প্রোডাক্টিভ মুসলিম’ একটি আত্মোন্নয়নমূলক বই। বইটির পাতায় পাতায় মুখর হয়ে উঠেছে—আত্ম-জাগরণ, আত্মনির্মাণ ও আত্মবিকাশের বিভিন্ন দিক নিয়ে জীবনঘনিষ্ট আলোচনার আসর। এতে আছে স্রষ্টার দেওয়া অমূল্য উপহার—আমাদের মেধা সময় ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগঠন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন এবং সামাজসেবামূলক কর্মোদ্যোগের মধ্য দিয়ে নিজেকে এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্নদ্রষ্টা এবং একনিষ্ঠ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার বাস্তবধর্মী কর্মকৌশল। লেখক কুরআনের রত্নভান্ডার, নবিজির সুন্নাহর মুক্তো-প্রবাল থেকে শুরু করে Dr John Ratey, Graham Allcott সহ আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান এবং ব্যবসায়িক কর্মকৌশলের অসাধারণ সব তথ্য ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন বইটিতে। ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা এবং আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের মিশেলে রচিত এই বইটিতে যে প্রোডাক্টিভ লাইফ-স্টাইলের মডেল তুলে ধরা হয়েছে, তা একজন মানুষকে পার্থিব জীবনের সাফল্যের শেকড় ছুঁয়ে দিয়ে নিজেকে পরকালীন জীবনের শিখরে পৌঁছে দিতে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখাবে। এই বইয়ে আলোচিত—আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব; মানুষ, সৃষ্টিকর্তা এবং মহাবিশ্বের আন্তঃসম্পর্ক; মানবজাতির প্রতি আমাদের দায়বোধ; পৃথিবীর কাছে ঋণস্বীকার—এসব কমন ভ্যালুজ আমাদের প্রত্যেকের জানা দরকার, যেন বৃহত্তর মানবিক স্বার্থে একটি বসবাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে পারি। অন্যান্য প্রোডাক্টিভিটি বইয়ের তুলনায় এর বিশেষত্ব কী? দেহের একটি আত্মা আছে—বিষয়টি এমন নয়, আসলে আমাদের ‘আত্মার জন্য এ-দেহটি। সৃষ্টি হিসেবে মানুষ যতটা-না দৈহিক, তার চেয়ে বেশি আত্মিক। পশ্চিমা ধ্যানধ্যারণার আলোকে প্রোডাক্টিভিটি কিংবা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টের ওপর লিখিত যাবতীয় বইয়ের প্রধান দুর্বলতা—এই আত্মা ও আধ্যাত্মিকতার মতো একটি শাশ্বত সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া। আমাদের দেহ দুর্বল, ভঙ্গুর ও পঁচনশীল। পক্ষান্তরে আমাদের আত্মা হলো শাশ্বত। তাই আত্মা ও আধ্যাত্মিকতাকে অস্বীকার করে যে কর্মকৌশল দাঁড় করানো হয়, তাতে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু সফলতা অর্জিত হলেও, জীবনের বৃহত্তর সফলতার প্রশ্নে তা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। এ জন্য মানবসত্তার পূর্ণ বিকাশ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সফলতার জন্য দরকার এমন এক অত্যুজ্জ্বল জীবনদৃষ্টি ও কর্মকৌশল, যা একজন মানুষকে দুনিয়াতে প্রেডাক্টিভ হওয়ার পাশাপাশি অনন্তকালের পরকালীন জীবনের ব্যাপারেও প্রোডাক্টিভ হতে সাহায্য করতে পারে। এই এখানটাতে প্রোডাক্টিভ মুসলিম বইটি এই ইন্ডাস্ট্রির পশ্চিমাধারার আর-সব বই থেকে আলাদা এবং এক অপার্থিব স্বকীয়তায় উজ্জ্বল।
প্রফেসর ড. সফিউদ্দিন আহমদ শিকড় সন্ধানী মৌলিক গবেষক ও সৃজনশীল সাহিত্যিক এবং একজন সম্মোহক অধ্যাপক হিসেবে নন্দিত। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর ,কৃতী সন্তানের রত্নভূমি রায়পুরা তার জন্ম ১৯ অক্টোবর ১৯৪৩ সনে। তিনি বাংলা ও লজিকে লেটার মার্কসহ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স ও এম.এ’র একজন কৃতী ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে এবং বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র সাহিত্যের ওপর উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনা ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. সফিউদ্দিন আহমদ -এর গবেষণা ও সাহিত্যকর্ম বহু বিচিত্র মা্ত্রিকা। তার গদ্য ছন্দিত, ধ্বনি তরঙ্গময় ও অনুপ্রসারে অভিযোজনায় রস মাধুর্য এবং আকর্ষনীয় ও সুখপাঠ্য। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত দশটি গবেষণা গ্রন্থ সহ তার মোট গবেষণা গ্রন্থ ৩৫টি এবং এ সব গ্রন্থ দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই হিসেবে পাঠ্য তালিকাভুক্ত । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্রিকা, বাংলা একাডেমী গবেষণা পত্রিকা, যাদবপুর, কোলকাতা ও বিশ্বভারতী গবেষণা পত্রিকায় তার পঞ্চাশটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অতি সাম্প্রতিক প্রকাশিত তাঁর ‘ভাষা সংগ্রাম -শিক্ষার সংগ্রাম’ , ‘ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট ও ডিরোজিও’ খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার গ্রন্থ আমাদের গবেষণা সাহিত্যে এক মৌলিক ও অনন্য অবদান। তিনি একজন দক্ষ ও কৃতী অনুবাদক।প্লেটোর “The last days of socrates” নামক মহৎ গ্রন্থটি তিনি ‘সক্রেটিসের শেষ দিনগুলো’ নামে অনুবাদ করেছেন এবং বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমী। এছাড়াও তিনি ডিরোজিও, জ্যাঁ আর্তুর র্যাঁবো, পাবলো নেরুদা এবং টি. এস এলিয়টের কবিতা অনুবাদ করে পণ্ডিতজনের প্রশংসা অর্জন করেছেন।
মানুষের মনের চেয়ে বেশি রহস্যময় আর কিছু কি এই পৃথিবীতে আছে? কোথাও তাজমহলের শুভ্রতাকেও ম্লান করে মন, আবার কোথায় হিমালয়কেও হার মানায় মনের উচ্চতা। কোথাও-বা আবার তা মিশরের মমির অজানা রহস্যকেও ছাড়িয়ে যায়। মানুষের মন আটলান্টিকের গভীরতাকেও লজ্জা দেয়। প্রতিটি মানুষেরই একটা করে মন আছে, আছে একটা করে বিচিত্র জগৎ। আমরা কয়টা মন চিনি, কজনকে জানি? যাদের জানি বলে মনে করি, আসলেই কি তাদের জানি? মানুষের মনের গভীরে নামতে পারা, তার গভীরতা মাপতে পারা, সেই গভীরতার চিত্র-বিচিত্র রূপ দেখতে পাওয়া কি এতটাই সহজ? না, সহজ নয়। কারণ, মানুষ বড়োই দুর্বোধ্য আর বড়োই রহস্যময় এক প্রাণী! মন যা দেখায়, তার পেছনেও দেখার অনেক থাকে। যা জানায়, তার পেছনেও জানার অনেক কিছু থেকে যায়। মন তো কখনোই নিজেকে পুরোটা মেলে ধরে না। কারণ, নিজের পৃথিবীর এ সিংহাসনে মন নিজেই রাজা। এখানে আর কাউকেই সে ভাগ বসাতে দিতে রাজি নয়। এ জন্যই সে একা, বড়ো একা! কী বৈচিত্র্যময় বৈপরীত্য দেখুন তো। এই বৈচিত্র্যময় বৈপরীত্যই মানুষকে রহস্যময় করেছে। এখানেই তার আলাদা স্বকীয়তা। এই স্বকীয়তার সে আগলে রাখে পরম যতনে। আর আগলে রাখতে গিয়ে সে নীরবে হাসে, গোপনে কাঁদে। আপনার আশেপাশে যারা আছেন, চেয়ে দেখুন- ভিন্ন কিছু দেখতে পাচ্ছেন? হাসির পেছনে লুকোনো কান্না কিংবা কান্নার পেছনে লুকোনো হাসি? এ এক অপার রহস্যই বটে! এই রহস্যটা ধরতে পারাটাই হলো বিশ্বকে পড়তে পারা। আসনু, বিশ্বটাকে পড়ে দেখি...