আমাদের সবুজ উপত্যকায় মাঝে মাঝে কুয়াশার মতো ঘন হয়ে নেমে আসে সর্বগ্রাসী এক অদ্ভুত অন্ধকার। সেই অন্ধকার ঝেঁকে বসে আমাদের নীলাভ আকাশে। হৃদয়-প্রকৃতিজুড়ে শুরু হয় এক মহা দুর্যোগ। মায়ের গর্ভ হতে বিশ্বাসের যে অঙ্কুর আমরা বুকে ধারণ করে বেড়ে উঠি, দুর্যোগের ঘনঘটায় সেই অঙ্কুর টালমাটাল হয়ে ওঠে। এরপর, মাঝে মাঝে কেউ আলো হাতে আবির্ভূত হয়। ডুবে যাওয়া নগরীতে এক টুকরো আলো এসে পড়ে। সেই আলোয় বিলীন হতে থাকে অন্ধকার। বিশ্বাসের যে আদিম চারাগাছকে তারা উপড়ে দিতে চেয়েছিল, সেই চারাগাছ ধীরে ধীরে বটবৃক্ষ হয়ে তাদের মাথার ওপর বিরাজমান হয়। সেই অন্ধকার কাটাতে এই তল্লাটে যে ক'টি চরিত্র বুক পেতে দাঁড়িয়েছে, আরজু তাদের একজন। তার যুক্তি, তর্ক আর তথ্যের বাহারে সে বের করে আনে ধ্রুব সত্যকে। এভাবেই আরজু ছুটে চলে তার গন্তব্যে। কোথায় গিয়ে থামবে সে?
আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের মধুরতম একটি মাস হচ্ছে রামাদান। এ মাসে সকল শ্রেণির সকল বয়সী মুসলিম দ্বীনের প্রতি অনেক বেশি উৎসাহী এবং উদ্যমী হয়ে ওঠে। এতে করে শরিয়তের বিধি-নিষেধগুলাে মেনে চলা তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া, রামাদান মাসে শয়তানের পায়ে শেকল পরানাে হয়। তাকে বন্দি করে রাখা হয় কারাগারে। এভাবে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য দৈনন্দিন ইবাদতগুলাে সম্পন্ন করা সহজ করে দেন। রামাদানে সিয়াম রাখা প্রতিটি মুসলিম নরনারীর জন্য ফরজ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তােমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তােমাদের পূর্ববর্তী লোেকদের ওপর, যেন তােমরা তাকওয়াবান হতে পারাে।”[1] কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে মহিমান্বিত এ মাসটিকে কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যের মাসে পরিণত করার অপচেষ্টা চালানাে হচ্ছে। সিয়াম পালনের মূল উদ্দেশ্য সবাই এখন ভুলতে বসেছে। তাকওয়া অর্জনের পরিবর্তে মূল লক্ষ্য যেন জমকালাে পােশাকের হরদম বেচাকেনা, বাহারি খাবার তৈরির হীন প্রতিযােগিতা, ইফতার ও সাহারি পার্টির মাধ্যমে ইবাদতে জল ঢালা এবং নানাবিধ হারাম কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করে দেওয়া। অথচ হওয়ার কথা ছিল এর উলটোটা। ভােগবিলাসী জীবন নয়; বরং সংযমী হওয়ার মাস হচ্ছে রামাদান। বছর ঘুরে সেই মাসটি আবারও কড়া নাড়ছে আমাদের দুয়ারে। হতে পারে এই রামাদানের পর আর কোনাে রামাদান আসবে না জীবনে। হতে পারে নিজেকে বদলানাের সুযােগ আর হবে না কোনােদিন। জীবনের ডায়েরি থেকে আর কোনাে মহিমান্বিত মাস যেন হারিয়ে না যায় বিনা আমলে, বিনা ইবাদতে। তাই এ রামাদান থেকেই শুরু হােক আমাদের সর্বাধিক প্রচেষ্টা, সকল প্রস্তুতি। ইলমে, আমলে আমরা নিজেদের এগিয়ে রাখতে চাই। জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকতে চাই। আশা করি, সেরা হােক এবারের রামাদান গ্রন্থের লেখাগুলাে পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, তাদের চিন্তার জগতে আলােড়ন সৃষ্টি করবে এবং রামাদানের উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন করে ভাবাতে উদ্বুদ্ধ করবে, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ যেন এই রামাদানকে আমাদের জীবনের শেষ রামাদান না করেন এবং ইবাদত ও উপলব্ধির মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নব উদ্যমে জীবন শুরু করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
বিচিত্র মানুষের বসবাস আমাদের চারপাশে। চলার পথে তারা গল্প করে, গল্প বানায়, গল্প গাঁথে। সেসব গল্পে উঠে আসে জনমানুষের কথা, জীবনের কথা। প্রাণ এবং প্রণােদনার কথা। উৎসাহ এবং উদ্দীপনার কথা। কিছু গল্প ভাবায়, অনুপ্রেরণা দেয়, শক্তি যােগায়। আমাদের আহ্বান করে কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়ার। জীবনকে নতুন করে গড়ে তােলার। সেরকম কিছু গল্প দিয়েই সাজানাে নানান রঙের মানুষ।
যখন হৃদয় হয় আর্ত, তৃষ্ণার্ত। যখন হৃদয় আকাশে নেমে আসে চৈত্রের দাবদাহ। যখন হৃদয়-জমিন মরুভূমির মতোন হাহাকার করে, তখন কুরআন যেন সেখানে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামে। উত্তপ্ত আকাশে একখণ্ড মেঘের মতো। কুরআন যেন হৃদয়ের জন্যই রচিত, অথবা হৃদয়ের জন্যই কুরআনের আগমন। হৃদয়ের সমস্ত আকুলতা-ব্যাকুলতা, সমস্ত আকাঙ্খার স্রোত যেন কুরআনের কাছে এসে থেমে যায়। কুরআনের শব্দেই হৃদয় ধ্বনিত হয়। কুরআনের ঝংকারে মধুর কল্লোল জেগে ওঠে হৃদয় সমুদ্রে। কুরআন যেন কোনো মোহিত গানের সুর যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় পরম আবেশে। সেই আবেশে হৃদয়ের কথাগুলো খুঁজে পায় প্রাণ। এমন কথাগুচ্ছের সম্মিলনের নাম ‘কুরআনের সাথে হৃদয়ের কথা’।
‘আরবি রস’ একটি মজার বই। আরবি সাহিত্যে কত অসাধারণ রস। লুকিয়ে আছে তার সাথে বাঙলাভাষী পাঠককে পরিচিত করার প্রয়াস । আরবি সাহিত্য শুধু নয়, আরবি ভাষাটাও খুবই মজার৷ এই মজাটা । আয়ত্তে আনার কিছু কলকজা এই বইয়ের গল্প থেকে পাওয়া যাবে । ‘আরবি রস’ সবার জন্যে। এই রস আস্বাদনের জন্যে আরবি ভাষা জানা। কিংবা আরবি ভাষার শিক্ষার্থী হওয়া আবশ্যক নয়৷ ‘আরবি রস’-এর। হাঁড়ি সবার জন্যে উন্মুক্ত৷ এ কথাও স্মর্তব্য, সবার উপযােগী করে । রচিত হলেও এটি কোনাে চটুল কৌতুকগ্রন্থ নয়। ভাষা-সাহিত্যের বিচিত্র-বর্ণাঢ্য স্বাদ উপভােগে অভ্যস্ত বা আগ্রহী পাঠকবৃন্দ ‘আরবি। রস’-এর সাথে বেশ সুন্দর সময় কাটাতে সক্ষম হবেন।
ক্ষণিকের এ দুনিয়ায় সুখী হবার জন্য কতই না তোড়জোড় আমাদের! সুখের খোঁজে আমরা ঠিক যেন যন্ত্রের মতো ছুটে চলি সারাদিন সারাবেলা। বিলাসবহুল বাড়ি, দৃষ্টিনন্দন গাড়ি আর অফুরান অর্থকড়ি—সত্যিই কি আমাদের জীবনে সুখ এনে দিতে পারে? না, কখনোই নয়। দুনিয়া কখনো পরম সুখপ্রাপ্তির স্থান নয়। আসল সুখের ঠিকানা একমাত্র জান্নাত। কেবল সেখানে গেলেই ঘুচে যাবে সব অভাব-অনটন, দূর হবে সকল দুঃখ-কষ্ট আর না-পাওয়ার বেদনা। কী আছে সেই জান্নাতে? কেন জান্নাত এত বেশি আকাঙ্ক্ষিত? কীভাবে যাওয়া যাবে সেখানে? কারা যেতে পারবে? কারা পারবে না?—এসব নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন ‘ওপারেতে সর্বসুখ’ বইটি।