'একা একজন' গ্রন্থে নাওমি ওয়াতানাবে বলেছেন। জীবনের গল্প। যে জীবন কল্পনার নয়। বাস্তবতার। মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের যা কিছু অনুষঙ্গ, তার সত্য ও নির্মোহ উচ্চারণ আছে এখানে। ইয়ামাদা, ইয়ুরি, মায়ুমি, হিদে, ইয়ুকা প্রমুখ জীবনের পূর্ণাবয়ব চিত্র নিয়ে গল্পে উপস্থিত হয়নি। তারপরও ইঙ্গিত মধুরতায়, রসঘন নিবিড় মুহূর্তে এবং নিগূঢ় সত্যের ব্যঞ্জনায় ও পরিমিত রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে তারা। জীবনের অবিরাম স্রোতে ক্ষনপ্রাণ ও ক্ষণবিলীয়মান যে তরঙ্গ তাই মূর্ত হয়েছে আবশ্যক কথা ও ভাষায়। 'একা একজন' তাই জাপানিদের গল্প শুধু নয়। গল্প পৃথিবীর সকল মধ্যবিত্ত মানুষের।
প্রণয়, আবেগ-ঈর্ষা, দ্বেষ, কলহ, বিরহ, স্বপ্ন-এসব নিয়ে মধ্যবিত্ত জীবন। যে মধ্যবিত্ত উন্নত দেশেও আছে। দারিদ্র্য-ক্লিষ্ট তৃতীয় বিশ্বেও আছে। তাদের সকলের রূপ-রুচি ভঙ্গি-দৃষ্টি এক। যেমন বাংলাদেশে: তেমন জাপানে- কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক। যার কারণে নাওমি ওয়াতানাবে যখন জাপানি মধ্যবিত্তের জীবনের গল্প বলেন, তখন সে গল্প শুধু জাপানের গল্প থাকে না, তা হয়ে উঠে সকল মধ্যবিত্তের- সকল দেশ ও জাতির। নাওমি ওয়াতানাবের 'রূপান্তরের কথকতা' জাপানি মধ্যবিত্তের জীবনকথা হয়েও বাঙালি মধ্যবিত্তের মর্মকথা। ধরিত্রীর সকল মধ্যবিত্তের প্রাণের কথা। -প্রকাশক
উন্নত দেশ জাপান। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যথার্থই উন্নত। জীবন সেখানে আনন্দময় ও উদ্বেগহীন। স্বপ্ন সেখানে নিত্য সহচর। তবে তা কখনােই অসংহত নয়। সংহত ও সংযত কল্পনা, সংযমী ভাবনা, পরিমিত সাহচার্য এবং অলক্ষিত ব্যক্তি সম্পর্কের নিবিড় অন্তরঙ্গতা জাপানি মধ্যবিত্ত সমাজের সাধারন বৈশিষ্ট্য। এই সাধারণ চিত্র অনন্য অসাধারণ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে নাওমি ওয়াতানাবের সহােদরা এবং কবি গল্পগ্রন্থে। হিসাশি, গণতা, নানামি, ইয়ানাে, এমিকো, ইয়ুকা, হুমিকো, ইয়ুরি, মিকি, নাওকো, ইয়ামাতাে, কাজু প্রমুখ জাপানি, মধ্যবিত্তের স্বপ্ন-প্রত্যাশার সীমাবদ্ধতার বৃত্তে বসবাস করে জীবনকে উপভােগ করেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দের অংশীজন হয়ে। এদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে বাঙালি শিশু দীনা, সান্তাক্লুজ ও নিম্নমধ্যবিত্তের বাঙালি জীবনের টানাপােড়েন। সব মিলিয়ে সহােদরা এবং কবি গল্পগ্রন্থের দশটি গল্প জীবনের দশটি দিককে আলােকিত করেছে। ক্ষণকালের দশটি মুহূর্তকে করেছে। চিরকালের। যেন দশদিগন্ত বিস্তৃত হয়ে জীবন কথা রলেছে এখানে।
পাঁচ বছরের বাংলাদেশবাসে জাপানি নাগরিক নাওমি ওয়াতানাবে এ দেশের মায়ায় পড়েছেন ভীষণভাবে। নিজের দেশের ভাব-ভাষা ভুলে তিনি গায়ে তুলে নেন শাড়ি, গলায় বাধেন লালনবাণী, শেখেন বাংলা ভাষাও। জাপানে ফিরেই তিনি কী ছেড়ে এলেন তার বোধ স্পষ্ট হয়ে উঠলেই লিখতে বসেন তার মনের কথা। এক টানাপোড়েনের গল্প গ্রন্থিত হয়েছে তার ভাষায়।