“নিঃশব্দ নিনাদ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ‘নিঃশব্দ নিনাদ’-সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, দর্শন নিয়ে মানসপটে অন্বিত জীবনবােধ ও মননশীলতার প্রত্যক্ষ কিংবা পরােক্ষ অনূভূতির অনন্য রূপায়ণ। আধুনিকতার পরশ, সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ছোঁয়ায় নূতনের আবাহনে ঋদ্ধ হয়েছে এই । যুগান্তর। জাগতিক জীবনে ঐশ্বর্য, আভিজাত্য, প্রাগ্রসরতার মাপকাঠিতে মানবপ্রাণের সাফল্য সবসময়। বিবেচ্য। পরাবাস্তবতা কিংবা অপার্থিব চিন্তার প্রাধান্য এখানে ভীষণ সংকীর্ণ। মননশীলতার বাইরে গিয়ে নিছক প্রাপ্তির নেশায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানবকূল যুগের পর যুগ সমরে অবতীর্ণ হয়েছে, গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে অনিবার্য পরিণতি স্বীকার করেছে। প্রকৃতির অনন্য উপচারে ভূষিত হয়েও নির্বিচারে সেই প্রকৃতিকেই ধ্বংস করেছে। ইতিহাসে ব্যতিক্রমী কিছু প্রাণ জায়গা করে নিয়েছেন, যারা এই জাগতিক কঠিন বাস্তবতার বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়ে তীব্র প্রতিবাদে লিপ্ত হয়েছেন। আবার নির্বিবাদী সত্তাবােধের একান্ত অনুভবে এই নির্মম বাস্তবতা থেকে চির অন্তর্ধানে। যাত্রা করেছেন মৌনতাকে সঙ্গী করে। নির্মোহের সাধনায় আত্মস্থ হওয়ার প্রেরণা লাভ করেছেন। প্রকৃতির সুবিশাল । উদারতায় লীন হয়ে জীবনের প্রকৃত স্বরূপ অন্বেষণ করেছেন। আধুনিক নগর জীবনের যান্ত্রিকতা, নৈরাশ্য, অবসাদ, একাকিত্ব ও ঘাত-প্রতিঘাত থেকে মুক্তি পেতে বিমূর্ত প্রকৃতির কাছে আবার ছুটে গিয়েছেন। নিঃসঙ্গতা, মৌনতা ও নির্বাণের আনন্দে জীবনদর্শন অনন্যরূপে প্রতিভাত হয়। তাই যুগান্তরের পথ বেয়ে বিরহ অনুভবে দৃঢ় অব্যক্ত উচ্চারণ ‘নিঃশব্দ নিনাদ।
“জোছনায় ফুল ফুটেছে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ এক ফাল্গুন মাসে আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি । রাতে অপূর্ব জোছনায় পৃথিবী ভেঙে পড়ছে । শত শত নক্ষত্রও জেগে উঠেছে । পৃথিবী তার সমস্ত সৌন্দর্যের রূপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে । জানালা খুলে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । ঘুম ভাঙল গভীর। রাতে । দরজা খুলে নিঃশব্দে আঙিনায় এসে দাঁড়িয়েছি । জোছনায় গাছপালা প্লাবিত । আমের মুকুল, বাতাবি লেবু আর শাদা ফুলের গন্ধ মন পাগল করে তুলছে। কোনাে এক প্রান্ত থেকে হুতুম পেঁচার ডাক ভেসে আসছে—হুদ হুদ হুতুম হুদ । অদ্ভুত এবং একরকম ভয় জাগানিয়া শব্দ । জোছনা, গন্ধ। সব মিলিয়ে বিচিত্র একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে । আমার মন হু হু করে উঠছে। মনে হচ্ছে শব্দ করে কেঁদে উঠি । সুন্দর এই পৃথিবীতে একদিন আমি থাকব না । কিন্তু পৃথিবী তার সমস্ত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে । আম গাছের ডালের ভিতর দিয়ে অবাক জোছনার কী রহস্য! মুগ্ধ হয়ে দেখছি । মনে হচ্ছে—জোছনায় যেন ফুল ফুটেছে ।
ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা হুমায়ূন আহমেদ বেড়াতে ভালোবাসতেন। বেড়ানোর জন্য সঙ্গী হিসেবে চাইতেন পরিবার কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের।তিনি মনে করতেন বেড়ানোর আনন্দ এককভাবে উপভোগের নয়।দেশ-বিদেশের বহু জায়গায় তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন।এইসব ভ্রমণের কিছু কিছু গল্প তিনি লিখেছেন তাঁর ছয়টি ভ্রমণ-বিষয়ক গ্রন্থে।গ্রন্থগুলো হলো ‘পালের তলায় খড়ম,’ ‘রাবণের দেশে আমি এবং আমরা,’ ‘দেখা না-দেখা,’ ‘হোটেল গ্রেভার ইন,’ ‘মে ফ্লাওয়ার’ ও ‘যশোহা বৃক্ষের দেশে।’ হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের মতো তাঁর ভ্রমণোপাখ্যানগুলোও পাঠকপ্রিয়তায় ধন্য। তাই আশা করা যাচ্ছে, তাঁর ভ্রমণবিষয়ক সমস্ত রচনার সংকলন এই ভ্রমণসমগ্র পাঠকদের ভালো লাগবে। ভূমিকা প্রিয়জনের নিয়ে বেড়াতে পছন্দ করতে হুমায়ূন আহমেদ। বেড়ানোর সময়কার খুব সাধারণ গল্পকেও অসাধারণভাবে বর্ণনা করতেন তিনি।আর উদ্ভট কিছু ঘটনাও যেন অপেক্ষা করত হুমায়ূন আহমেদের জন্যে।তাঁর অনেকগুলি ভ্রমণেরে সঙ্গী আমি।পরে যুক্ত হয়েছে একে একে নিষাদ ও নিনিত। ভ্রমণ থেকে ফিরে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা বলছেন, আর তাঁর বন্ধুশ্রোতারা কখনো হেসে গড়িয়ে পড়ছে আবার কখনো দেখা যাচ্ছে তাদের চোখের কোনায় পানি; এটি ছিল ‘দখিন হাওয়া’র অতি পরিচিত দৃশ্য।যারা কাছ থেকে তাঁর বেড়ানোর গল্প গুনেছেন শুধু তারাই জানেন কত চমৎকার করেই না সেসব গল্প বলতেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বইগুলি একত্রিত হচ্ছে। আর হুমায়ূন আহমেদ চলে গেছেন এক অচেনা ভ্রমণে। প্রিয়জনদের ছাড়াই, একা।তাঁর এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যদি তাঁর কাছ থেকে জানতে পারতাম! মেহের আফরোজ শাওন দখিন হাওয়া ১৩.০১.২০১৩ সূচিপত্র *পায়ের তলায় খড়ম *রাবণের দেশে *আমি এবং আমরা *দেখা না-দেখা *যশোহা বৃক্ষের দেশে *মে ফ্লাওয়ার *হোটেল গ্রেভার ইন
বিকেলের দিকে হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। হৃদি তখন খোলা মাঠে একটা শুকনো খড়ের গাদার ওপর বসেছিল। যতদূর চোখ যায়, কোথাও কেউ নেই। কেবল ধুধু ফসলের মাঠ। মাঠের পাশে নদী। নদীর বুকে শব্দ। সেই শব্দে নুপূরের ছন্দ তুলে নেমে এল বৃষ্টি। হৃদি তটস্থ গলায় বলল, ‘এখন ? এখন কী হবে ?’ ‘কী হবে ?’ ‘এই যে বৃষ্টি চলে এল।’ ‘তাতে কী ?’ ‘আমি এই ভেজা শাড়িতে ফিরব কী করে ?’