‘আত্মহত্যার মৃত্যুদণ্ড’ উপন্যাসটি আমাদের সম-সাময়িক সমাজের প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ এবং সমাজ কাঠামো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। উপন্যাসের মূল দুই চরিত্র ইভান এবং ফুয়াদ। এদের একজন পড়াশুনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরেকজন এরই মাঝে বিসিএস দিয়ে পুলিশ অফিসার হয়ে গিয়েছে। এই দুজনের সাক্ষাৎ হয় একটি অসফল আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে। সেই আত্মহত্যার কারণ জানতে গিয়ে উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্র সামনে চলে আসে। যেখানে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরি, সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনীতি, প্রেম-ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক সম্পর্কগুলোও সামনে চলে এসেছে। সমাজের সাধারণ মানুষের না-বলা গল্পগুলো উঠে এসেছে এই উপন্যাসের মাধ্যমে।
কখন স্যার বেরিয়ে যান টের পাই না। আমি ঠায় বসে থাকি। ছেলেরা পরের ক্লাসের জন্য ছােটে। কেন জানি আজ আর আমার ক্লাসে যাবার কোনাে তাড়া থাকে না। সব শেষে আমি বের হই । শূন্য বুকে এলােমেলাে হাঁটি করিডােরে। - শুনুন। চমকে পিছন ফিরি । দেখি, নীলা দাঁড়িয়ে করিডােরে। একা। নীরবে তাকাই ওর দিকে। ডাগর কালাে চোখ মেলে অভিমানী সুরে বলে, এই এক সপ্তাহ আসেননি কেন? আমি যেন হঠাৎ জীবনানন্দ দাশ হয়ে যাই। সামনে দাড়িয়ে শ্রাবস্তির কারুকাজ করা মুখের বনলতা সেন। যেন বলছে; "এতদিন কোথায় ছিলেন? পাখির নীড়ের। মতাে চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।" বিএল কলেজের করিডােরে দাঁড়িয়ে, সতেরাে বছরের এক কিশাের তারই এক সহপাঠিনীর মুখে দেখেছিল শ্রাবস্তীর কারু কাজ। তার ডাগর কালাে চোখে দেখেছিল ছেলেবেলায় গ্রামের বাড়িতে দেখা কাজলদিঘি। যে দিঘিতে সাঁতার না জানা বালকের মতাে সে শুধুই তলিয়ে যেত। কল্পনায় সেই কিশােরীকে কখনাে সে ভাবত পুরুরবার প্রেমে পাগল উর্বশী, কখনাে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভাঙানাে মেনকা কিংবা বুকে ঝড় তােলা ছন্দে চলা মন্দাকিনী, কখনাে বা পাখির নীড়ের মতাে চোখের বনলতা সেন। ভৈরবের তীরে বসে সেই দুই কিশাের কিশােরী রচেছিল এক অসম্ভব প্রেমের মহাকাব্য। তীরে পৌছুবে না জেনেও দুর্বল হাতে সেই নদীতে বেয়েছিল এক মায়াবী প্রেমের পানসিনাও। বনলতা এমনই দুই কিশাের-কিশােরীর কষ্ট মধুর প্রেমকাহিনি।