অধ্যাপক কবীর চৌধুরী একজন শিক্ষাবিদ, লেখক, অনুবাদক হিসেবে খ্যাতিলাভ ছাড়াও তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে আজন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক হিসেবে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা গড়তে শিখিয়েছেন। তিনি প্রশাসক হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আধুনিকীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি বহু মৌলিক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। অনুবাদক হিসেবে বিশ্বসাহিত্যকে বাঙালিদের দোরগড়ায় এনেছেন। তেমনই বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য রচনা তিনি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বসাহিত্য জগতে বাঙালির সাহিত্যকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী আজন্ম অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে লিখেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন, মাঠে ময়দানে মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছিল। এইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে শহিদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী। জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর স্পষ্ট নেতৃত্ব শূন্যতা পূরণ করতে এগিয়ে এসেছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। সুদীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিশ্বশান্তি প্রভৃতি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এই উপলক্ষে তিনি বিশ্বের বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিশ্ববাসীর সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে তিনি তাঁর ছাত্রদেরকে বিশ্বনাগরিক হতে শিখিয়েছেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পাওয়া। তিনি আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে।যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। এই মহান শিক্ষাবিদকে খুব কাছে থেকে দেখার যে অভিজ্ঞতা তা লিপিবদ্ধ করেছি এই গ্রন্থে। নতুন প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় এই ক্ষণজন্মা শিক্ষাবিদকে আমরা যেন ভুলে না যাই, তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিই, এই উদ্দেশ্যেই এই গ্রন্থটি লিখেছি। এ গ্রন্থটি রচনা করতে আমাকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন আমার স্ত্রী ড. জিনাত নবী ও আলোকচিত্র শিল্পী এম এ তাহের। এনআরবি স্কলার্স পাবলিশার্স-এর এম ই চৌধুরী শামীম এই গ্রন্থটি প্রকাশ করে কৃতজ্ঞবোধে আবদ্ধ করেছেন। তাঁদের তিনজনকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
উভয় বাংলার জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখকের সহপাঠী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। হুমায়ূন আহমেদ হঠাৎ করেই অসময়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর সামনে ছিল অমিত সম্ভাবনা। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলা সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হতো। এই বহুমুখী প্রতিভাবান লেখককে খুব কাছ থেকে জানার সৌভাগ্য হয়েছিল লেখকের। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি দেখেছে নিবিড়ভাবে। তাঁর সঙ্গে লেখকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা অনেকের অজানা। হুমায়ূন আহমেদের রহস্যময় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাঠকদের জন্য লিপিবদ্ধ এ গ্রন্থ যা তাঁর অসমাপ্ত জীবনকে পরিপূর্ণভাবে পাঠকদের কাছে উন্মোচিত করবে। এক অচেনা হুমায়ুন আহমেদ সমন্ধে তার বন্ধুর বয়ান ।
ড. নবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়নে বিএসসি (অনার্স) এবং এমএসসি, জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টোরাল। '৭০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এবং প্রথম সিনেটের সদস্য। ১৯৮০ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস। পেশায় বিজ্ঞানী, বর্তমানে একটি বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞানী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। ড. নবীর পেটেন্টকৃত আবিষ্কার এবং পাবলিকেশনের সংখ্যা ৫৫। ৮০-র দশকে আমেরিকায় ইউনাইটেড মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ এবং ৯০-এর দশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও '৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি প্রতিষ্ঠায় ও নেতৃত্বে প্রধান ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র-এর প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক এবং বর্তমান সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউ জার্সি-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ। অ্যাসোসিয়েশন অফ নিউ জার্সি-এর পৃষ্ঠপোষক, ফোবানার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান, এউ এস এ কমিটি ফর সেকুলার অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক বাংলদেশ-এর সভাপতি, অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক প্রবাসী'র প্রেসিডেন্ট ও সম্পাদক। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা বই 'বিশ বছর পর'-এর প্রকাশক। ড. নবী ২০০৭ সাল থেকে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের প্লেইন্সবোরো শহরের নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান। ড. নবীর স্ত্রী ড. জিনাত নবীও একজন বিজ্ঞানী। দুই পুত্র মুশফিক নবী ও আদনান নবী। নবী পরিবার বর্তমানে প্লেইন্সবোরো শহরে স্থায়ীভাবে বাস করছেন।