বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতার ঝুলি তার কাঁধে, তিনি ছুটছেন এক। ভূ-খণ্ড থেকে অন্য ভূ-খণ্ডে। সে-তাে অনেক পুরনাে। কথা, আজ, এখন, পঞ্চাশ পেরিয়ে এসে বদলে গেছে। তঁার দেখার চোখ। এখন এই পৃথিবীকে তিনি দেখেন। ধর্ম, বর্ণ, মতবাদ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ। আবাস হিশেবে। তিনি বলেন, নিজের জাত-ধর্মকে। ভালােবাসায় কোন দোষ নেই, অন্যের জাতকে ছােট। করাই অপরাধ। এটাই সাম্প্রদায়িকতা। তিনি এক । জাদুকরী ভাষায় পথ চলার গল্প বলতে বলতে আমাদের জানিয়ে দেন কোথায় কি অন্যায় হচ্ছে, এর থেকে। পরিত্রাণের কি উপায়। তাই তার গদ্য শুধু সুখপাঠ্যই। নয়, এই পৃথিবীর জন্য উপকারী। দাগচিত্র’ গ্রন্থে তিনি। দক্ষ চিত্রকরের মতাে অক্ষর, শব্দ, বাক্য দিয়ে নির্মাণ। করেছেন, অসাধারণ সব চিত্রকর্ম।
কবি শরীফ আস-সাবের লিখছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তিনি পাঠকের কাছে পৌঁছে গেলেও তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করলেও এবারেই তার প্রথম বই বাজারে এলো। মেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঠিকানা নিরন্তর এনেছে অন্যন্যা প্রকাশনী। ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে বইটি পাওয়া যাবে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনন্যা’র স্টলে। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন যাপন করা শরীফ আস-সাবেরের প্রবাস বেদনার ছাপ খুঁজে পাওয়া যাবে কবিতার বইটিতে।
দেশের আরাে অনেকের মতােই বাংলাদেশ থেকে ক্যানাজায় আসে কবির, দেশের আরাে অনেকের মতােই অন্যের পাসপাের্টে, অন্যের ছবিতে নিজের মুতু বসিয়ে, অন্যের নাম নিয়ে। বিদেশে স্থায়ী আবাস খুঁজতে যাওয়ার এমন পাকাপােক্ত ও পােপন বাণিজ্যিক ব্যবস্থা আছে। সংসার চালানাের জন্য দরকারি আয়ের অনিশ্চয়তা, জীবন চালানাের জন্য দরকারি পারিবারিক নিরাপত্তার অভাব, আর এক স্থায়ী অসহায়তাবােধ থেকে মুক্তি খুঁজতে দেশের আরাে অনেকের মতােই ক্যানাডায় এসে পৌছায় কবির। দেশের আরাে অনেকের মতােই কোনাে অতিরিক্ত উচ্চাশার তাড়নায় কবির বিদেশে আসেনি। দেশে তার স্ত্রী শিউলি এক শিশুর হাত ধরে আর-এক শিশুকে গর্ভে নিয়ে নিন গুজরান করে যাচ্ছে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই নারীর বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া কন্টকাকীর্ণ। উপরন্তু তিনি হাসি নিজের মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাকে নানারকম সামাজিক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তবু তার অগ্রযাত্রায় পথিকৃতের ভূমিকা নেন মেরি ওয়েলস্টনক্রাফ্ট ও বেগম রোকেয়াসহ অন্যান্য প্রতিবাদী নারী নেত্রীবৃন্দ। নাজনীন সীমন রচিত এই উপন্যাসে প্রথম থেকেই একজন প্রতিবাদী নারীকে বেড়ে উঠতে দেখা যায়: পটভূমি পূর্ব থেকে পশ্চিম। জীবনের পরতে পরতে জমে থাকা শ্রম ও বিড়ম্বনাকে তিনি শক্তিশালী কলমে তুলে আনতে সক্রেটিস, পেটো, নিৎসে, জন লক, ও হুমায়ুন আজাদসহ বিশিষ্ট মনীষীদের দ্বারস্থ হন। ফলত উপন্যাসটি ব্যথা, হারানোর বেদনা, বেড়ে ওঠার সংগ্রাম, নারীর একাকিত্বের আখ্যানের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া গল্প বলার ঢং ও বুনন সৌকর্যে তিনি সর্বদাই স্বতন্ত্র। তাঁর উচ্চারণ ভাবায়, অনুপ্রাণিত করে, নিয়ে যায় শিল্পের কাঙ্ক্ষিত কন্দরে। শিবনারায়ণ রায়ের 'জিজ্ঞাসা' পত্রিকায় গল্প লেখার মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ভাষা বিন্যাস ও পটভূমি নির্মাণে তিনি অনেকাংশেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হাসান আজিজুল হকের অনুসারী। ন্যাংটো সমাজের নিচু তলার মানুষের সাথে উঁচু তলার মানুষের প্রভৃ-ভৃত্য সম্পর্ক, স্বামীর চোখে স্ত্রীর নিম্ন বর্গীয় অবস্থান, পুরুষের থাবায় নারীর বিপদগ্রস্ত বিপর্যয়ের চিত্রায়নে সীমন এই উপন্যাসে ভিন্ন মাত্রা সংযোজনে সক্ষম হয়েছেন। আমরা 'বৃত্তের বিষাদ'-এর বহুল প্রচার কামনা করছি।
উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ। জানা, দেখা টেন ডাউনিং স্ট্রিটে কে বসেন। লন্ডনের রাস্তা ধরে চলতে চলতে সেই উত্তরের বাইরে দেখা হয়ে গেল অনেক কিছুই। হলিউড সাইন ঝোলানো পাহাড়টার যে আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, না দেখলে অনেকেই হয়তো বুঝতেই পারবেন না। তাহলে কিভাবে তৈরি হচ্ছে বিশ্ব কাঁপানো সব চলচ্চিত্র? সামনে আসবে এমন প্রশ্ন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের নির্বাচন, রাজনীতির খোলনলচে সামনে থেকে দেখার সুযোগ না পেলেও, বইটা পড়ে পাওয়া যাবে কিছু ধারণা। থাইল্যান্ডে প্রতারক; ভাবা যায়! এরপরও সুন্দর শ্যামদেশ। আবার থিম্পুর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কষ্টের হাহাকার। মৎস্যকন্যার দেশে এক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে কাছ থেকে দেখা, সাক্ষাৎকার নেয়ার অভিজ্ঞতার বয়ান মিলবে এতে। গ্রিক সভ্যতার ইতিহাস মোড়ানো। অ্যাক্রোপলিসের দেয়াল, আর ভ্যাটিকান সিটির ভেতরটা কেমন-অনুভূতিকে স্পর্শ করবে সেই ধারণা। পৃথিবী জোড়া আলোড়ন তুলে চির রহস্য নারী হয়ে থাকা মোনালিসা দর্শনের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ। জানা যাবে, হিরোশিমার কষ্ট, দুঃখ পৃথিবী থেকে আজও বিলীন হয়ে যায়নি।
আমেরিকার খ্যাতিমান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছিল; তখন তিনি গিয়েছিলেন কলকাতায়। সেখানে বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। তাদেরই একজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একদিকে পাকস্তানি বাহিনীর বর্বর হত্যা নির্যাতন, অন্যদিকে বীর বাঙালির প্রবল প্রতিরোধ। তার মধ্যেই অসংখ্য মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। তারা আশ্রয় নেয় প্রতিবেশি ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন শহরে। অ্যালেন গিন্সবার্গ সিদ্ধান্ত নিলেন শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে যাবেন। বন্ধু সুনীল ও আরও দু'জন সঙ্গীকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন তিনি। তখন সেপ্টেম্বর মাস। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে যশোর রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে অনেক কষ্টে বনগাঁ পেরিয়ে যশোর সীমান্তবর্তী এলাকায় পৌঁছান তাঁরা। পরিস্থিতি দেখতে যান আশপাশের শরণার্থী ক্যাম্পে। গিন্সবার্গ কথা বলেন শরণার্থী হয়ে আসা অনেকের সঙ্গে। এরপর নিউইয়র্কে ফিরে গিয়ে নভেম্বর মাসে তিনি লেখেন তাঁর কালজয়ী কবিতা 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'। অ্যালেন গিন্সবার্গের ঐতিহাসিক সেই কবিতার মূলভাবকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে বইটি। আর বইটির নামও নেয়া হয়েছে গিন্সবার্গের কবিতার শিরোনাম থেকেই। ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে একসঙ্গে তুলে ধরাই বইটির উদ্দেশ্য। আশা করছি পাঠকের ভালো লাগবে। হয়তো সংগ্রহে রাখতে চাইবেন অনেকে।
ইংরেজি তাে তার না বােঝার কিছু নেই কিন্তু ভাবনা ওই একসেন্ট নিয়ে। সেদিক থেকে নিহাই ভালাে বন্ধু হবে। এক ধরনের আপনজনও তাে সে। পরিচিত। ছেলে তাে প্রথম দিনেই কোনাে এক কমেডিয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে একসেন্টের সমস্যায় কি কি হয়েছে এই আমেরিকায়। বলেছে কোনাে এক মহিলা এয়ারপাের্টে নেমেছে। তাকে সিকিউরিটির লােকজন জিজ্ঞেস করল, কেন এসেছ? মহিলা জানাল, টুরিস্ট সে। কিন্তু ওরা শুনল টেররিস্ট। ব্যাস হাতকড়া।। আরেকজন নেমেছে বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি নিয়ে। তাকেও জিজ্ঞেস করুল, কি করতে এসেছ? সে বলল, স্যুট করতে। কি স্যুট করতে? বিশাল বিশাল বিডিং। ধর ধর করে তাকেও আটকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সে আসলে বলতে চেয়েছিল বিশাল বিশাল বিল্ডিংয়ের ছবি তুলবে।
টেক্সান রাণী ও ক্ল-বনেট" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া নন্দিনী চোখ কপালে তুলে মেয়েকে দেখছে। এই শুরু করেছে দু'জনা আজকাল। প্রতিযোগিতা। আমার দেশ তোমার দেশ, যুদ্ধ। নন্দিনী যত ঠেলছে রানীকে বাংলাদেশের দিকে রানীর শিশু মন ততই মায়াবতী হয়ে উঠছে আমেরিকার দিকে। তার মায়ের দ্বারা যেন অবহেলিত আমেরিকা। তাকে উদ্ধারের দায় এখন রানীর। শিশু মনস্তত্ব বুঝে উঠতে পারছে না নন্দিনী। নিহা ভাবে নন্দিনীকে একলা করে নিয়ে বসতে হবে একদিন। তার আবেগ বুঝে ওঠার বয়স হয়ে উঠেনি এখনো রানীর। সে দেখছে তার মা তার অদেখা কোনো এক দেশ বাংলাদেশকে সব ব্যাপারে আমেরিকা থেকে এগিয়ে আগলে ধরছে। রানী টেক্সান জীবন দেখেছে। এই পরিচয়ের বাহিরে যেতে হবে কেন বা কিভাবে তাও সে বুঝে উঠতে পারছে না। প্রয়োজন বা কি তাও সে বুঝতে এখনো অক্ষম। আমি যেখানে আছি থাকি সেটাই আমার ভালোবাসা, এরকম একটা স্বভাবজাত ভালোবাসা দানা পাকিয়েছে রানীর মাঝে আর তা সুরক্ষায় সে খুব দৃঢ় এবং দীপ্ত।
অশ্রুত একুশ’ বাংলাদেশের মফস্বল শহরের এক প্রতিভাদীপ্ত তরুণের আশ্চর্য আত্মবীক্ষণ। লেখক শাকিল রেজা ইফতি এই আত্মকাহিনীতে বর্ণনা করেছেন ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্রে হালবিহীন ভাঙা জাহাজের এক বিপর্যস্ত নাবিকের দুঃসাহসী