ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বিভাস রচিত হয়েছে ৫৬টি কবিতা দিয়ে। কবিতাগুলোতে বিধৃত হয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতি, ঋতুচক্র, এই জনপদের মানুষের জীবন-যুদ্ধ, ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা-উত্তর সময়কালের আর্থ-সামজিক অবস্থা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ। কবি কাজী জহিরুল ইসলামের এ-যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থগুলো থেকে ৫৬টি বাংলাদেশ বিষয়ক কবিতা বেছে নেবার ঘটনাটি কাকতালীয় বা দৈব নয়, এটি প্রায় পরিকল্পিতই। ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে যখন পালিত হচ্ছে কবির ৫৬ তম জন্মদিন তখন তারই রচিত ৫৬টি দেশপ্রেমের কবিতা-সংকলনের চেয়ে বড়ো উপহার আর কী হতে পারে? এনআরবি-স্কলারস পাবলিশার্স প্রতিনিধিত্ব করে দেশের বাইরে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের। তাদের পক্ষ থেকে কবির জন্য এই উপহার। সততা, মানবতা, দেশপ্রেম এবং নান্দনিকতা এই চার স্তম্ভের ওপর নির্মিত কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতার উজ্জ্বল প্রাসাদ। “ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল” সেই প্রাসাদেরই একটি সার্থক রেপ্লিকা।
বাবার সন্ধানে কোমালা নামক এক মৃতদের গ্রামে এসেছে গল্পের নায়ক। কে জীবিত কে মৃত―এমন এক ধোঁয়াশার মধ্যে শুরু হয় হুয়ান রুলফোর পেদ্রো পারামো―লাতিন সাহিত্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী উপন্যাসের একটি। মার্কেসের মতো পৃথিবীখ্যাত লেখক তাঁর লেখালেখির প্রেরণা হিসেবে তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসকে। তিনি বলেন, স্প্যানিশ ভাষায় লিখিত সব থেকে সুন্দর উপন্যাস হচ্ছে পেদ্রো পারামো। আমি যদি এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারতাম তাহলে আর কলম ধরতাম না। বোর্হেসের মতে, পৃথিবীর যে-কোনো ভাষায় লিখিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর একটি পেদ্রো পারামো। মার্কেসের মতো কার্লোস ফুয়েন্তেসও গুরু মানতেন রুলফোকে। তিনি উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেন, ‘পেদ্রো পারামো আমাদের লাতিন আমেরিকার নতুন ধরনের উপন্যাসের পথ সৃষ্টি করে দিয়েছে।’ লাতিন সাহিত্যের আরেক খ্যাতিমান লেখক ওক্তাবিও পাস পেদ্রো পারামোকে নির্জনতার গোলকধাঁধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মারিও বার্গাস য়্যোসাও স্বীকার করেছেন তাঁর প্রজন্মের ওপর এই উপন্যাসের প্রভাবকে। শুধু লাতিন আমেরিকার লেখকদের নয়, গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের অগণিত লেখক-পাঠককে বিমোহিত করে চলেছে উপন্যাসটি।ক্ষীনকায় এই উপন্যাসটি শুধু কাহিনির জন্য নয়, কাঠামোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। রুলফো উপন্যাসের ঐতিহ্য থেকে সরে এসে তাঁর আলোকচিত্রের শিল্পকে অনুসরণ করেছেন এই উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে। বিশ্বসাহিত্যে জাদুবাস্তবতার সবচেয়ে সফল প্রয়োগও ঘটেছে এই উপন্যাসে।বিশ্বখ্যাত এই উপন্যাসটি মূল থেকে অনুবাদ করেছেন লাতিন সাহিত্যের একনিষ্ঠ অনুবাদক আনিসুজ জামান।
কে প্রথম কাছে এসেছি/কে প্রথম চেয়ে দেখেছি, কিছুতেই পাই না ভেবে কে প্রথম ভালোবেসেছি তুমি? না আমি? দু'জনের যে কেউ একজন প্রেমের এই প্রদীপখানি তুলে ধরতেই পারে জীবনপথের সরণিজুড়ে। যে প্রেম হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে দাঁড়ায় অলক্ষে তার, সে তো চিরকালের সামগ্রী।
তমিজ উদ্দীন লোদী আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবেই চিহ্নিত। জীবন যাত্রার পরিবর্তন, বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার সমাজ রাষ্টধারণার পরিবর্তন-এর সাথে কাব্য ভাষার পরিবর্তন ঘটে গেছে এটি তাঁর কবিতা ধারন করেছে। তাঁর কবিতা কেবল মাত্র অর্থহীন শব্দ কতোগুলো ধ্বনির সমাহার কাব্য বলে রোচ্য নয়, যুক্ত হয়েছে নির্মাণ মনস্তত্ত্ব। শুধু মনতুষ্টিতে তন্ময়ী নয়, বরং তাঁর কবিতা লাভকরছে এক নতুন গদ্যলিরিক এবং নিরেট গদ্যবিস্তার। নানা তত্ত্বের সংমিশ্রনে দর্শন বিজ্ঞান ইতিহাস চেতনা এবং সমাজ রাষ্ট্র মানব হিতৈষী ব্যক্তির স্বাধীনতা ঘোষণা করছে দ্ব্যার্থহীন। তাঁর কবিতার একটা বড়গুণ যে তিনি বিষয়ের অনুভব পাঠকের দিকে ঠেলে রাখেন এবং নিজে বসে থাকেন তার সৃষ্টির সামনে- শিল্পী যখন কোন ব্যক্তির চিত্র চিত্রণে যত্নবান হয় তখন সেই ব্যক্তিটি আবিস্কারের অপেক্ষায় কম্পমান এক অনাবিষ্কৃত জগতের মতো। তিনি থেকেছেন বাস্তবে, সে বাস্তবটা তাঁর আকাঙ্খার ভেতর লড়াই রত, জিতবার আনন্দ আছে অনুদ্ধারের বিষাদ আছে এবং এসব নিয়ে তার কবিতার পঙক্তি ছড়িয়ে গেছে বিমূর্ত শিল্পে ধারক বাহকদের শিল্পবোধ পর্যন্ত। নির্মাণ কলায় তিনি এমন একটা সম্মোহন তৈরি করতে পেরেছেন সহজ করে বলার মধ্য দিয়ে যা পাঠককে নিয়ে যাচ্ছে নিজের দিকে চোখমুখ খুলে জানবার ও চিনবার দিকে, তার পরিপার্শের দিকে আর অবারিত করছে দুঃখের উৎসগুলোকে কাব্যিক শিল্প চেতনায়। তার কবিতা চেতনার কবিতা, নিছক কবিতার জন্য কবিতা নয়। এক লাবণ্য ছড়িয়ে তিনি সেই কথাগুলোই বলতে চাইছেন- মানুষের দুঃখ বেদনার রাশি রাশি ইতিহাস। এইসব নিয়েই তার নতুন এই কাব্যগ্রন্থ।
হাসানআল আব্দুল্লাহ সম্পর্কে সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন ওঁর কবিতায় বিষয়কে নতুন করে দেখার চোখ আছে। শামসুর রাহমান বলেছিলেন তিনি (হাসানআল আব্দুল্লাহ) কবিতার ব্যাপারে এতো নিবেদিত, এতো নিষ্ঠাবান যে প্রত্যেক কবির, প্রত্যেক সমালোচকেরই তাঁর এই গুণটির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ আছে। আল মাহমুদঃ হাসানআল আব্দুল্লাহ আমার কবিতারও তীব্র সমালোচক। আমি এই সমালোচনার সব সময় মূল্য দিয়ে এসেছি।... আমেরিকার কবিদের সংস্পর্শে তার মধ্যে একটা জগৎ বাস্তবতার স্বরূপ প্রত্যক্ষ করার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এটা আমাদের কবিতাকে সাহায্য করবে। শহীদ কাদরীঃ বাংলা ছন্দের সাথে সপ্রাণ পরিচয়ে হাসানআল আব্দুল্লাহর কবিতার ছন্দর চেয়ে ভালো কোনো গ্রন্থ আমার পড়া নেই।...এ-কথা স্বীকার করতেই হয় যে সাম্প্রতিক কালে কবিতাকে যাঁরা ঐশ্বর্যবান করে তুলেছেন, হাসানআল আব্দুল্লাহ তাঁদের অন্যতম। মীনাক্ষী দত্তঃ দুঃসাহসিকতা, উচ্চাশা ও পরিশ্রমের অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে ধাপে ধাপে শৃঙ্গে আরোহণ করেছে হাসান আল আব্দুল্লাহ। বাংলা ছন্দের দেবী [তাঁকে] মালা পরিয়েছেন। সিল্ক রুট কবিতা উৎসবে পৃথিবীর দরবারেও সে স্বীকৃতি পেল। হাসানআল ব্যস্তকবিতা নিয়ে। কবিতা লেখা, কবিতা অনুবাদ, কবিতার গড়নপেটন, ছন্দ, মাত্রা নিয়ে ভাবনাচিন্তা, লেখালেখি, কবিদের জীবন, কবিতার বই প্রকাশ, কবিতাপত্রিকা প্রকাশ, এই সব কিছু নিয়েই তাঁর বেঁচে থাকা। আগে আমি কলকাতায় এই ধরনের কবিতা-অন্তপ্রাণ মানুষ দেখেছি। -নবনীতা দেবসেন। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের মানুষের সাথে এবং রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতার সাথে আমার পরিচয়ের প্রধান সূত্র হাসানআল আব্দুল্লাহ, যিনি নিজেও বাংলা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। -স্ট্যানলি এইচ বারকান। হাসানআল আব্দুল্লাহর কবিতা সম্পর্কে আমি উচ্চ ধারণা পোষণ করি। ভাবার্থের সাথে কোনো প্রকার আপোষ ছাড়াই তিনি যেমন লিরিক্যাল, ঠিক তেমনি কৌতুক উদ্দীপক ও গম্ভীর; এইসব অনুভূতির ভেতর দিয়ে মননকে জাগিয়ে তোলেন। -হল সরুইটজ। কল্পনার ব্যবহারে যেমন তিনি রোমান্টিকতায় আস্থাবান, ঠিক তেমনি আধুনিক ব্যঙ্গ বিদ্রূপ ও উত্তরাধুনিক নির্মাণ শৈলীকে অনায়াসে কবিতায় একাকার করে দিতে পারেন। কাব্যক্ষেত্রে এটি তাঁর যথেষ্ট শক্তির পরিচায়ক। -নিকোলাস বার্নস।
আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে অদ্ভুত কিছু উল্কা । শখের জ্যোতির্বিদ নামিরা বুঝতে পারে এগুলো মোটেই সাধারণ উল্কা নয় । ওদিকে মিশরে নানারকম গুজব ছড়িয়ে পড়েছে । জনমনে আতঙ্ক । ফারাওদের অভিশাপের মতো কিছু কি আসছে? প্রলয়কালের পূর্বাভাস দেওয়ার যন্ত্রটাও খারাপ কিছুর সংকেত দিচ্ছে। তারপর? ভয়াবহ সংঘাতের মুখে পড়ল পৃথিবী ।
হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো একটি সূক্ষ্ম পুষ্পরেণুও কোনো কোনো মানুষের দৃষ্টি এড়ায় না। সবুজ ঘাসের পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু আর অবাক মেঘের উড়ানে কেউ কেউ খুঁজে পান জীবনের সুন্দরতম অবয়ব, নিজের পরিপাটি ভুবন রেখে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেন সময়ের ঘাত-প্রতিঘাত। মানুষের দৃষ্টিসন্ধিতে জমে থাকা পরশপাথরও চুর চুর করে ভেঙে পড়ে তার জাদুকরী আঙুল স্পর্শে। তেমনই অন্তদ অন্তর্দৃষ্টি আর মমতায় জীবনের গল্প রচে চলেন গল্পকার স্মৃতি ভদ্র। পালক নরম শব্দের বুনন, দুর্দান্ত কল্পনাশক্তি আর নিগূঢ় মমত্ববোধ দিয়ে গল্পকার স্মৃতি ভদ্র 'এলেনা বেলেনা' গল্পগ্রন্থের ষোলোটি গল্প নির্মাণ করেছেন। এই গল্প- সংকলনের গল্পগুলোতে দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের নানা অবক্ষয় মূর্ত হয়ে উঠেছে।