শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই নারীর বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া কন্টকাকীর্ণ। উপরন্তু তিনি হাসি নিজের মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাকে নানারকম সামাজিক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তবু তার অগ্রযাত্রায় পথিকৃতের ভূমিকা নেন মেরি ওয়েলস্টনক্রাফ্ট ও বেগম রোকেয়াসহ অন্যান্য প্রতিবাদী নারী নেত্রীবৃন্দ। নাজনীন সীমন রচিত এই উপন্যাসে প্রথম থেকেই একজন প্রতিবাদী নারীকে বেড়ে উঠতে দেখা যায়: পটভূমি পূর্ব থেকে পশ্চিম। জীবনের পরতে পরতে জমে থাকা শ্রম ও বিড়ম্বনাকে তিনি শক্তিশালী কলমে তুলে আনতে সক্রেটিস, পেটো, নিৎসে, জন লক, ও হুমায়ুন আজাদসহ বিশিষ্ট মনীষীদের দ্বারস্থ হন। ফলত উপন্যাসটি ব্যথা, হারানোর বেদনা, বেড়ে ওঠার সংগ্রাম, নারীর একাকিত্বের আখ্যানের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া গল্প বলার ঢং ও বুনন সৌকর্যে তিনি সর্বদাই স্বতন্ত্র। তাঁর উচ্চারণ ভাবায়, অনুপ্রাণিত করে, নিয়ে যায় শিল্পের কাঙ্ক্ষিত কন্দরে। শিবনারায়ণ রায়ের 'জিজ্ঞাসা' পত্রিকায় গল্প লেখার মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ভাষা বিন্যাস ও পটভূমি নির্মাণে তিনি অনেকাংশেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হাসান আজিজুল হকের অনুসারী। ন্যাংটো সমাজের নিচু তলার মানুষের সাথে উঁচু তলার মানুষের প্রভৃ-ভৃত্য সম্পর্ক, স্বামীর চোখে স্ত্রীর নিম্ন বর্গীয় অবস্থান, পুরুষের থাবায় নারীর বিপদগ্রস্ত বিপর্যয়ের চিত্রায়নে সীমন এই উপন্যাসে ভিন্ন মাত্রা সংযোজনে সক্ষম হয়েছেন। আমরা 'বৃত্তের বিষাদ'-এর বহুল প্রচার কামনা করছি।