অন্তহীন নীলাভ আকাশ, আর আকাশের মাঝে পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে জীবন-নামক এক ঘুড়ি। ঘুড়ি যত ওপরেই উঠুক, মেঘের যত অজানা রাজ্যেই হোক তার বিচরণ, নাটাইয়ের সাথে সুতোর বন্ধনে সে যদি আবদ্ধ থাকে শেষ পর্যন্ত, তাহলে তার পথ হারাবার ভয় নেই। আমাদের জীবনে সুখের যে অন্তহীন সমুদ্র, সেই সমুদ্রে অবগাহনের আগে আমরা যদি আমাদের জীবনটাকে বাঁধতে পারি নাটাইয়ের চিকন সুতোয়, তাহলে জীবনের পথ চলাতে আমরা রচনা করতে পারি সুখময় অধ্যায়। জীবনটাকে সুখের নাটাইয়ে আটকে দিতে আমাদের এবারের আয়োজন ‘সুখের নাটাই’।
জ্ঞানের রাজ্যে ডুব দেবার এক নিরন্তর অভিযান, এক অদম্য জীবনের গল্প। কখনো কেবল একটি হাদিসের জন্য তারা ছুটে গিয়েছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে, কখনো-বা রাতের পর রাত কাটিয়ে দিয়েছেন কোনো একটি আয়াতের নিগূঢ় অর্থ উদ্ভাবনে। তারা ছিলেন প্রাণবন্ত। সদা উৎফুল্ল। তাদের রাতগুলো ছিল ইবাদতময়। দিনগুলো কর্মমুখর। কুরআনের সাথে তাদের যেন গভীর এক মিতালি। নিঃসন্দেহে তারা সুন্নাহর অতন্দ্র প্রহরী। সত্যের এক প্রকৃত বন্ধু। মিথ্যার ঘোরতম শত্রু। তারা আমাদের মহান ইমাম। আমাদের পূর্বসূরি। সেই মানুষগুলো, যারা আলোকিত করে গেছেন আঁধারকালো পথ; দেখিয়েছেন সহজ-সরল পন্থা। আমাদের জন্য জ্ঞানরাজ্যের সকল দ্বার উন্মুক্ত করে যাওয়া সেই মহান মানুষগুলোর জীবনী আমরা মলাটবদ্ধ করেছি ‘ইমাম সিরিজ’-এ।
আমাদের সবুজ উপত্যকায় মাঝে মাঝে কুয়াশার মতো ঘন হয়ে নেমে আসে সর্বগ্রাসী এক অদ্ভুত অন্ধকার। সেই অন্ধকার ঝেঁকে বসে আমাদের নীলাভ আকাশে। হৃদয়-প্রকৃতিজুড়ে শুরু হয় এক মহা দুর্যোগ। মায়ের গর্ভ হতে বিশ্বাসের যে অঙ্কুর আমরা বুকে ধারণ করে বেড়ে উঠি, দুর্যোগের ঘনঘটায় সেই অঙ্কুর টালমাটাল হয়ে ওঠে। এরপর, মাঝে মাঝে কেউ আলো হাতে আবির্ভূত হয়। ডুবে যাওয়া নগরীতে এক টুকরো আলো এসে পড়ে। সেই আলোয় বিলীন হতে থাকে অন্ধকার। বিশ্বাসের যে আদিম চারাগাছকে তারা উপড়ে দিতে চেয়েছিল, সেই চারাগাছ ধীরে ধীরে বটবৃক্ষ হয়ে তাদের মাথার ওপর বিরাজমান হয়। সেই অন্ধকার কাটাতে এই তল্লাটে যে ক'টি চরিত্র বুক পেতে দাঁড়িয়েছে, আরজু তাদের একজন। তার যুক্তি, তর্ক আর তথ্যের বাহারে সে বের করে আনে ধ্রুব সত্যকে। এভাবেই আরজু ছুটে চলে তার গন্তব্যে। কোথায় গিয়ে থামবে সে?
আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের মধুরতম একটি মাস হচ্ছে রামাদান। এ মাসে সকল শ্রেণির সকল বয়সী মুসলিম দ্বীনের প্রতি অনেক বেশি উৎসাহী এবং উদ্যমী হয়ে ওঠে। এতে করে শরিয়তের বিধি-নিষেধগুলাে মেনে চলা তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া, রামাদান মাসে শয়তানের পায়ে শেকল পরানাে হয়। তাকে বন্দি করে রাখা হয় কারাগারে। এভাবে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য দৈনন্দিন ইবাদতগুলাে সম্পন্ন করা সহজ করে দেন। রামাদানে সিয়াম রাখা প্রতিটি মুসলিম নরনারীর জন্য ফরজ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তােমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তােমাদের পূর্ববর্তী লোেকদের ওপর, যেন তােমরা তাকওয়াবান হতে পারাে।”[1] কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে মহিমান্বিত এ মাসটিকে কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যের মাসে পরিণত করার অপচেষ্টা চালানাে হচ্ছে। সিয়াম পালনের মূল উদ্দেশ্য সবাই এখন ভুলতে বসেছে। তাকওয়া অর্জনের পরিবর্তে মূল লক্ষ্য যেন জমকালাে পােশাকের হরদম বেচাকেনা, বাহারি খাবার তৈরির হীন প্রতিযােগিতা, ইফতার ও সাহারি পার্টির মাধ্যমে ইবাদতে জল ঢালা এবং নানাবিধ হারাম কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করে দেওয়া। অথচ হওয়ার কথা ছিল এর উলটোটা। ভােগবিলাসী জীবন নয়; বরং সংযমী হওয়ার মাস হচ্ছে রামাদান। বছর ঘুরে সেই মাসটি আবারও কড়া নাড়ছে আমাদের দুয়ারে। হতে পারে এই রামাদানের পর আর কোনাে রামাদান আসবে না জীবনে। হতে পারে নিজেকে বদলানাের সুযােগ আর হবে না কোনােদিন। জীবনের ডায়েরি থেকে আর কোনাে মহিমান্বিত মাস যেন হারিয়ে না যায় বিনা আমলে, বিনা ইবাদতে। তাই এ রামাদান থেকেই শুরু হােক আমাদের সর্বাধিক প্রচেষ্টা, সকল প্রস্তুতি। ইলমে, আমলে আমরা নিজেদের এগিয়ে রাখতে চাই। জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকতে চাই। আশা করি, সেরা হােক এবারের রামাদান গ্রন্থের লেখাগুলাে পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, তাদের চিন্তার জগতে আলােড়ন সৃষ্টি করবে এবং রামাদানের উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন করে ভাবাতে উদ্বুদ্ধ করবে, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ যেন এই রামাদানকে আমাদের জীবনের শেষ রামাদান না করেন এবং ইবাদত ও উপলব্ধির মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নব উদ্যমে জীবন শুরু করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
বিচিত্র মানুষের বসবাস আমাদের চারপাশে। চলার পথে তারা গল্প করে, গল্প বানায়, গল্প গাঁথে। সেসব গল্পে উঠে আসে জনমানুষের কথা, জীবনের কথা। প্রাণ এবং প্রণােদনার কথা। উৎসাহ এবং উদ্দীপনার কথা। কিছু গল্প ভাবায়, অনুপ্রেরণা দেয়, শক্তি যােগায়। আমাদের আহ্বান করে কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়ার। জীবনকে নতুন করে গড়ে তােলার। সেরকম কিছু গল্প দিয়েই সাজানাে নানান রঙের মানুষ।
যখন হৃদয় হয় আর্ত, তৃষ্ণার্ত। যখন হৃদয় আকাশে নেমে আসে চৈত্রের দাবদাহ। যখন হৃদয়-জমিন মরুভূমির মতোন হাহাকার করে, তখন কুরআন যেন সেখানে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামে। উত্তপ্ত আকাশে একখণ্ড মেঘের মতো। কুরআন যেন হৃদয়ের জন্যই রচিত, অথবা হৃদয়ের জন্যই কুরআনের আগমন। হৃদয়ের সমস্ত আকুলতা-ব্যাকুলতা, সমস্ত আকাঙ্খার স্রোত যেন কুরআনের কাছে এসে থেমে যায়। কুরআনের শব্দেই হৃদয় ধ্বনিত হয়। কুরআনের ঝংকারে মধুর কল্লোল জেগে ওঠে হৃদয় সমুদ্রে। কুরআন যেন কোনো মোহিত গানের সুর যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় পরম আবেশে। সেই আবেশে হৃদয়ের কথাগুলো খুঁজে পায় প্রাণ। এমন কথাগুচ্ছের সম্মিলনের নাম ‘কুরআনের সাথে হৃদয়ের কথা’।