শৈশব আমাদের অত্যন্ত প্রিয় অধ্যায়। শৈশবের গল্পগুলো ভারি মায়া ছড়ায়। তাই বুঝি জীবনের শতেক টানাপোড়েন কিংবা জটিলতাও পারে না শৈশবের মায়া মুছে দিতে। তাই যেকোনো স্মৃতিচরিতে লেখকদের শৈশব যেভাবেই উপস্থাপিত হোক না কেন অস্বস্তি তৈরি হলেও সেগুলো পাঠে অনীহা তৈরি হয় না। আমরা আজীবন শৈশব আঁকড়ে থাকতে ভালোবাসি । কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক যথার্থই বলেছেন, ‘আসলে জীবন মানেই শৈশব; জীবনভর মানুষ এই একটা ঐশ্বর্যই ভাঙিয়ে খায়, আর কোনো পুঁজিবাট্টা নেই তার।' সময় উজিয়ে পরিণত বয়সে পৌঁছেও শৈশবের কাছে যেকোনো অজুহাতে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমাদের তাই বুঝি ফুরায় না। কিন্তু টাইমমেশিন ছাড়া সেখানে পৌঁছানোরই বা উপায় কী! সুলিখিত একটি বই এক্ষেত্রে হয়তো উষ্ণ উদ্ধারের মাধ্যম হতে পারে। যে বইটির হাতধরে আমরা পৌঁছে যেতে পারি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। সুলিখিত একটি বই নামের টাইমমেশিন অনায়াসে পৌঁছে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত কোনো গন্তব্যে; এমনকি আরাধ্য শৈশবেও। স্মৃতি ভদ্রের লেখা রসইঘরের রোয়াক বইটিকে আমার সেরকম এক টাইমমেশিনই মনে হয়েছে। যেখানে লেখক তাঁর আনন্দময় শৈশবের নানা কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অথচ তাঁর বিষয়বস্তু ও প্রাসঙ্গিকতা আমাদের একেবারেই অপরিচিত মনে হয়না। তাই বিশ্বাস করি এর আবেদনও সর্বজনীন। তবে এই বইটিকে ঠিক আত্মচরিত বলা হবে, না স্মৃতিকথা, নাকি কালচারাল এনথ্রোপলজির শাখায় রাখা হবে, তার ভার সময়ের ওপর রইল । বইটি জুড়ে রয়েছে সাত বছরের এক বালিকার চোখে দেখা প্রাণবন্ত গ্রামীণ আর নিরালা শহুরে জীবনের বৃত্তান্ত। ঋতুর পালাবদলে নানা উৎসব-পালাপার্বণ ঘিরে রসুইঘরের জাঁকাল সব আয়োজন। পারিবারিক আর চারপাশের খুঁটিনাটি বর্ণিত হয়েছে মনোহর ভাষায়। সারল্য এ বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ।