১৭৮০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একটা সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী সামাজিক বিপ্লব বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে। আর এই ধরনের পরিবর্তন মানবসভ্যতার ইতিহাসে আগে দেখা যায় নি। এর ফলে বদলে যায় পৃথিবীর বাহ্যিক চেহারা, মৌল কাঠামোতে আসে পরিবর্তন, মানুষের জীবনাচরণ ও জীবনযাপনরীতিতে আসে ভিন্নতা। ঐতিহাসিকগণ এরপর থেকে 'বিপ্লব' শব্দটিকে নানাভাবে ব্যবহার করছেন, কখনো তিরস্কার কখনো প্রশংসা হিসেবে। কিন্তু একমাত্র নবপ্রস্তরযুগীয় সামাজিক পরিবর্তন ছাড়া ইতিহাসে বিবৃত এই সময়ের পরিবর্তনই সবচেয়ে গুরুত্ববহ। ইতিহাস ও অর্থনীতির ভাষায় এই বিপ্লবকেই বলা হয় শিল্পবিপ্লব। শিল্পবিপ্লবের আদ্যোপান্ত নিয়েই এই বই।
প্রায় তিরিশ বছর আগে শামস মমীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'চিতায় ঝুলন্ত জ্যোৎস্না' প্রকাশিত হওয়ার পর সলিমুল্লাহ খান তাঁকে শনাক্ত করেন এক ভিন্ন স্বরের কবি হিশেবে। তিতাশ চৌধুরী বলেন, তাঁর কবিতা কখনো রোমান্টিক, কখনো বা প্রতিবাদী। মমীন তাঁর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোতে অবশ্য ভিন্ন বাঁক নিয়েছেন। এই বাঁক পরিবর্তনের মাঝেও কোথায় যেন একটি আবৃত্তি রয়ে গেছে তাঁর কবিতায়। সলিমুল্লাহ খানের নবতর বিশ্লেষণে সে কথাই শুনেই পাই: নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা ইতিহাসের উপলব্ধির সহিত মিলাইয়া দিবার ঢের উদাহরণ আছে মমীনের কবিতায়।' একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায় আহমাদ মাযহারের লেখায়। মমীনের কবিতাকে ব্যবচ্ছেদ করে তিনি বলেন, মার্কিনদেশে দীর্ঘ বসবাসের ফলে তাঁর কাব্যাদর্শ ও কাব্যনির্মিতিতে বাংলাদেশের জীবনাচারের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা চৈতন্যও যুক্ত হয়েছে সমানভাবে। এ সংকলনে আরো আছে সিকদার আমিনুল হক, মতিন বৈরাগী, আবেদীন কাদের, চঞ্চল আশরাফ, রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ কবি ও প্রাবন্ধিকের নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ। এসব রচনা শামস আল মমীনের কবিতা পাঠে অধিকতর সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আবেদীন কাদেরের প্রবন্ধ যেমন কবিতায় আর্দ্র তেমনি শব্দঝংকারে প্রসাদগুণ সম্পন্ন। তাই বলে কবিতাগুণ তাঁর রচনাকে ভাব থেকে বিচ্যুত করে না মোটে। লেখক হিসেবে তিনি একেবারে ঠিক স্বল্পপ্রজ নন; যদিও বই প্রকাশে তাঁকে স্বল্লোদ্যমই বলা যায়। মাঝে কয়েক বছরের বিদ্যায়তনিক উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যস্ততা গ্রন্থোদ্যম থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল! তাঁর লেখার অন্তর্বস্তু তত্ত্বের অনুকূল কিন্তু স্বাদ কথাসাহিত্যিকতায় রসঘন। পূর্বপ্রকাশিত প্রবন্ধ-সংকলন দ্বীপান্তরের গান বিদেশি সাহিত্যের আনন্দ সন্ধান হলে বড় বেদনার মতো বেজেছ যেন ব্যক্তি ও তাঁদের কীর্তির অর্কেস্ট্রা। এরই ধারাবাহিকতায় এই শ্রাবণের বুকের মাঝে ব্যক্তির কর্মধারার বর্ণিল ঝর্ণা। পাণ্ডিত্য তথা তত্ত্ব তাঁর বহু সাধনায় অধীত সামগ্রী যা পরিকীর্ণ হয়ে আছে এই বইয়ের রচনারাজির চরণে, অন্তর্বয়নে। এই বই পড়লে পাঠকের মনে উপলব্ধ হবে প্রবন্ধের দার্শনিকতা কিন্তু উপভোগ্য হবে কথাসাহিত্যের রসধারা।