প্রিয় পাঠক, মাসুদ রানার সঙ্গে আরও একবার সুমেরু অভিযানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাকে। এবারের গন্তব্য—আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উত্তরের নামহীন এক বরফ-দ্বীপ। দর্শনীয় অনেক কিছুই পাবেন ওখানে। দ্বীপের গভীরে আছে গোপন এক প্রাচীন গবেষণাগার… ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মানুষের লাশ! আরও কিছু চাই? পাবেন। গবেষণাগারের পাশে, জমাট বাঁধা বরফের ভিতরে রয়েছে পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা একদল হিংস্র, রাক্ষুসে, প্রাগৈতিহাসিক দানব! এবে রওনা দেবার আগে জানিয়ে রাখা ভাল, ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। দ্বীপের দখ। নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মার্কিন সরকার। খবর পেয়ে সাবমেরিন নিয়ে রাশান এক রিয়ার অ্যাডমিরাল আসছেন ওটাকে নিউক্লিয়ার বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। শুধু তা-ই নয়, শীতনিদ্রা ভেঙে খুব শীঘ্রি জাগতে চলেছে। রাক্ষুসে দানবের দল! ভীষণ খিদে ওদের পেটে। বুঝতেই পারছেন, যেতে হবে নিজ ঝুঁকিতে। রানা অবশ্য থাকছে আপনার সঙ্গে তবে… ওর নিজেরই তো.. ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোকে গ্রাস করতে চলেছে। পশ্চিমা দুনিয়া। প্রস্তুতির কাজ শেষ। এমন সময় মাসুদ রানার হাতে এল ওদের পরিকল্পনার নীল নকশা। পৌছে গেল ওটা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চিফ মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানের হাতে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে এমন কয়েকটি দেশের সিক্রেট সার্ভিস চিফের সঙ্গে বসে তৈরি করলেন তিনি পাল্টা পরিকল্পনা। প্রস্তুত রইল এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সেনাবাহিনী ঠিক হলো: ইজরায়েলের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে মার্কিন পারমাণবিক মিসাইল। ডাক পড়ল মাসুদ রানা, সোহেল আহমেদ, লিউ ফু-চুং, অনিল চট্টোপাধ্যায়, আসি ও উর্বশী দাসার। ওদের সঙ্গে সেই ধচাপচা জাহাজে করে চলেছে আরও অনেকে। জাহাজ কিন্তু আপনার খুবই চেনা… স্বর্ণ-বিপর্যয় সেই মার্ভেল অভ গ্রিস! পাঠক, এই আত্মঘাতী মিশনে যাবেন ওদের সঙ্গে?
পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাসুদ রানা। সি.আই.এ এবং জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে ওর মাথার ওপর। কদিন বিশ্রাম নেবে মনে করে আশ্রয় নিল সে বন্ধু রেমারিকের ওখানে, ইটালীতে। তারই সুপারিশে দেহরক্ষীর চাকরি নিল ইটালীর এক ধনী পরিবারে। সেখানে ছোট্ট একটি মেয়ে মিষ্টি একটা গান উপহার দিল রানাকে। দিয়েই চিরবিদায় নিল এ পৃথিবী থেকে। খুন করেছে ওকে কিডন্যাপাররা। কিছুর সাথে নিজেকে জড়াবে না প্রতিজ্ঞা করেছিল রানা; কিন্তু কখন যে ওকে জয় করে নিয়েছিল কিশোরী মেয়েটা, টেরই পায়নি। এখন আর ঘুমাতে পারে না ও। দাউ দাউ করে জ্বলছে বুকে প্রতিশোধের আগুন
ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিল মাসুদরানা-বাড়াল সহযােগিতার হাত। যেতে হলাে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে, এক বিশেষ মিশন নিয়ে-উদ্দেশ্য, ওখানকার কয়েকটি দ্বীপের আশপাশের গভীর সমুদ্রে তল্লাশি চালিয়ে খুঁজে বের করবে অত্যন্ত মূল্যবান এক শিলাখণ্ডের আবিষ্কৃত মজুদ। রানা কল্পনাই করতে পারেনি এ-কাজ করতে গিয়ে কত দুঃখ ছিল কপালে । একদিকে শত্রুপক্ষ, অন্যদিকে রুদ্র প্রকৃতি, ফ্যালকন আইল্যান্ড চারদিকে একের পর এক বিস্ফোরিত হতে শুরু করেছে অসংখ্য ডুবাে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ । ফাদে আটকা পড়ে গেছে জাকারান্ডা-দিশে হারিয়ে ফেলেছে মাসুদ রানা।
পাঠক গ্রিক উপকথার মাইডাস টাচের গল্প জানেন তো? স্বর্ণ লোভী রাজা মাইডাসকে অদ্ভুত এক বর দিয়েছিলেন দেবতারা- শুধু স্পর্শ দিয়ে যে- কোন জিনিসকে সোনায় রূপান্তরিত করতে পারতেন তিনি। সেটা তার জন্য হয়ে দাঁড়ায় অভিশাপ। ভুল করে নিজের মেয়েকে সোনার মূর্তি বানিয়ে ফেলেন তিনি। করুন… সেইসঙ্গে সুন্দর এক কাহিনী, তাই না? কিন্তু গল্পটা যদি গল্প না হয়? যদি ওটা সত্যি হয়ে থাকে? এত বছর পর পাগলাটে কোন ভিলেন যদি সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে চায়… খুঁজে পেতে চায় রাজা মাইডাসের সমাধি… এবং মাসুদ রানাকে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করতে চায় সেই কাজ করে দিতে? কি ঘটবে তাহলে? না, পাঠক, কল্পনার সাগরে ভেসে যাবার কোনও দরকার নেই। এই বইয়ের ভিতরে রয়েছে সমস্ত প্রশ্নের জবাব। সেই সঙ্গে রয়েছে পাতায় পাতায় দমবন্ধ করা উত্তেজনা, রক্ত গরম করা অ্যাকশান আর বুদ্ধির মারপ্যাঁচ সহ অনেক কিছু। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন রানার সঙ্গে যোগ দিই শ্বাসরুদ্ধকর আরেকটি অভিযানে। কথা দিচ্ছি, হতাশ হবেন না।
টেররিস্ট মানুষরূপী পিশাচ বলতে যা বোঝায়, ডেমিয়েন কেইন ঠিক তা-ই। পেশাদার টেররিস্ট সে, ইন্টারপোলের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। ফ্লোরিডায় ধরা পরল সে। হাতকড়া পরিয়ে যাত্রীবাহী এক বিমানে করে বিচারের জন্য লস অ্যাঞ্জেলসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। কিন্তু এত সহজে হার মানার পাত্র নয় কেইন। ছদ্ম পরিচয় ওর সঙ্গী-সাথীরা উঠেছে একই বিমানে। যথাসময় আত্মপ্রকাশ করল তারা, হাইজ্যাক করল বিমান। ওফ্ফো, পাঠক, আপনাকে বলতে ভুলে গেছি, উল্লেখযোগ্য আরেকজন যাত্রী আছে এ-বিমানে। দুর্ধর্ষ এক বাঙালি যুবক- তার নাম আপনি জানেন। আদিম আতঙ্ক বিখ্যাত প্য়ালিয়োনটলজিস্ট ডক্টর নাসিম আহমেদ এর লেকচার শুনতে গ্রেগ রনসন অডিটোরিয়ামে গেল মাসুদ রানা। ভদ্রলোক প্রিয় বন্ধু সোহেলের বড় ভাই। ওখানেই প্রথম দেখলো ও জাপানি ললনা রূপসী মানামি সিনোসুকাকে। জড়িয়ে গেল ওরা আষ্টেপৃষ্ঠে। নাসিমের অনুরোধে মস্ত ঝুঁকিয়ে নিল রানা। ডুব দিল প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চলে, যেখানে মাউন্ট এভারেস্ট কে ছেড়ে দিলে টুপ করে তলিয়ে যাবে। সত্যি কি আছে সেখানে সেই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী- বিশালাকায় হাঙ্গর কারকারোডেন মেগালোডন?