একটি ধর্মীয় চুক্তি, একটি সামাজিক সম্পর্ক। একে ঘিরে দুজন মানুষ, দুটি পরিবারে কত , কত স্বপ্ন! সম্পর্কটিকে সুন্দর করার জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাই এই বইটি কেবল বিবাহেচ্ছু, নববিবাহিত বা বিবাহিতাদের জন্য নয়; বরং তাদের বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, আত্মীয়স্বজনদের জন্যও। এখানে বিয়ের স্বরূপ, দায়িত্বসমূহ, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদি নিয়ে কিছু আলোচনা রয়েছে; যা হয়তো চিন্তার দিগন্তে নতুনত্ব আনতে পারে। রয়েছে কিছু গল্প; যা জীবনের বাস্তবতার প্রতিফলন।
বৈবাহিক জীবনবোধ, রোমাঞ্চ ও ভালোবাসার সাবলীল বোঝাপড়া দাম্পত্য রসায়ন সঙ্গীর মনের প্রতিটি ভাঁজে বিচরণ ও উপলব্ধি এবং তার হৃদয়-পাতাকে অধ্যয়ন করা দাম্পত্য সুখের অপরিহার্য শর্ত। স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য ও গঠন সৃষ্টিগতভাবেই ভিন্ন। এই দুই ভিন্ন সত্তা যখন একই ধ্যানের মৃণাল ধরে জীবন সাজাতে সংকল্পবদ্ধ হয়, তখন পরস্পরের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। অন্যথায় দাম্পত্যজীবনের উষ্ণ লেনাদেনাকে যান্ত্রিক ও আরোপিত বলেই মনে হয়। ‘দাম্পত্য রসায়ন’ পাঠকের চিন্তা ও বোঝাপড়ায় এমন এক বোধ দিতে চায়, যা সঙ্গীর মনের ভাষা পড়তে সহায়ক হবে। দাম্পত্য সম্পর্ক প্রাণোচ্ছল করতে ‘দাম্পত্য রসায়ন’ পুস্তিকাটি হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর দারুণ এক টোটকা।
অত্যুক্তি হবে না যদি আমরা গত শতাব্দীটিকে মার্ক্সীয় শতাব্দী বলে উল্লেখ করি। আজকের পৃথিবী যে অবস্থায় আছে, তাতে কার্ল মার্ক্সের চিন্তার প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য। মার্ক্সীয় রাজনীতির আগের চেহারা বর্তমানে অনেক বদলে গেলেও রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তার ক্ষেত্রে মার্ক্সের তত্ত্ব ও বিশ্লেষণের গুরুত্ব কিংবা তার যৌক্তিকতার ধার কিন্তু কমেনি। বিশ্বব্যপী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পতনের পর মার্ক্সের দর্শনের প্রায়োগিক সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে প্রায় অতিলৌকিক চরিত্র বা বিগ্রহের জায়গা থেকে সরিয়ে মার্ক্সকে বরং একজন মানুষ হিসেবে দেখার এবং তাঁর চিন্তা বা দর্শনের তাৎপর্যকে পরিবর্তিত সময়ের প্রেক্ষাপটে অনুধাবন করার চেষ্টা। মার্ক্স এবং মার্ক্সবাদের এই নতুন মূল্যায়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে বাংলাভাষী পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই বইয়ের লক্ষ্য। বইটির প্রথম অংশে আছে মার্ক্সের জীবন এবং তাঁর দর্শন নিয়ে আলোচনা। আর দ্বিতীয় অংশে স্থান পেয়েছে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মার্ক্সবাদের প্রায়োগিক সম্ভাবনার বিষয়টি।
"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু দ্রুত গতিসম্পন্ন। মাত্র তের দিনব্যাপী এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মূলত নদীবহুল অঞ্চলে, আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যা আদর্শ। ২৬ মার্চ ১৯৭১ পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নগ্ন হামলা থেকে শুরু করে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সন্ধ্যায় পশ্চিমাঞ্চলে ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানি বোমাবর্ষণ থেকে সৃষ্ট সর্বাত্মক যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সামরিক অভিযান, শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ইস্টার্ন কম্যান্ডের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যার পরিসমাপ্তি ঘটে সবকিছুই লেখক বর্ণনা করেছেন।স্ট্র্যাটেজির রূপরেখা আঁকতে গিয়ে কীভাবে প্রধান সড়ক এড়িয়ে পার্শ্বরাস্তা ব্যবহার করে শত্রুদের প্রতিরোধের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে পাশ কাটিয়ে আক্রমণরেখা নির্বাচন করা হয়েছে এবং পরবর্ততে মেইন্টেন্যান্সের জন্য পথ খুলে দেয়া হয়েছে, তার সমস্ত খুঁটিনাটি বর্ণনা তিতি দিয়েছেন। দেশের প্রধান ভূ-রাজনৈতিক কেন্দ্র ঢাকার সাথে যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্রগুলো আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। মুক্তিবাহিনীর ভূমিকা ও দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের অসীম ত্যাগের কথা তিনি তুলে ধরেছেন। নিরাপত্তা পরিষদের চাপ এবং চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তান-ঘেঁষা ভূমিকা ছাড়াও আত্মসমর্পণের আলোচনা ও দলিলে স্বাক্ষরের একটি প্রত্যক্ষ বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। এই অভিযানের রাজনৈতিক ও সামরিক পটভূমি থেকে লেখক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং রাজনৈতিক ও সামরিক- উভয় ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধের জন্য অস্থায়ী উর্ধ্বতন কম্যান্ড স্থাপনে পরিষ্কার দিক-নির্দেশনার অভাবের কথা তুলে ধরেছেন।"
যারা অখণ্ড পাকিস্তানের চেতনার কফিনে সর্বশেষ পেরেক পুঁতে দিয়ে পঁচিশে মার্চের ভয়াল রাতের ঘটনা ঘটায় এবং সেই নিষ্ঠুরতা পুরো নয় মাস বজায় রাখে, একটি গণতান্ত্রিক অর্জনের ফলকে নস্যাৎ করে দিয়ে দেশের এক অংশে নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, নিপীড়ন হওয়া সত্ত্বেও কেন পাকিস্তানের অপরাংশের জনসমাজের প্রায় সকল স্তরে নির্লিপ্ততা দেখায় বা এজন্য বাঙালীদের আগাগোড়া দোষারোপ করে, কী প্রেক্ষাপটে, কেন এমনটি করেছিল, একাত্তরের ঘটনাবলীকে তারা তখন কীভাবে মূল্যায়ন করেছিল বা এখনো করে-সে ব্যাপারে খুব সামান্য কথাবার্তাই আমরা এ পর্যন্ত শুনেছি। পাকিস্তানীদের কাছ থেকেও এসব বিষয়ে কোন খোলামেলা বক্তব্য বা মূল্যায়নও আশা করা যায় না, কারণ বিষয়টি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও তার পরাজয়কে ঘিরে আবর্তিত এবং পাকিস্তানী সমাজজীবন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্পষ্টভাবে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার মত স্বাধীনতা ভোগ করে না। এই প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত বিষয়ে যতটা সম্ভব তথ্য আহরণের লক্ষ্যে সাক্ষাৎকার গ্রহণের ভিত্তিতে এই বইটি প্রণীত হয়েছে। যাঁরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন সামরিক-বেসামরিক ১১ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমলা, ৯ জন রাজনীতিবিদ ও বাকী ৮ জন সিভিল সমাজের প্রতিনিধি। সাক্ষাৎকারদানকারীদের অধিকাংশ প্রত্যক্ষভাবে পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ে নীতি নির্ধারণে ও একাত্তরের যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। যাঁরা জড়িত ছিলেন না তাঁরাও পাকিস্তান সমাজের সচেতন অংশের প্রতিনিধি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল তা বুঝতে গেলে বা এ বিষয়ে কিছু রচনা করতে গেলে সংকলিত এই সাক্ষাৎকারগুলি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আকবর আলি খানের বিপুল বিচিত্র রচনা ও চিন্তাজগতের সামগ্রিক খতিয়ান এক মলাটে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর লেখায়। আকবর আলি খান বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস আর সমাজ বিষয়ে নিবিড়তম অনুসন্ধানকারীদের অন্যতম। স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে সদ্যস্বাধীন দেশের প্রশাসনব্যবস্থা ও উন্নয়নকৌশলের ভিত্তি রচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। কেন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা একটা বৃত্তের মধ্যেই ক্রমাগত ঘুরপাক খায়, দেশের উন্নয়নকৌশলগুলো কেন সাফল্যের সম্ভাবনা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়—এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তিনি এই ভূখণ্ডের মানুষের মানস গঠন ও ইতিহাসের ধারা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। তাঁর আগ্রহের ব্যাপ্তি প্রসারিত ছিল জীবনানন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও বিষয়ের অনুসন্ধান ও মূল্যায়নে। সারা জীবনের এই অনুসন্ধান লিপিবদ্ধ করেছেন একাধিক শ্রমসাধ্য গবেষণাকর্মে, সুলিখিত জনপ্রিয় বই আর প্রবন্ধে। এই বইয়ের লেখক আমিনুল ইসলাম ভুইয়া ছিলেন আকবর আলি খানের সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজন। তাঁর অন্তরঙ্গ উপস্থাপনায় পাঠক আকবর আলি খানের জীবনব্যাপী সাধনার একটা পরিচয় পাবেন বলে আমরা আশা করি।
সরদার ফজলুল করিম সারা জীবন মানুষের সঙ্গে পথ চলেছেন। দেশ, সমাজ, সমকাল, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন, কথা বলেছেন ও লিখেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর চিন্তা, অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ের রচনায়। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো তে প্রকাশিত এমন ২১টি নির্বাচিত অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে এ বই। লেখাগুলোয় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা দিক। এসেছে সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা ও সংকটের কথা। বাদ পড়েনি ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা-অনুভূতি এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের স্মৃতিসহ নানা প্রসঙ্গ। লেখকের মনীষার পরিচয়বহ রচনাগুলো বর্তমান সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনি ভবিষ্যত্কালের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন ইতিহাসকে বোঝার পাশাপাশি বইটি দেশের একজন সেরা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব্বকে চিনতেও পাঠককে সহায়তা করবে।