কালের ঘূর্ণাবর্তে সবকিছুর পালাবদল ঘটছে ৷ পরিবর্তন আসছে জীবনের রূপ ও রঙে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন চিন্তা এসে গ্রাস করছে পুরােনাে চিন্তার জগৎ। এভাবেই চলছে গ্রহণ-বর্জনের নিরন্তর চক্র কালের এই চক্র ৷ সবকিছুতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও একমাত্র ইসলাম-ই চৌদ্দশত বছর ধরে চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞান বিকাশের অবিকৃত ও পরিপূর্ণ ধারায় রয়েছে বিরাজমান। মানবজাতির জন্য নির্দেশিকা হিসেবে নাযিল হওয়া ইসলামের বার্তাসমূহের রয়েছে সমসাময়িক ও আগামী জীবনের উপযোগিতা। ইসলামের সুমহান সেই বার্তাগুলাে-ই বিশ্বাসী মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘সমকালীন প্রকাশন-এর পথচলা। চৌদ্দ শ’ বছর আগের কথা। তপ্ত মরুর বুকে গড়ে উঠেছে বিশাল এক জনপদ। আধারের আস্তরণ সেখানে অনেক বেশি প্রকট। মিথ্যের বেসাতি আর পাপাচারের নগ্নোৎসবে মাতােয়ারা সবাই ৷ বিচ্যুত তারা সকলে, এক অনিবার্য সত্যের পয়গাম থেকে যা এই অঞ্চলে একদিন ফেরি করেছিলেন এক আলাের ফেরিওয়ালা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম৷ যে আলাে প্রায় নিভুনিভু, সে আলােতে নতুন বিচ্ছুরণ নিয়ে একদিন উন্মেষ ঘটলাে এক মহামানবের যার আগমনে বদলে গিয়েছে গোটা পৃথিবী! ইতিহাসের সকল গতিপথ, সকল বাঁক যিনি ভেঙেচুরে গড়েছেন, যিনি অনিবার্য সেই সত্য পয়গামের ধারক হয়েছেন ধরণির বুকে, তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম৷ সেই মহামানবের মহামানবীয় গুণাবলি, যা তাকে সবার চাইতে আলাদা করেছে, যা তাকে সকলের মাঝে অনন্যসাধারণ করে তুলেছে, সেই অনন্যতার গল্প আমাদের জীবনে কতটা নিবিড়ভাবে প্রাসঙ্গিক তা জানতে ডুব দেওয়া যাক ‘নবি-জীবনের গল্পে।
তারা ছেড়ে এসেছিলেন আয়েশি জীবন, চাকচিক্যময় দুনিয়া; রঙিন আর স্বাপ্নিক সব মুহূর্ত। তারা ছুটে চলেছিলেন এক ধ্রুব সত্যের পানে, যে সত্য নিয়ে এসেছিল এক ভিন্ন জীবন, ভিন্ন ভুবন। তারা ডুব দিলেন এক পবিত্র, শুভ্র-সফেদ জীবনসমুদ্রে। তারা তুলে আনলেন মণিহার, মুক্তোর মালা। তাদের জীবনালেখ্যে কত না সংগ্রাম, কত না ত্যাগ আর হারানোর গল্প লুকিয়ে আছে। সে গল্পগুলোই আমাদের আয়না। আয়নার নাম ‘নারী সাহাবির পথে’। এই আয়নায় আমরা দেখে নেব নিজেদের অবয়ব। নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি আর শূন্যতাকে পূর্ণতায় রুপ দিতে চলুন মেলে ধরি সেই আয়না...
বিচিত্র মানুষের বসবাস আমাদের চারপাশে। চলার পথে তারা গল্প করে, গল্প বানায়, গল্প গাঁথে। সেসব গল্পে উঠে আসে জনমানুষের কথা, জীবনের কথা। প্রাণ এবং প্রণােদনার কথা। উৎসাহ এবং উদ্দীপনার কথা। কিছু গল্প ভাবায়, অনুপ্রেরণা দেয়, শক্তি যােগায়। আমাদের আহ্বান করে কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়ার। জীবনকে নতুন করে গড়ে তােলার। সেরকম কিছু গল্প দিয়েই সাজানাে নানান রঙের মানুষ।
পড়াশুনায় ভালো ছিলাম বলেই আশেপাশে ছিলো বেশ সুনাম। হৈচৈ করে বেড়াতাম চারিদিক। কেউ দেখলেই ডেকে ডেকে কথা বলতো। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক হতে শুরু করে সকলেই খুব আদরে আদরে শাসন করতো। বাসায় এলেও সকলেই আহ্লাদ করতো। দুষ্টামি আর আর কথার ফাঁকে সকলেই একটা কথা জিজ্ঞেস করতো। সকলেই বলতো ‘তুমি বড় হয়ে কী হবে?’ উত্তরে আমি বলে ফেলতাম ‘আমি ডাক্তার হবো’ আবার কখনো কখনো বলতাম ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো’ রাজনীতিবিদ কিংবা অন্য পেশা নিয়ে তখন এতটা ভাবিনি। সময় গড়িয়ে আজ যখন বড় হয়ে কিছু হবার যুদ্ধে নামলাম। তখন মনে হয় সবার উদ্দেশ্য একটাই থাকা উচিৎ। আর তা হওয়া উচিৎ একজন প্রকৃত মানুষ হওয়া। আর তাইতো আজ আমি বারবার বলি ‘মানুষ হবো’ ‘মানুষ হবো’
যেহীন আহমদ স্মরণে স্বরণিকাটি হচ্ছে এক সাধারণ মানুষের অসাধারণ গুণাবলিকে সংক্ষিপ্তভাবে ধরে রাখার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। যেহীন আমাদের বন্ধু এবং এক আদর্শের প্রতীক। জীবনকে অতি সহজসরলভাবে পরিচালনা করে নিজ অসাধারণ কর্ম প্রেরণা দিয়ে সর্বস্ব ত্যাগ করে উপেক্ষিত গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করা ছিল তাঁর প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা। মৃদুভাষী একজন অসাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তি দীর্ঘ দিন সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এফআইভিডিপি'র প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দীর্ঘ ৩০ বৎসর বিশেষ করে সিলেটের মানুষের দুঃখ-কষ্টে নিজেকে সামিল করে তাদের উন্নতিকল্পে তাঁর অবদান অপরিসীম। পারিবারিক সূত্রে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা, গবেষণা ছিল তাঁর একটি আকর্ষণ। যেহীনের কাছে ছিল কবিতা ও সংগীতের এক অফুরন্ত ভান্ডার। ছাত্র থাকা সময়েও যেহীন আমাদেরকে তাঁর পরশে আলোকিত করেছে। ক্লাসিক্যাল মিউজিক, গজল, ভজন ছিল তাঁর দৈনন্দিন কর্মতৎপরতার এক চালিকাশক্তি। কর্মজীবন, তাঁর নিজ সংগঠন, সহকর্মী ও বন্ধু বান্ধবরাই ছিল তাঁর সংসার। যেহীনের নিজ পরিবার গঠনে ছিল সম্পূর্ণ অনীহা। তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত কর্মক্ষমতা ও সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছিলেন। গরিব মানুষের কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য "কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেট" স্থাপনায় তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার সাহায্য সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠান আজ দৃশ্যমান এবং অগ্রসরগামী। যেহীন আহমদ স্মরণে এই স্বরণিকাটি যেহীনকে আমাদের স্মৃতিতে ধরে রাখবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সম্পাদনা পরিষদ
উভয় বাংলার জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখকের সহপাঠী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। হুমায়ূন আহমেদ হঠাৎ করেই অসময়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর সামনে ছিল অমিত সম্ভাবনা। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলা সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হতো। এই বহুমুখী প্রতিভাবান লেখককে খুব কাছ থেকে জানার সৌভাগ্য হয়েছিল লেখকের। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি দেখেছে নিবিড়ভাবে। তাঁর সঙ্গে লেখকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা অনেকের অজানা। হুমায়ূন আহমেদের রহস্যময় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাঠকদের জন্য লিপিবদ্ধ এ গ্রন্থ যা তাঁর অসমাপ্ত জীবনকে পরিপূর্ণভাবে পাঠকদের কাছে উন্মোচিত করবে। এক অচেনা হুমায়ুন আহমেদ সমন্ধে তার বন্ধুর বয়ান ।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে মানুষের ইতিহাসের নজিরবিহীন প্রাণহানি ঘটায়। জাপানিরা পরাজয় বরণ করে। আমেরিকা জাপান দখল করে, এবং আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধকালীন জাপানি নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার করে জেল ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জাপানিরা এই অপমানজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরিত হয়ে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে এগিয়ে গিয়েছে, এমনকি কিছু কিছু বিষয়ে আমেরিকাকে পিছনে ফেলেছে। এই গ্রন্থে জাপানিদের জীবন এবং সমাজের বিভিন্ন অজানা বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
মুজিবনগর সরকার থেকে হাল আমল অবধি বাংলাদেশ রাষ্ট্র আর প্রশাসনের বিবর্তন ধরা পড়েছে ভেতর থেকে দেখা লেখকের বয়ানে। আকবর আলি খানের ১৫টি লেখা ও ১৫টি সাক্ষাৎকার নিয়ে এই বই। পাঠকপ্রিয় লেখকের লেখার শেষ সংকলন। একটি নতুন দেশে সাধারণত সরকার গঠিত হয় আগে। তারপর সেই সরকারের উদ্যোগে তৈরি হয় তার প্রশাসন। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় এর উল্টোটা ঘটেছে। এখানে মুজিবনগর সরকার শপথ নেওয়ার আগেই সময়ের প্রয়োজনে ও নিচতলার তাগিদে গঠিত হয়েছিল প্রশাসন। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় দেশজুড়ে জ্বলে ওঠা অসংখ্য স্ফুলিঙ্গকে এক বিশাল দাবানলে পরিণত করার দায়িত্ব নিয়েছিল এই সরকার ও তার প্রশাসন। সেই সময়ের একজন মধ্যপর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে আকবর আলি খান যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ওই সরকারের প্রশাসনে। পরে স্বাধীন দেশে তিনি সরকার বা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে দেখেছেন, জেনেছেন অনেক কিছু। সেই মুজিবনগর সরকার থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও প্রশাসনের বিবর্তনকে তিনি কীভাবে দেখেছেন, কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন, নিঃসন্দেহে তা আমাদের জন্য এক কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়। এ প্রসঙ্গে তাঁর অগ্রন্থিত লেখা ও সাক্ষাৎকারের সংকলন এই বই।
আমার অগ্রজের ৮০তম শুভ জন্মদিনের স্মারক সংখ্যার জন্য সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে আমি যুগপৎ আনন্দিত ও গর্বিত। আনন্দ এই জন্য যে তাঁর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের শুভ জন্মদিনে কিছু লিখতে পারার সুযোগ এক বিরল সম্মান। আবার একই সঙ্গে যাঁরা তাঁর ভুবনের বাসিন্দা-দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লেখায় সমৃদ্ধ স্মারক সংখ্যা- তাঁদের কাছে এই সম্পূর্ণ অজানা ও অখ্যাত ব্যক্তির লেখা সম্পাদকীয় বিলক্ষণ হাস্যরসের সঞ্চার করতে পারে। তবে এটা ঠিক যে এ ধরনের প্রকাশনায় সম্পাদকীয় থাকাটা একান্তই যুক্তিযুক্ত বলে বিবেচনা করা যায়। আমার অগ্রজ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী শুধু একজন ব্যক্তি নন, তাঁকে একটি প্রতিষ্ঠান বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষাবিদ, লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবি, উচ্চমানের প্রাবন্ধিক, প্রসিদ্ধ কলাম লেখক, অতি উন্নতমানের সমাজ সচেতন এবং সর্বোপরি সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব- সবকিছু এক করলেও তাঁর পরিচয় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমার সহজ চিন্তায় তাঁকে সজ্জন, অজাতশত্রু, দেশপ্রেমিক এবং স্বীকৃত অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ছাড়াও একজন আদর্শ পুত্র, যোগ্য স্বামী, স্নেহপ্রবণ ভ্রাতা, দায়িত্ববান পিতা ও অত্যন্ত আদরের পিতামহ-এককথায় একজন পরিপূর্ণ ব্যক্তি নির্দ্বিধায় বলা যায়। আমাদের জীবিত আট ভাইবোনের মধ্যে (ছয় বোন ও দুই ভাই) সর্বজ্যেষ্ঠ হিসেবে তিনি আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র। আমাদের পিতামাতার মৃত্যুর পর এখন তিনিই আমাদের সবার মুরুব্বি। আমাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে আমার অগ্রজই মধ্যমণি। তাঁকে কেন্দ্র করেই আমাদের পারিবারিক বিষয়াদি ও সুখ-দুঃখ সব কিছু আবর্তিত হয়। আমাদের পিতামাতার মৃত্যু দিবসে এ যাবৎকালে পারিবারিক পুনর্মিলনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এসব অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ আকর্ষণ-ই হচ্ছে তাঁর গৌরবময় উপস্থিতি। এ ধরনের অনুষ্ঠানশেষে আমরা সবাই অধীর অপেক্ষায় থাকি পরবর্তী অনুষ্ঠানের জন্য। সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে পারিবারিক বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে, এটা বুঝতে পারছি। কিন্তু পুরো বিষয়টাই যেহেতু তাঁকে কেন্দ্র করে, পাঠক আমার প্রগল্ভতা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা। যাঁরা তাঁদের লেখা দিয়ে এই স্মারক সংখ্যা অলংকৃত করেছেন তাঁদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমার সবচেয়ে বড়ো আনন্দ যে যাঁর কাছেই অনুরোধ করেছি আমার অগ্রজের উপর একটা লেখা দেয়ার জন্য, কেউ আমাকে বিমুখ করেননি। প্রায় প্রতিটি লেখাই এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এসব লেখার উপর আমার মন্তব্য একেবারেই নিষ্প্রয়োজন, কারণ আমি কোনো লেখাই আগে পড়িনি। পাঠক যদি লেখাগুলো পড়ে আনন্দ পান তার একটি অংশের দাবিদার নিশ্চয় আমি। এই স্মারক সংখ্যা প্রকাশ করতে যিনি আমাকে উৎসাহিত করেছেন বিশিষ্ট আলোকচিত্র শিল্পী ও পরিবেশবিদ এম. এ তাহের-এর কাছে আমি বিশেষভাবে ঋণী। [13:29, 5/14/2024] Taifur Rahman Talash: এই স্মারক গ্রন্থের প্রকাশক ঐতিহ্য প্রকাশনীর কর্ণধার জনাব আরিফুর রহমান নাইম ও মিউচ্যুয়াল গ্রাফিক্স-এর পরিচালক শ্রী মানবেন্দ্র সুর-এর কাছেও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জনাব নাসির এ চৌধুরী ও টেকনো টেক্সটাইল, স্পিনিং ও কমার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সৈয়দ মনজুরুল হকের সহযোগিতাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। আমি জানি এ স্মারকে যাঁদের লেখা ছাপা হল তাঁরা ছাড়াও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও লেখক যাঁরা আমার অগ্রজের উপর লিখতে আগ্রহী ছিলেন, আমাকে দোষারোপ করবেন। কারণ তাঁদের কাছে আমি যেতে পারিনি। কিংবা অনুরোধ করতে পারিনি এই অনুষ্ঠানে তাঁদের উপস্থিতির জন্য। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। পরবর্তীতে যদি কখনো সুযোগ আসে তাঁদের দুয়ারে আমি ভিক্ষা নিতে যাব। আমার অগ্রজ অধ্যাপক: জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর ৮০তম জন্মদিনে একটি সংকলন বের করেছিলাম। পুস্তকটির পুরো সংখ্যাগুলি শেষ হয়ে গেলে অনেক অনুরোধ আসতে থাকে পুন: মুদ্রণের জন্য। এ সংখ্যাটি তাঁর ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশনা করা হচ্ছে। প্রথম সংখ্যার কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি এই সংখ্যায় শুদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। তা ছাড়া কিছু নতুন ছবিও সংযোজন করা হয়েছে। অনুজ প্রতিম এম. এ তাহের ব্যাতিরেকে এ সংখ্যাটি পুন: মুদ্রণ সম্ভব ছিলনা। তাঁকে ধন্যবাদ দিলে সব কিছু দেওয়া হয় না। তাই আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করলাম। এ সংখ্যাটি ছাপাতে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন জনাব নাসির চৌধুরী ও তাঁর সংস্থা গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এর আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ এ সংকলনটিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। আমি জনাব নাসির চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞ। বইটি সুধি সমাজে গৃহীত হলে আনন্দ ও গৌরব বোধ করব। এ.কিউ. সিদ্দিকী
যারা কবি শামসুর রাহমান সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চান কিংবা তাঁর সম্পর্কে নিজের ধারণাগুলোকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ করতে চান তাদের জন্য অসাধারণ একটি বই "আলেখ্য" শামসুর রাহমানের অ্যালবাম। শামসুর রাহমানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশি কবির বিভিন্ন আলোকচিত্র নির্ভর এ বইটি সম্পাদনা করেছেন ফটোগ্রাফার এবং বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক এম এ তাহের। বইটির প্রথমেই শামসুর রাহমানের সম্পর্কে আমাদের জানা-অজানা কিছু কথা লিখেছেন কবি নিজে। বইটির কবি পরিচিত অধ্যায়ে আছে কবির ব্যক্তিগত নানা তথ্য। আরও আছে তার প্রিয় বিভিন্ন বিষয়-আশয়, শখ, ইচ্ছে, বিভিন্ন স্মৃতি-এসব সহ আরো অনেক কিছু। অন্যান্যদের চোখে কবি কি রকম মানুষ ছিলেন তা নিয়ে আছে বিভিন্ন সূধীজনের কয়েকটি বিবৃতি। বইটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কবির বিভিন্ন দুর্লভ এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক বিভিন্ন আলোকচিত্র। দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবির সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে দেশের সুশীল সমাজের গণ্যমানদের সাথে কবির প্রশংসনীয় ভূমিকা উঠে এসেছে বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রে। বইটিতে আরো আছে কবির হাতে লেখা কিছু পান্ডুলিপি, ছড়া আর কবিতাও। কবির দেশ বিদেশে বিভিন্ন পদক গ্রহণ এবং বিভিন্নভাবে সম্মানিত হবার ব্যাপারগুলোও উঠে এসেছে আলোকচিত্রে। বইটি যেন কবি শামসুর রাহমানের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
বিশ্ব ফুটবলের এক চমকপ্রদ ও মজার ইতিহাস এই বই। বইটি পড়তে পড়তে আপনি কখনো হারিয়ে যাবেন মিং যুগের চীন দেশে, আবার কখনো কয়েক শ বছর আগের ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে নেমে আসবেন বর্তমানকালের ফুটবলের তীর্থভূমি লাতিন আমেরিকায়। দেখবেন কেমন করে সাহেবদের চালু করা খেলায় তাদের এককালের শাসিতরাই আজ তাদের হারিয়ে দিচ্ছে। খেলা হয়ে উঠছে মুক্তির লড়াইয়ের হাতিয়ার। এদুয়ার্দো গালিয়ানোর সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডোকে ক্রীড়াসাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে গণ্য করা হয়। যার পাতায় পাতায় উঠে এসেছে ফুটবল নিয়ে লেখকের আবেগ। সেই সঙ্গে খেলাটির ইতিহাস, নানা কলাকৌশল এবং মাঠ ও মাঠের বাইরের জানা-অজানা সব গল্প। পেলে, ক্রুইফ, ইউসেবিও, গুলিত, বাজিও, বেকেনবাওয়ার ... ফুটবলের এসব কিংবদন্তি নায়ককে নিয়ে চমকপ্রদ ও অজানা গল্প পাঠক পাবেন এই বইয়ে। জানবেন খেলার মাঠেই কেন একজন ফুটবলার আত্মহত্যা করেছিলেন? কিংবা কত অদ্ভুত সব সংস্কার কাজ করে জেতার অদম্য বাসনায় আক্রান্ত ফুটবল দলগুলোর মধ্যে! ফুটবল নামের এক হৃদয়বিদারক উন্মাদনার উপভোগ্য পাঠ এই বইটি বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছে।
এই বই প্রয়াত দুই কবির অমর বন্ধুতার গল্প, যে গল্পের কোনো সীমান্ত নেই। বেলাল চৌধুরীর প্রিয় সুনীলদা বইয়ে সুনীল আকাশে হারিয়ে যাওয়া সোনালি সময়ের দুই কবিমানুষকে নতুনভাবে আবিষ্কার করবেন পাঠক।
বাঙালির সমন্বিত সংস্কৃতি ও ঐক্যবন্ধ জাতীয়তা গড়ে ওঠার পথের সমস্যাবা অন্তরায়, সাতচল্লিশের দেশভাগের পেছনের অজানা বা কম জানা নানা ঘটনা ও কারণ, শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী আমাদের এই দুই জাতীয় নেতার রাজনৈতিক ভূমিকার মূল্যায়ন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অতুলনীয় দেশপ্রেম, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সংস্কৃতি চিন্তার বিশদ পরিচয়, বুদ্ধিজীবী হিসেবে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও আনিসুজ্জামানের অনন্যতা ইত্যাদি। বিভিন্ন বিষয়ে মোট বিশটি প্রবন্ধের সংকলন এ বইটি।
সরদার ফজলুল করিমের ভাবনা, সংগ্রাম ও সাধনায় প্রভাব রেখেছেন—এমন ১৮ ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁর লেখার সংকলন এ বই। তাঁদের কেউ জন্মেছেন অন্য কালে অন্য দেশে, কেউবা ছিলেন তাঁর সমসাময়িক ও সহযোদ্ধা। মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবাই তাঁর প্রিয় মুখ। মানবিক সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে সারা জীবন নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন সরদার ফজলুল করিম। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষকতা ও লেখালেখি—সব কাজের মধ্য দিয়ে সারা জীবন চেষ্টা করেছেন সমাজে শুভ চিন্তার প্রসার ঘটাতে। এই পথে তিনি যেমন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন দূর দেশের ও কালের সক্রেটিস কিংবা রুশোকে, তেমনি স্বদেশের ও সমকালের রণেশ দাশগুপ্তের মতো কাউকে কাউকে। দেশ আর কালের গণ্ডি পেরিয়ে এমন সব মানুষকে তিনি ভালোবেসেছেন, করেছেন তাঁর মানসসঙ্গী। লেখালেখির মধ্য দিয়ে তিনি বারবার তাঁদের স্মরণ করেছেন, বলে গেছেন তাঁদের কথা। প্রিয় এমন কিছু মুখ নিয়েই সরদার ফজলুল করিমের লেখার সংগ্রহ এ বই।
১৯৫১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে লেখা চিঠিপত্রের সংকলন এ বই। স্বজন-বন্ধু থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের এই পত্রাবলির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে একটি জাতির জাগরণ, নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সংগ্রামে বিজয় এবং সেই বিজয়কে ধরে রাখার প্রয়াসের ইতিহাস।
মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় নেতাদের অন্যতম। শতাব্দীর সমান বয়সী এই মানুষটির জীবন যেমন ছিল ঘটনাবহুল, তেমনি বৈচিত্র্যময়। সাধারণ গ্রামীণ কৃষিজীবী পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের নেতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে একাতÄতাবোধ ও সাদামাটা জীবনপ্রণালি তাঁকে ‘মজলুম জননেতা’র পরিচয়ে পরিচিত করে তোলে। সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত ভাসানীচরিত বইটিতে মওলানার বাল্যজীবন থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের বিবরণ, মানুষের অধিকারের জন্য তাঁর লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অবিভক্ত ভারতের আসাম পর্বের মতো ভাসানী জীবনের তুলনামূলক কম আলোচিত অধ্যায় সম্পর্কে এ বইটিতেই প্রথমবারের মতো আবুল মকসুদ বিশদ আলোচনা করেছেন। তেমনি পরবর্তী পাকিস্তান আন্দোলন, আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক, ন্যাপ প্রতিষ্ঠা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি—এই পর্বগুলোও তথ্যনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মওলানার ব্যক্তিজীবন ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে গিয়ে লেখক তাঁর দৃষ্টিতে যাকে মওলানার সীমাবদ্ধতা বা স্ববিরোধ বলে মনে হয়েছে, তার উল্লেখ করতেও দ্বিধা করেননি।
কবি-সাহিত্যিকেরা বেশির ভাগই মজার মানুষ। হুমায়ূন আহমেদ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কিংবা নির্মলেন্দু গুণের রসবোধের কোনো তুলনা হয় না। তাঁদের রসিকতাগুলো দেশবিখ্যাত এবং চিরন্তন আনন্দ ও শিক্ষার উত্স। আবার রসবোধে খ্যাতি তেমন নেই, এমন মানুষও ঘটিয়ে থাকেন মজার মজার ঘটনা। শুধু মজার ঘটনা তো নয়, লেখক-কবিদের জীবনে ঘটে অনেক দুঃখের ঘটনা; আর সারাক্ষণই তাঁদের পোড়াতে থাকে শিল্পের আগুন। সমকালীন সাহিত্যের অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিককে কাছে কিংবা দূর থেকে দেখেছেন আনিসুল হক। লেখকদের নিয়ে আনিসুল হকের স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, কৌতুক, আনন্দ-বেদনা আর হাহাকারের গল্পগুলো ধরা থাকল এই বইয়ে। এই লেখাগুলো একই সঙ্গে স্মৃতিচারণা, সাহিত্যের উদ্যাপন, লেখকদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সাহিত্যিক মূল্যায়নের রেখাচিত্র।