প্রায় তিরিশ বছর আগে শামস মমীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'চিতায় ঝুলন্ত জ্যোৎস্না' প্রকাশিত হওয়ার পর সলিমুল্লাহ খান তাঁকে শনাক্ত করেন এক ভিন্ন স্বরের কবি হিশেবে। তিতাশ চৌধুরী বলেন, তাঁর কবিতা কখনো রোমান্টিক, কখনো বা প্রতিবাদী। মমীন তাঁর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোতে অবশ্য ভিন্ন বাঁক নিয়েছেন। এই বাঁক পরিবর্তনের মাঝেও কোথায় যেন একটি আবৃত্তি রয়ে গেছে তাঁর কবিতায়। সলিমুল্লাহ খানের নবতর বিশ্লেষণে সে কথাই শুনেই পাই: নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা ইতিহাসের উপলব্ধির সহিত মিলাইয়া দিবার ঢের উদাহরণ আছে মমীনের কবিতায়।' একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায় আহমাদ মাযহারের লেখায়। মমীনের কবিতাকে ব্যবচ্ছেদ করে তিনি বলেন, মার্কিনদেশে দীর্ঘ বসবাসের ফলে তাঁর কাব্যাদর্শ ও কাব্যনির্মিতিতে বাংলাদেশের জীবনাচারের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা চৈতন্যও যুক্ত হয়েছে সমানভাবে। এ সংকলনে আরো আছে সিকদার আমিনুল হক, মতিন বৈরাগী, আবেদীন কাদের, চঞ্চল আশরাফ, রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ কবি ও প্রাবন্ধিকের নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ। এসব রচনা শামস আল মমীনের কবিতা পাঠে অধিকতর সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মাটিতে হলেও সে যুদ্ধের আড়ালে রয়েছে অনেক যুদ্ধ যা সংঘটিত হয় বাংলার মাটি থেকে দূরে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, অথচ কত জানা-অজানা মানুষ সে যুদ্ধে আমাদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করেছে। এই গ্রন্থে রয়েছে সেই সব কিছু জানা-অজানা মানুষের কথা। রয়েছে সেই যুদ্ধের পেছনে যুদ্ধের কিছু কাহিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে, জানুয়ারি ১৯৭১-এ একটি ভারতীয় বিমান হাইজ্যাকের কাহিনি দিয়ে এই গ্রন্থের শুরু। আমরা সেই হাইজ্যাকের কথা অনেকেই মনে রাখিনি, কিন্তু সমর কৌশলবিদেরা একমত, সেই ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। এছাড়াও রয়েছে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে সােভিয়েত কূটনীতিক ইয়াকভ মালিকের সাহসী ভূমিকার বিবরণ, বাংলাদেশের গণহত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মার্কিন কূটনীতিক আর্চার ব্লাডের প্রতি একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি, একাত্তরের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মার্কিন সাংবাদিক সিডনি শ্যানবার্গের একটি সাক্ষ্যভাষ্য ও মার্কিন নৌ-বন্দরে পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজ অবরােধের অবিশ্বাস্য কাহিনী।
মাতৃত্ব কি সৃজনশীলতার অন্তরায়? নাকি সহায়ক শক্তি? ব্যক্তি নারী-জীবনে মাতৃত্ব কি অনিবার্য ও জরুরি? নাকি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন সৃষ্টিশীল নারীর জন্যে অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন প্রান্তিক নারীর জন্যে মাতৃত্বের বাধ্যবাধকতায় কিছু ছাড় দেওয়া সম্ভব? নারী-জীবনের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রশ্নের জবাব অতি সহজে দেওয়া যায় না অথচ এই প্রসঙ্গ আলোচনায় বিদগ্ধজনের উৎসাহও তেমন প্রবল নয়। পূরবী বসু এই স্বল্পপরিসর গ্রন্থে সেই আলোচনারই সূত্রপাত করেছেন তাঁর স্বভাবসুলভ কথাশিল্পীর ভঙ্গিতে-পৃথিবীর নানা সৃজনশীল সন্তানবতী ও সন্তানহীন নারীর জীবনকাহিনীর আশ্রয়ে। উৎসাহী পাঠক এই গ্রন্থপাঠে কেবল মননশীলতায়ই ঋদ্ধ হবেন না, পাবেন গল্পকাহিনী পাঠের আমেজও।
স্বদেশ ছাড়াও বিদেশ থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ পেয়েছে দশটি দেশ থেকে। দেশগুলো হলো : ব্রাজিল, ভারত, তুরস্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, কানাডা, আমেরিকা এবং জাতিসংঘ শ্রদ্ধা জানিয়ে দশটি স্মরণীয় স্মারক ডাকটিকিট বের করে।
‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও সীমাহীন ভালোবাসা। ‘বাংলা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ এক ও অবিচ্ছেদ্য। এ কারণেই ‘জয় বাংলা’ শব্দ উচ্চারণ করার পরে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ না-বললে বাঙালি বাঙালি জাতির অন্তরের আবেগ মুক্তি পায় না। সর্ব্কালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম ও কারান্তরালে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করার বেদনাবিধুর ইতিহাস। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির গৌরবের অগ্নি-শিখা। বাঙালি জাতি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ঢেলে এই গৌরবের শিখা প্রজ্বলন করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতির মুক্তিযুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে বটে, কিন্তু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই সোনালি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর আর কোনো জাতি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে, এত রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে আগামী প্রকাশনীর বিশেষ প্রকাশনা উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ সিরিজ। এ সিরিজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সমুদয় রচনার সংকলন পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের পরিকল্পিত লেখক তালিকায় এমন অনেক বিশিষ্টজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন যাদের স্মরণীয় রচনায় এদেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু উত্তরপ্রজন্মের পাঠকের কাছে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে স্বদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের বার্তা, বর্তমানের দৃঢ় পথচলা এবং সুন্দর আগামীর বিনিমার্ণ সাধন করতে এ সিরিজ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হবার পর স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্ন ছিল একটি নতুন দেশ গড়ে উঠবে । দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছে তার বিপরীত । বার বার রক্ত রঞ্জিত হয়েছে দেশ। দেশ গড়ার স্বপ্ন হয়েছে ধূলিসাৎ। আক্রান্ত হয়েছে স্বাধীনতা, সংবিধান, গণতন্ত্র । বিপন্ন স্বাধীনতা আর বিধ্বস্ত গণতন্ত্রের ওপর চেপে বসেছে কখনাে সামরিক শাসন কিংবা স্বৈরশাসন অথবা অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ । যা আমাদের পঁচিশ বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে দিয়েছে । এদেশ আজ যেন জীর্ণশীর্ণ। পুষ্টিহীন যুবক। | মাও সেতুং বলেছিলেন, “যুদ্ধ হচ্ছে রক্তপাতময় রাজনীতি, আর রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতহীন যুদ্ধ।'... বাংলাদেশের অসংখ্য লােমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবার কথা সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে । আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সভ্যতা, সাংস্কৃতিক সবদিক দিয়েই এদেশ মােটেও অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। এই না পারার পেছনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড প্রথম এবং প্রধান অন্তরায়। কারণ একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলাে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর দারুণভাবে | ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমাদের উন্নতি-উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।
রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অনুবাদ এবং তার ভিত্তিতে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয় নিয়ে রয়েছে রহস্যঘেরা নানা তর্ক-বিতর্ক। বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব গ্রন্থিত করে অবগুণ্ঠিত করেছেন লেখক। বিশ্লেষণ করেছেন ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষতা নিয়ে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুই মার্কিন সাহিত্যপ্রেমীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ও সম্পর্কের কাহিনি কণিকা। সাহিত্যের ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল এ বই। সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে নিরুদ্দিষ্ট নয়মাস 'দৈনিক বাংলা ' কাগজে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৭১ সালের জুন মাস থেকে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি -এই নয় মাস দেশের বাইরে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে মোটিভেটর হিসেবে কাজ করেছেন। মুজিবনগর সরকারের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'জয় বাংলার' নির্বাহী সম্পাদক এবং স্বাধীন বাংলা বেতারে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে তাঁর সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই বই। এটা শুধু তাঁর দেশ ত্যাগের পরের কাহিনিও নয়। আগের চারমাসের কাহিনিও এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে।
১৯৬৪ সালে দাঙ্গার শিকার হয়ে সপরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানস। জন্মভূমির প্রতি জন্মেছিল ঘৃণা, মুছে দিতে চেয়েছিল তার সব স্মৃতি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সে নিউইয়র্কে, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। সেখানে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায় এই নিজের জন্মভূমির ভাগ্য নিয়ে বৃহৎ শক্তিসমূহের দড়ি-টানাটানি। নিজের অজ্ঞাতেই সে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ে দেশটির মুক্তি আন্দোলনে। উপলব্ধি করে রাজনীতি ও মানচিত্রের বিভেদে ছিটকে পড়লেও জন্মভূমির সঙ্গে তার সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। ভাঙতে থাকে মানবিক সম্পর্কের ভুল-বোঝাবুঝি। আন্তর্জাতিক পটভূমিকায় রচিত হাসান ফেরদৌসের প্রথম উপন্যাস মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরই এক প্রামাণিক কাহিনি।
এই গ্রন্থের জন্য বন্ধুস্থানীয় তিন বাংলাদেশি ব্যারিস্টারের কাছে নূরের ব্যাপারে ‘আইনের ফাঁকে’র বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীর আবেদন চার চার বার বাতিল হয়েছে। ক, সেই ধারায় তাে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। আবার অন্য বিধানে আছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তকে কানাডা থেকে ফেরত দেয়া হবে না! স্ববিরােধী এই বিধান সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী? কিন্তু আমাদের খ্যাতিমান আইনজীবীরা সাড়া দেননি। বরং তাঁরা আইনের জটিলতা তুলে ধরেছেন। অথচ ইচ্ছে করলে, তাঁরা কেউ কেউ এ ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ে লড়তে পারতেন, যা ইতিহাসের পাতায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত।
জাপান -বাংলা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শতাধিক বছরের পুরনো । ১৯০২ সালে জাপানি মনীষী ওকাকুরা তেনশিন বৃটিশ-ভারতের রাজধানী কলিকাতায় যান এবং স্বামী বিবেকানন্দ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,ভগিনী নিবেদিতা,অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সঙ্গে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন । সেই থেকে শুরু জাপানি ও বাঙালি জাতির মধ্যে প্রত্যক্ষ শিক্ষা,সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভাববিনিময়। জন্ম হয় বহু ঘটনার। ১৯১২ সালে ঢাকার মেয়ে হরিপ্রভা মল্লিক তাঁর জাপানি স্বামী তাকেদা উয়েমোনসহ জাপানে আসেন ।১৯০৮ সালে জাপানি বৌদ্ধভিক্ষু কিমুরা রিউকাল চট্টগ্রামে যান পালি ভাষা শেখার জন্য । ১৯১৫ সালে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু,১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসু,১৯৪৬ সালে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালে আসন গ্রহন করেন বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল এবং ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্বে ও পরে অনেক ওকাকুরা-রবীন্দ্রভক্ত বিশিষ্ঠ জাপানি বাংলা অঞ্ছলে যান । বস্তুত,পূর্বজদের ধারাবাহিকতা ধরেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাপানি রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে জাপান বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর আহবানে। কিন্তু সেই সম্পর্কের ইতিহাস বাঙালিদের কাছে প্রায় অজানাই রয়ে গেছে । সেই অজানা ইতিহাসেরই সংক্ষিপ্ত রূপ এই গ্রন্থ ।
আমেরিকা কারো কাছে স্বপ্নপুরী। কারো কাছে দূঃস্বপ্ন। এই দুইয়ের মধ্যে অপসৃয়মান একটি হালকা ব্যবধান-রেখা হয়ত আছে, কিন্তু সে রেখা অনায়সে বদলে যায়, যেতে পারে। আদনান সৈয়দের “আমেরিকানামা”-য় সেই স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের আমেরিকাই ধরা পড়েছে স্বপ্নতাড়িত একদল মানুষের নিকট অভিজ্ঞতার আয়নায়। এই গ্রন্থে সংকলিত প্রতিটি কাহিনী আদনানের কাছ থেকে দেখা ও শোনা। এখানে তিনি একাধারে সাংবাদিক ও শিল্পী। তথ্য সংকলিত করেছেন সাংবাদিকের অভিনিবেশ ও নিবিষ্টতায়। কিন্তু সে কাহিনী গেঁথেছেন প্রকৃত শিল্পীর সহমর্মিতায়। ফলে এই গ্রন্থ হয়ে উঠেছে যথার্থ সাহিত্যে।
দেওয়া সহজ হবে না। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও এরা যেমন স্বদেশকে ভোলেননি, তেমনি ভোলেননি তার ভাষা,সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এরা শুধু প্রবাসী লেখকনন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অবিভাজ্য অংশ। তাঁদের সাহিত্য ও গবেষণার ভেতর দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য প্রতিদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। ২০১৪ সালের বইমেলাকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হচ্ছে উত্তর আমেরিকার বাঙালি লেখকদের স্বনির্বাচিত রচনার সংকলন। এখন যারা নিয়মিত লিখছেন,তাদের খুব সামান্য কয়েকজনের লেখাই এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা গেছে।
পিকাসো মেয়েদের হয় দেবী, নয়তো পাপোশ ভাবতেন ফ্রাঁসোয়া জিলোর এই মূল্যায়ন সম্ভবত মোটেই অতিরঞ্জিত নয়। অথচ এ-কথাই বা কী করে অস্বীকার করি, তাঁর শিল্পীজীবনে সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এসেছে প্রধানত মেয়েদের কাছ থেকে। ব্যক্তিজীবনে মায়ের প্রভাবের কথা পিকাসো তাঁর ছবিতে ছাড়াও নানাভাবে প্রকাশ করেছেন, মায়ের নাম ‘পিকাসো’ গ্রহণ তার একটি। তাঁর শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মসমূহের বিষয় নারী নারীর দেহ, তার কামজ মাদকতা ও সম্মোহনী ইন্দ্রজাল। এমনকি যখন সে নারীর দেহ ভাংচুর করে তাকে বিকৃত করেছেন, তখনো আমাদের কাছে সে এক নিষিদ্ধের আমন্ত্রণবার্তা বয়ে এনেছে। যেসব নারীকে তিনি স্ত্রী অথবা প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাই পিকাসোর অধিকাংশ ছবির বিষয়বস্তু। নারীদেহের প্রতি তাঁর ক্ষুধা ছিল অফুরান। অথচ যে-মুহূর্তে সে-দেহের প্রতি আগ্রহ ফুরিয়েছে, অমনি পিকাসো তাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন। নারীর প্রতি পিকাসোর বৈপরীত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি একই সঙ্গে প্রেম ও ঘৃণা তার ব্যাখ্যা নানাজন নানাভাবে করেছেন, তাঁদের মধ্যে কার্ল ইয়ুংও আছেন। এই গ্রন্থে আমাদের লক্ষ্য পিকাসোর জীবনে তিন রমণীর প্রভাব শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নয়, ছবিতেও তার অনুসরণ। পিকাসোর অধিকাংশ ছবিই আত্মজৈবনিক। ফলে তাঁর জীবনের ঘটনাবলির সঙ্গে পরিচিত না হলে সে ছবির রস পুরো উপভোগ করা কঠিন। নিউইয়র্কে দুটি সাম্প্রতিক চিত্র-প্রদর্শনী ও পিকাসোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে লিখিত একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের ভিত্তিতে গ্রন্থভুক্ত তিনটি আলোচনা প্রস্তুত হয়েছে। আমি পেশাদার শিল্পসমালোচক নই, পিকাসোর ছবির গুণাগুণ নিয়ে আলোচনার পথে আমি যাইনি। শুধু আমার মুগ্ধতার কথাটাই জানিয়েছি। সঙ্গে, গল্পচ্ছলে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই চিত্রকরের জীবনে এই তিন রমণীর উপস্থিতির বিবরণ। কালি ও কলমের সম্পাদক আবুল হাসনাত ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহ না দিলে প্রবন্ধ তিনটি লেখা হতো না। তাঁর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। এই গ্রন্থ প্রকাশের ফলে সে ঋণের বোঝা আরো বাড়ল। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি। আশৈশব তাঁর আঁকা প্রচ্ছদ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কবিতা ও চিত্রকলার মধ্যে একটি মৌলিক সম্প্রীতি আছে, তাঁর ছবি দেখে এমন বোধ দীর্ঘদিন থেকে অনুভব করেছি। পিকাসোর ওপর এই বই, তা যেমনই হোক, তাঁকে উৎসর্গ করে ভালো লাগছে।
ভ্যাঙ্কুভার বিশ্বের সেরা শহরের শীর্ষে। তাই কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারকে বলা হয় ভূস্বর্গ! ভূস্বর্গ থেকে নেমে আসা বিশ্বের অন্যতম নােংরা শহর ঢাকাকে মনােয়ারা অর্থাৎ মৌয়ের কিছুতেই নরক মনে হচ্ছে না। বরং প্রতি মুহুর্তেই এই শহর, এই দেশ, এই দেশের মানুষগুলােকে তার আরাে আপন, আরাে কাছের, আরাে স্বজন মনে হচ্ছে। এতােদিন শাদা স্রোতের বিপরীতে ছিল, আজ যেন স্বজাতীয় কালচে-বাদামি মেঘলা যােতে মিশে গেছে মৌ। মুগ্ধ হয়ে দেখছে নানা ধরনের মানুষ। দেখছে মানুষের আচার-আচরণ, মানুষের ভিড়-ব্যস্ততা, মানুষের ভালােবাসা-কষ্ট, টিফিন-কেয়ারের টিনের বাটি, জটিল জ্যাম। ট্রাফিকবিহীন রিকশা-গাড়ির ধাক্কাধাকি। উভট হর্ন, বাংলা গালি! শিকড়ের সন্ধানে এসে মনােয়ারার কিসের এক টানে কোথায় যেন কি গেঁথে যাচ্ছে। বুকের ভেতর কি যেন কি আটকে যাচ্ছে, টের পাচ্ছে! ঢাকা বিমানবন্দর থেকে নেমেই মনে পড়ছে সেই গানটি- ও আমার দেশের মাটি/তােমার কোলে ঠেকাই মাথা ।
বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামকে যারা লেখনীর মাধ্যমে ত্বরান্বিত করেছেন, তাঁদেরই অন্যতম আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। কিভাবে পাকিস্তানি শৃঙ্খল থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে সেসব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। তার অসংখ্য লেখায় তিনি এসব ঘটনার বিশ্বস্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। আবদুল গাফফার চৌধুরী বাঙালির অনির্বাণ বাতিঘর ও নির্ভীক কলমযোদ্ধা হিসেবেই নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের যেকোনো দুঃসময়ে তাঁর কলম প্রতিবাদী হয়ে ওঠেছে। এ জন্য তাঁকে অনেক সময় বাংলাদেশবিরোধী গোষ্ঠীর অত্যাচার-অপমানও সহ্য করতে হয়েছে। তবু তিনি বাংলাদেশের পক্ষে তার অবস্থান অনড় রেখেছেন। লোভ, ভয় বা অপশক্তির চোখে রাঙানিতে কখনোই তিনি নতজানু হননি। বলতে দ্বিধা নেই, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো দৃঢ়চেতা সাংবাদিক-কলামলেখক বর্তমান বাংলাদেশে বিরল। অসংখ্য পাঠকের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনা করেই আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তির পথ’ গ্রন্থটি প্রকাশ করা হলো।
রফিক,সালাম,বরকত,জব্বার,সফিউর এই পাঁচজন ভাষা শহিদের জীবন ও আত্নত্যাগের ওপর নির্মিত পাঁচটি গল্প নিয়ে রচিত ভাষা শহিদের গল্প । প্রচলিত গল্পের চেয়ে এই গল্পগুলোর কলেবর বড়,কারণ লেখক ভাষা শহিদদের পুরো জীবনকে ধারণ করতে চেয়েছেন প্রতিটি গল্পে। যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে পুরোপুরি জানতে চান এই গ্রন্থ তাঁদের জন্য । লেখক গল্প বলতে বলতে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রের উথানপর্বের গল্প ।
বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতি গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ১৪৫টি লেখা সন্নিবেশিত হয়েছে। বিষয়-অনুযায়ী লেখাগুলােকে আটটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু, প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা, ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিচারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিশ্বরাজনীতি, প্রসঙ্গ করােনা ইত্যাদি। এই লেখাগুলােতে লেখকের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বস্তুত আটটি পর্ব নিয়ে পৃথক পৃথক গ্রন্থই প্রকাশ করা যেতাে, কিন্তু পাঠকের কথা চিন্তা করেই এক গ্রন্থে এতগুলাে বিষয়কে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলাে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিশদ আলােচনা। এ ছাড়া ‘ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি যেসব সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন সেগুলােও অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে যে-চারটি লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই লেখাগুলােতে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র তাে বটেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও উপস্থাপিত হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মহান স্থপতি। তাঁরই নেতৃত্বে পরাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু বাংলা ও বাঙালির অধিকার আদায়ে আপসহীন ছিলেন। তাঁর দৃঢ়তা, বাগ্মিতা ও সাহসিকতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাে বটেই, সারা বিশ্বেই এক বিরল ঘটনা। আবদুল গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি অমর একুশের স্মৃতি জাগানিয়া এই গানটি তারই রচিত । আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। বহুদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতির সাক্ষী হয়েছেন। 'মধ্যরাতের সূর্যতাপস’ গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করেছেন। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুর তুলনামূলক বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে এই গ্রন্থে। ‘বঙ্গবন্ধু : মধ্যরাতের সূর্যতাপস’ একটি দ্বিভাষিক গ্রন্থ। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও বইটি এক মলাটে বন্দী করা হলাে। এর ফলে শুধু বাংলাভাষী পাঠক নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও বইটি পড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে-বুঝতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক। তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর। যত দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা বাঙালি জাতির সামনে থাকবে তত দিন এ জাতি দিকভ্রষ্ট হবে না।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক কিশাের নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি অস্ত্র হাতে নিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। বীরত্বের সাথে। তাদের মধ্যে সেলিম আকবর, শহিদুল ইসলাম লাল অন্যতম সেরতের কতিস্বরূপ তারা। বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন একটি গ্রামের অতি সাধারণ কিশাের লালু যুদ্ধে জড়ালেন, কীভাবে। | অসীম সাহসে গুড়িয়ে দিলেন শত্রুসেনাদের ক্যাম্প! | সেসব ভয়াবহ জীবনালেখ্য নিয়ে লেখা বীর বিচ্ছ। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইলে অস্ত্র জমা নিতে গিয়ে চমকে উঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। প্রায় শেখ রাসেলের সমবয়সী, রাসেলের সমউচ্চতার একটি কিশাের মুক্তিযােদ্ধা! বঙ্গবন্ধু আনন্দে-আবেগে কোলে নিয়ে আদর করলেন তাকে। চুমু খেলেন! বিয়াল্লিশ বছর আগের | সেসব কথা এই গ্রন্থে তুলে ধরেছেন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল।
“ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীরা” বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা: নথিপত্র অনুযায়ী ১৬১৭ সালে মিসেস হাডসন এবং তার কাজের মেয়ে ফ্রান্সেস ওয়েব প্রথম ভারতে আসা দুই বিলাতি নারী । তবে আঠারাে শতকের শুরু থেকেই বিলাতি নারীরা বিভিন্ন কারণে ভারতে পারি জমান। ভারতে তারা কখনাে কারাে স্ত্রী, কখনাে প্রেমিকা, কখনাে হাসপাতালের সেবিকা হিসেবে, আবার কেউ মিশনারির কাজ, আবার কেউ রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন কাজের সাথেও যুক্ত ছিলেন ভারতে অবস্থানরত এই বিলাতি নারীরা ছিলেন ঠিক আমাদের মতই রক্তমাংসের মানুষ। বিভিন্ন রকম ছল-চাতুরী, লােভ-হিংসা-বিদ্বেষ, কাম-প্রেম-ভালােবাসায় তাদের জীবন ছিল সিক্ত। এক চিলতে সুখের খোজে এই বিলাতি নারীরা যখন ভারতে পারি জমান তখন তাদের চোখ ভরা ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন কারাে জীবনে সত্য হয়ে ধরা দিয়েছিল আবার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে গিয়ে কেউ কেউ জীবনসংগ্রাম থেকে ছিটকেও পরেছিলেন। তবে এ কথা বলা যায় যে, তাদের জীবন ছিল নানান মাত্রায় বৈচিত্রতায় ভরপুর। ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীরা গ্রন্থটিতে ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীদের জীবন চিত্রটি অঙ্কন করার চেষ্টা হয়েছে।
"আমার জন্ম হয় ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তারিখে। আমার আব্বার নাম শেখ লুৎফর রহমান। আমার ছোট দাদা খান সাহেব শেখ আবদুর রশিদ একটা এম ই আর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের অঞ্চলের মধ্যে সেকালে এই একটা মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল। পরে হাইস্কুল হয়, সেটি আজও আছে। আমি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে লেখাপড়া করে আমার আব্বার কাছে চলে যাই এবং চতুর্থ শ্রেণিতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হই। ... ১৯৩৪ সালে যখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে কলকাতার বড় বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্য, এ কে রায় চৌধরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আমার এইভাবে চলল। ... ... চোখের চিকিৎসার পর মাদারীপুরে ফিরে এলাম, কোনো কাজ নেই। লেখাপড়া নেই, খেলাধুলা নেই, শুধু একটা মাত্র কাজ, বিকালে সভায় যাওয়া। ...