১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হবার পর স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্ন ছিল একটি নতুন দেশ গড়ে উঠবে । দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছে তার বিপরীত । বার বার রক্ত রঞ্জিত হয়েছে দেশ। দেশ গড়ার স্বপ্ন হয়েছে ধূলিসাৎ। আক্রান্ত হয়েছে স্বাধীনতা, সংবিধান, গণতন্ত্র । বিপন্ন স্বাধীনতা আর বিধ্বস্ত গণতন্ত্রের ওপর চেপে বসেছে কখনাে সামরিক শাসন কিংবা স্বৈরশাসন অথবা অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ । যা আমাদের পঁচিশ বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে দিয়েছে । এদেশ আজ যেন জীর্ণশীর্ণ। পুষ্টিহীন যুবক। | মাও সেতুং বলেছিলেন, “যুদ্ধ হচ্ছে রক্তপাতময় রাজনীতি, আর রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতহীন যুদ্ধ।'... বাংলাদেশের অসংখ্য লােমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবার কথা সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে । আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সভ্যতা, সাংস্কৃতিক সবদিক দিয়েই এদেশ মােটেও অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। এই না পারার পেছনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড প্রথম এবং প্রধান অন্তরায়। কারণ একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলাে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর দারুণভাবে | ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমাদের উন্নতি-উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতি গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ১৪৫টি লেখা সন্নিবেশিত হয়েছে। বিষয়-অনুযায়ী লেখাগুলােকে আটটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু, প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা, ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিচারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিশ্বরাজনীতি, প্রসঙ্গ করােনা ইত্যাদি। এই লেখাগুলােতে লেখকের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বস্তুত আটটি পর্ব নিয়ে পৃথক পৃথক গ্রন্থই প্রকাশ করা যেতাে, কিন্তু পাঠকের কথা চিন্তা করেই এক গ্রন্থে এতগুলাে বিষয়কে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলাে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিশদ আলােচনা। এ ছাড়া ‘ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি যেসব সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন সেগুলােও অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে যে-চারটি লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই লেখাগুলােতে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র তাে বটেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও উপস্থাপিত হয়েছে।
স্বদেশ ছাড়াও বিদেশ থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ পেয়েছে দশটি দেশ থেকে। দেশগুলো হলো : ব্রাজিল, ভারত, তুরস্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, কানাডা, আমেরিকা এবং জাতিসংঘ শ্রদ্ধা জানিয়ে দশটি স্মরণীয় স্মারক ডাকটিকিট বের করে।
"তাকে আমি দেখেছি আমার কৈশোরের অবাক চোখে। তাকে আমি দেখেছি তার রাজনৈতিক উত্থানের উত্তাল সময়ে। তাকে দেখেছি তার ঝঞ্ঝামুখর সংগ্রামী দিনগুলিতে। দেখেছি বাঙালিদের একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুদয়ে। দেখেছি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ হিসাবে। আমি দেখেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেখেছি আমার একান্ত চোখে। এ দেখা একান্তই আমার নিজের দেখা। তাকে দেখেছি ঘনিষ্ঠভাবে খুব কাছে থেকে, দেখেছি দূর থেকে। নানা কারণে ছোটবেলা থেকেই আমার সুযোগ হয়েছে তার কাছাকাছি কিংবা আশপাশে যাওয়ার। প্রথমে পারিবারিকভাবে, পরে সাংবাদিকতা পেশার কারণে। নানাভাবে তাকে দেখেছি। বলতে পারি, কর্মমুখর সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি অন্য এক শেখ মুজিব আমার স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছেন। আমি আমার দেখা সেই অন্য এক শেখ মুজিবের কথাই এখানে বলতে চাই...
এই গ্রন্থের জন্য বন্ধুস্থানীয় তিন বাংলাদেশি ব্যারিস্টারের কাছে নূরের ব্যাপারে ‘আইনের ফাঁকে’র বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীর আবেদন চার চার বার বাতিল হয়েছে। ক, সেই ধারায় তাে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। আবার অন্য বিধানে আছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তকে কানাডা থেকে ফেরত দেয়া হবে না! স্ববিরােধী এই বিধান সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী? কিন্তু আমাদের খ্যাতিমান আইনজীবীরা সাড়া দেননি। বরং তাঁরা আইনের জটিলতা তুলে ধরেছেন। অথচ ইচ্ছে করলে, তাঁরা কেউ কেউ এ ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ে লড়তে পারতেন, যা ইতিহাসের পাতায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত।