কাবাঘর নির্মাণের পর ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আরও অনেক দিন বেঁচে ছিলেন। সারা জীবনে আল্লাহ তাঁকে অনেকবার পরীক্ষা করেছিলেন। সেই যে আগুনে ফেলে দেওয়া, নিজের একমাত্র ছেলেকে মরুভূমিতে রেখে আসা, নিজের ছেলেকে কুরবানি দেওয়া... ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রতিটি পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালোভাবে পাশ করেন। তিনি আল্লাহর সব আদেশ পালন করেছেন। কখনো কোনো হুকুম মানতে দ্বিধা করেননি। প্রশ্ন করেননি। তাইতো তিনি হয়েছেন আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বান্দা। তাঁর আরেক নাম খলিলুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু। আল্লাহর সব আদেশ মেনেছেন বলেই তিনি আল্লাহর এত প্রিয় হতে পেরেছেন। তাই আমরাও চেষ্টা করব, আল্লাহর সব আদেশ মানার জন্য। আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে দূরে থাকার জন্য। আর আল্লাহর পথে চলতে গেলে অনেক দুঃখ-কষ্ট আসবে, অনেক পরীক্ষা আসবে। কিন্তু আমরা যদি সব পরীক্ষায় ধৈর্য ধরে পাশ করতে পারি, তাহলে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মতো আল্লাহ আমাদের ওপরও খুশি হবেন।
আমরা প্রায় খুব হতাশ হয়ে যাই। ভাবি, আমার মতো দুঃখী আর কেউ নেই। অথচ দেখ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা জীবন কত কষ্ট করেছেন! অল্প বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছেন। তাঁর দেশের মানুষ তাঁর ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। নির্যাতন করেছে। লোকেরা তাঁর গায়ে পাথর ছুড়ে মেরেছে। যুদ্ধের ময়দানে তাঁর দাঁত ভেঙে দিয়েছে। তবুও তিনি কখনো হতাশ হননি। ন্যায়ের পথ থেকে, সত্যের পথ থেকে একটুও পিছু হটেননি। তিনি সারা জীবন সত্য কথা বলেছেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন। আমরা চেষ্টা করব ঠিক তাঁর মতো হতে, তাঁর মতো করেই জীবন গড়তে। আমরা যদি নবিকে ভালোবেসে তাঁর অনুসরণ করতে পারি, তাঁর মতো জীবন গড়তে পারি, তাহলে আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি হবেন। দুনিয়ার জীবনে আমাদের কোনো হতাশা থাকবে না। দুঃখ থাকবে না।
বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনে অবস্থিত। কাবা শরিফের পরে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেদিক থেকে এই মসজিদ পৃথিবীর দ্বিতীয় মসজিদ। মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান... সবাই এই মসজিদকে অত্যন্ত সম্মান করে। বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। তোমরা কি জানো কিবলা কি? কিবলা হলো- যার দিকে ফিরে মানুষ নামাজ আদায় করে। কাবা শরিফের আগে মুসলমানরা এই মসজিদের দিকে ফিরে নামাজ পড়তেন। পরে আল্লাহ মুসলমানদের কাবা শরিফের দিকে ফিরে নামাজ পড়ার আদেশ দেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের মর্যাদা অনেক। তিনটি মসজিদে নামাজ পড়লে অন্য সব মসজিদের চেয়ে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। সে মসজিদগুলো হলো- ১. মসজিদে হারাম অর্থাৎ কাবা শরিফ, ২. মদিনার মসজিদে নববি অর্থাৎ যে মসজিদে আমাদের নবি নামাজ পড়তেন এবং ৩. বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদে আকসা। সোলায়মান আলাইহিস সালামের সময়ে বায়তুল মুকাদ্দাস নতুন করে বানানো হয়। জিনেরা অনেক সময় নিয়ে মসজিদের কাজ করে।
মুসা আলাইহিস সালাম এতগুলো সাপ দেখে কিছুটা ভড়কে গেলেন। আল্লাহ তখন মুসা আলাইহিস সালামকে বললেন- ‘মুসা! ভয় পেয়ো না। তোমার হাতের লাঠিটা ছেড়ে দাও। এটা সাপ হয়ে বাকিগুলোকে গিলে ফেলবে। জাদুকরদের করা জাদু একধরনের প্রতারণা মাত্র। নিশ্চয় জাদুকরেরা তোমার ওপরে বিজয়ী হতে পারবে না।’ মুসা আলাইহিস সালাম তা-ই করলেন। তিনি হাতের লাঠি ছেড়ে দিলেন। মুহূর্তেই লাঠিটা বিরাট বড়ো এক অজগর সাপ হয়ে গেল। সে সাপ মাঠে থাকা আর সব ছোটো সাপ, বড়ো সাপ, সাদা সাপ, রঙিন সাপ- সবগুলোকে হা করে গিলে ফেলল। মাঠে থাকা মানুষেরা সব থ হয়ে গেল। নিজের চোখকে কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। যা দেখল, একি সত্যি নাকি স্বপ্ন? এ যে অবিশ্বাস্য! সারা মাঠ চুপ। কারও মুখে কোনো কথা নেই। সবাই যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে। বেশি অবাক হলো জাদুকরেরা। তারা ভাবতেই পারেনি, এমন কিছু ঘটবে। তারা ভেবেছিল, তারা সব নামকরা জাদুকর। মুসা আলাইহিস সালাম তাদের কাছে নস্যি। তারা হেসে-খেলেই মুসা আলাইহিস সালামকে হারিয়ে দেবে। আর অনেক অনেক পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
চোখের পলকে বিশাল বিশাল আগুনের গোলা এসে পড়তে লাগল তাদের মাথার ওপরে। কিছু মানুষ সেখানেই পুড়ে মরল। কেউ ছুটল তাদের বাড়ির দিকে। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ভাবল- যাক, বিপদ কেটে গেছে। এমন সময় তীব্র এক শব্দ হলো। তারপর দুলে উঠল মাটি। ভয়ংকর এক ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি সব ধসে পড়ল। মানুষগুলো সব যার যার নিজের ঘরে উপুড় হয়ে মারা গেল। ধ্বংস হয়ে গেল গোটা শহর। শোয়াইব আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথের ঈমানদারগণ আগেই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাই তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এভাবেই আল্লাহ ‘মাপে কম দেওয়া’ জাতিকে ধ্বংস করলেন। আমাদের নবি একবার আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন। বলেছিলেন-‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উম্মতকে আগের জাতিগুলোর মতো একেবারে ধ্বংস করে দিয়ো না।’ আল্লাহর নবি যদি এই দুআ না করতেন, তাহলে হয়তো যারা ওজনে কম দেয়, তাদের আল্লাহ দুনিয়াতেই আজাব দিতেন। কঠিন শাস্তি দিতেন। দুনিয়াতে আজাব না হলেও পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে। কেবল তওবা করলেই তারা এই শাস্তি থেকে ক্ষমা পেতে পারে।
বর্তমানে কিছু লোক আছে, যারা নিজেদেরকে ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী দাবি করে। তাদের কেউ কেউ মনে করে, ঈসা আলাইহিস সালাম মানুষ ছিলেন না। তিনি মূলত নিজেই খোদা ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কেউ কেউ বলে, তিনি ছিলেন আল্লাহর ছেলে (নাউজুবিল্লাহ)। এই লোকগুলোকে বলে খ্রিষ্টান। তারা ক্রুশকে সম্মান করে। ক্রুশের পূজা করে। কিয়ামতের আগে আগে ঈসা আলাইহিস সালাম আবার পৃথিবীতে নেমে আসবেন। মুসলমানদের পক্ষ হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। তাদেরকে হারিয়ে দেবেন। ভেঙে ফেলবেন সব ক্রুশ। প্রমাণ করে দেবেন, খ্রিষ্টানরা তাঁকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। তিনি আল্লাহও নন, আল্লাহর ছেলেও নন।