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের হাসপাতালে কাজ করা অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম, নিজের ওজন কমানোর অভিজ্ঞতা, পুষ্টিগত পরামর্শ, বাংলা গানের জন্য ভালোবাসা, রেওয়াজ ইত্যাদি। সাথে সাথে বর্তমান জাপানের কিছু মজার বিষয়ও এই বই থেকে পাওয়া যাবে। আর মানবতাবাদী লেখক নাওমি ওয়াতানাবে হৃদয়ের উষ্ণউত্তাপ ছড়িয়ে আছে এ বইয়ের পাতায় পাতায়।