জাপান -বাংলা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শতাধিক বছরের পুরনো । ১৯০২ সালে জাপানি মনীষী ওকাকুরা তেনশিন বৃটিশ-ভারতের রাজধানী কলিকাতায় যান এবং স্বামী বিবেকানন্দ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,ভগিনী নিবেদিতা,অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সঙ্গে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন । সেই থেকে শুরু জাপানি ও বাঙালি জাতির মধ্যে প্রত্যক্ষ শিক্ষা,সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভাববিনিময়। জন্ম হয় বহু ঘটনার। ১৯১২ সালে ঢাকার মেয়ে হরিপ্রভা মল্লিক তাঁর জাপানি স্বামী তাকেদা উয়েমোনসহ জাপানে আসেন ।১৯০৮ সালে জাপানি বৌদ্ধভিক্ষু কিমুরা রিউকাল চট্টগ্রামে যান পালি ভাষা শেখার জন্য । ১৯১৫ সালে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু,১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসু,১৯৪৬ সালে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালে আসন গ্রহন করেন বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল এবং ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্বে ও পরে অনেক ওকাকুরা-রবীন্দ্রভক্ত বিশিষ্ঠ জাপানি বাংলা অঞ্ছলে যান । বস্তুত,পূর্বজদের ধারাবাহিকতা ধরেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাপানি রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে জাপান বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর আহবানে। কিন্তু সেই সম্পর্কের ইতিহাস বাঙালিদের কাছে প্রায় অজানাই রয়ে গেছে । সেই অজানা ইতিহাসেরই সংক্ষিপ্ত রূপ এই গ্রন্থ ।
"আমার জন্ম হয় ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তারিখে। আমার আব্বার নাম শেখ লুৎফর রহমান। আমার ছোট দাদা খান সাহেব শেখ আবদুর রশিদ একটা এম ই আর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের অঞ্চলের মধ্যে সেকালে এই একটা মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল। পরে হাইস্কুল হয়, সেটি আজও আছে। আমি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে লেখাপড়া করে আমার আব্বার কাছে চলে যাই এবং চতুর্থ শ্রেণিতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হই। ... ১৯৩৪ সালে যখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে কলকাতার বড় বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্য, এ কে রায় চৌধরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আমার এইভাবে চলল। ... ... চোখের চিকিৎসার পর মাদারীপুরে ফিরে এলাম, কোনো কাজ নেই। লেখাপড়া নেই, খেলাধুলা নেই, শুধু একটা মাত্র কাজ, বিকালে সভায় যাওয়া। ...