দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসায় মস্তিস্ক। কিন্তু মস্তিস্কের ওপরে শক্তিশালী কোন জিনিষ থাকে, যা হল আমাদের হৃদয়! তাইতো দিনশেষে অন্য কোন বিরাম চিহ্ন নয়, বসিয়ে দিলাম হৃদয়বোধক চিহ্ন। তেরটি গল্প নিয়ে এ বছর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে আমার বই- ‘হৃদয়বোধক চিহ্ন’। এই বইয়ের বেশীরভাগ গল্পের পটভূমিতে যেমন নিউইয়র্ক শহর আছে, আছে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের কথাও। এসেছে করোনা মহামারীকাল, এসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, আছে রহস্য রোমাঞ্চ, প্রেম, ব্যর্থতা, মিল আর অমিলের গল্প। আমাদের ব্যর্থ আকাঙ্খার মাঝে কুসুমিত স্মৃতি হয়ে থাকা কিছু মুহূর্ত এই গল্পের বিষয়বস্তু।
ভাল-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর এবং সুখ-দুঃখ হাত ধরাধরি করে চলে জীবনের বাঁকে বাঁকে। এভাবে জীবন থেকে যেন খুব দ্রুতই বিদায় নেয় প্রতিটি দৃশ্যপট। অনেকটা ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আকাশের অসংখ্য তারার অদৃশ্য হবার মত। দেশান্তরী হয়েছি সেই কবে! দুই যুগ আগে। এক জীবনের হিসেবে অনেক সময় যদিও, তবুও চোখ বন্ধ করলে স্পষ্টই যেন দেখতে পাই সব আজো। মনে হয় এইতো সেদিনের কথা। এভাবেই বুঝি জীবনের সব বেলা ফুরায়। ছোটবেলা, বড়বেলা কিংবা বুড়োবেলা। অতঃপর বিদায়বেলার পালা আসে যেন দ্রুতই। এই বিদায়ের আগ অবধি আমাদের চারপাশে নিয়ত ঘটে যাওয়া নানান চড়াই উত্রাই আর অনুভূতির গল্প নিয়ে রচিত অনুভূতির আকাশে তারার মেলা বইটি। লেখাগুলো আমার নিজের অনুভূতির আকাশ থেকে নেয়া হলেও মূলত বইটি পড়ার পর প্রত্যেক পাঠকের মনে হবে তাঁরই জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা। গল্পগুলো আমার, আপনার, এবং আমাদের সকলের।
'সান্তোরিনীর বেড়াল এবং আর্টিস্টে' সালেহা চৌধুরী বলেছেন— 'সব শিল্পীই কি তা-ই নয়! পৃথিবীর ভেতর আর-এক পৃথিবী, গ্রহের ভেতর আর-এক গ্রহ বানিয়ে সেখানেই বাস করেন সময়ে সময়ে। সেই নিজস্ব গ্রহে বিরাজ করে নিজস্ব চাঁদ-তারা-মিল্কিওয়ে।' ঠিক সান্তোরিনীর শিল্পীর মতােই পৃথিবীর ভেতর পৃথিবী বানিয়ে লিখে চলেছেন সালেহা চৌধুরী। যেখানে আছে নিজস্ব হ্রদ, পাখিরা, গাছেরা, প্রজাপতিরা। মানুষ সৃষ্টির নিজস্ব কারখানায় নতুন নতুন মানুষ তার ল্যাপটপ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসে। এখন তাঁর প্রকাশিত গল্প-সংখ্যা প্রায় দুশাে। 'আবুল ইসহাক এবং প্রভাতের পাখি' বইটিতে আছে চোদ্দটি আনকোড়া গল্প। মানুষ, ভালােবাসা, জীবনযাপন এই তাঁর গল্পের প্রধান বিষয়। মাকড়সা-সুতােয় তৈরি ভালােবাসা একটু টানে ছিড়ে যেতে চায়। আবার জীবনের লবণাক্ত স্বাদের মতাে জীবনকে অর্থপূর্ণ ও সহনীয় করে। এ ছাড়াও আমাদের জীবনের নানা রংছুট এসবে তিনি কতটা নিপুণ সে-দায়িত্ব পাঠকের হাতেই থাক।