BNSP0415
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেই ধীরে ধীরে বিদেশে যেতে শুরু করে বাংলাদেশীরা। মানুষ যখন বিদেশে যায়, বাইরে যাবার একটা চিন্তন। ডাকত থাকেই, থাকে আমন্ত্রণ ও প্রয়ােজন। কারও কারও থাকে দেশভ্রমণের নেশা। বাংলাদেশী এই প্রায় পঞ্চাশ বছরে, পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আজ এক কোটির উপরে। বেশির ভাগই স্থায়ীভাবে বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। দেশ ভিন্ন হলেও, এদের পরিচয় বিশ্ববাঙালি। দেশ ভিন্ন কিন্তু ভাষা এক, 'বাংলা'। ভিন্ন সংস্কৃতি, কিন্তু ঘরে-বাইরে-অন্তরে, জাগরণে-নিদ্রায় বাংলা-বাস সর্বসময় বিপুলভাবে সংবেদনশীল হয়ে রয়। বাংলার সরােবর অতল ও বিশাল এবং উষ্ণ প্রবাহে চঞ্চল। চঞ্চল উত্তর আমেরিকাতেও। স্বাধীনতার পরপর আমেরিকায় বাংলাদেশির আগমন হাতে গােনার পর্যায়ে থাকলেও, আশির দশকের শেষের দিকে দলে দলে, বিভিন্ন কারণে ও কৌশলে, এ দেশে আসতে শুরু করে। তারপর নব্বইয়ের গোঁড়ায় আগমন-আগলটি অনেকটা পুরােপুরিই খুলে যায়। একেবারে শুর দিকে যারা এসেছেন তাদের যাত্রাপথের সংগ্রহে ছিল সংশয় আর নিঃসঙ্গতা; ভিন দেশে টিকে থাকার কৌশল অজানা; ভিন ভাষা তখন শুধু শব্দ দেয়, কোনােপ্রকার ভাব প্রদান করে না। কিন্তু, যেহেতু সে জানে তার আকুতি-বিকুতির ভাষা রক্তস্নাত, ভাষা-সংগ্রামের মাধ্যমে সে চিনে নিয়েছে জীবন সংগ্রামের পথ, সেহেতু, বুকের আরশিতে প্রতিক্ষণ জ্বলে ওঠে সেই ভাষা মর্মে ও বর্ণে, ‘সাহস' হয়ে ওঠে তখন তার তাৎক্ষণিক অস্ত্র, মােকাবেলার। প্রতিকূলতার কাছে আপাত বিবেচনায় সে দুর্বল হলেও, তার বাঁচার জিজ্ঞাসা, বিস্ময়, আশী, সংস্কৃতির-প্রভেদঅভিব্যক্তি রূপান্তরিত হয় সংগ্রামী অভিনিবেশে। বৈরী পরিবেশে এই অভিনিবেশ বেঁচে থাকে প্রতিনিয়ত।