উইলিয়াম শার্লক স্কট হোমস—ঠিকানা ২২১বি, বেকার স্ট্রিট, লন্ডন। জন্ম ১৮৫৪ সালে। বাবা সিগার হোমস, মা ভায়োলেট শেরিনফোর্ড। হোমসের দাদি ছিলেন ফরাসি শিল্পী ভারনেটেজ গেন। ছাপার অক্ষরে শার্লক হোমসের প্রথম আবির্ভাব ১৮৮৭ সালে। আবির্ভাবে দৃষ্টি কাড়তে না পারলেও পরে ঠিকই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, পাল্টে দেয় রহস্য-সাহিত্যের ধারা। হোমস ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, চৌকো মুখ, সংগীত ও ভায়োলিনে আসক্ত। অবসরে ভায়োলিন বাজাতে পছন্দ করে। প্রখর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণশক্তির অধিকারী, ছদ্মবেশ নিতে জুড়ি নেই। জন্ম দিয়েছে অনুমানবিজ্ঞান—অর্থাৎ সায়েন্স অভ ডিডাকশনের। অপরাধের তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ছোঁয়া লাগে হোমসেরই কল্যাণে। হাত-পায়ের ছাপ নিতে প্লাস্টার অভ প্যারিসের ব্যবহার, জমাট রক্তের পরীক্ষা, টাইপরাইটিঙের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা, অপরাধীকে অনুসরণে কুকুর ব্যবহার—এসবই প্রথম দেখা যায় হোমসের গল্পে। পরে একসময় বিভিন্ন দেশের পুলিশ বিভাগ এসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। অপরাধী শনাক্তকরণে হোমসের অবদান মাথায় রেখে, ২০০২ সালে, লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অভ কেমিস্ট্রি শুধু হোমসের ফরেনসিক বিদ্যার ওপর গবেষণা করে ফেলোশিপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। পৃথিবীতে কোনো কল্পিত চরিত্রের ওপর এমন বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ এই প্রথম। আজ প্রায় দেড়শো বছর পরও হোমসকে নিয়ে তুঙ্গস্পর্শী উন্মাদনা। সেই উন্মাদনার ছোঁয়া বাংলাদেশি পাঠককে দিতে শার্লকের সবগুলো গল্প ও উপন্যাসের অনুবাদ তিন খণ্ডে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে বিবলিওফাইল প্রকাশনী। পাঠকের সুবিধার্থে এ অনুবাদে যোগ করা হয়েছে টীকা, এবং বেশ কিছু ইলাস্ট্রেশন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলনের ঠিক দুই দিন আগে মারা গেল তরুণ বাঙ্গালি বিজ্ঞানী উমা চক্রবর্তী। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই সে জানিয়েছিল, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পাল্টে দেবার মতো এক আবিষ্কার করেছে। খুন কি হতে হলো সেজন্যই? ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ল বর্তমানে নামকরা এক গবেষণা সংস্থার সাথে জড়িত থাকা রাফসান ইবনে সেলিম। উমা চক্রবর্তীর বান্ধবী, নিয়তিকে নিয়ে শতাব্দী পুরাতন, কিন্তু প্রায় অজানা এক কিংবদন্তির পেছনে ছুটে পাড়ি জমাল সুন্দরবনে। উমার হত্যাকারীকে পাকড়াও করলেই হবে না, সেই সাথে পুন:আবিষ্কার করতে হবে সেই সঞ্জীবনী ওষুধটাও। এদিকে দুই বিজ্ঞানীর পেছনে লেগেছে রহস্যময় এক সংঘটন-অহিংশ। লেলিয়ে দিয়েছে তাদের নৃশংস আততায়ীকে। কেঁচো খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো সাপ! বাংলাদেশের বুকে মঞ্চায়িত হচ্ছে শুভ আর অশুভের দ্বন্দ্ব!
অঙ্গভ্রম: কক্সবাজারের রহস্যঘেরা এক রিসোর্টের হ্যানিমুন স্যুইটে পাওয়া গেল একটা লাশ। বড় অদ্ভুত সেই হত্যাকান্ড, ছুটি কাটাতে কক্সবাজার এসে কীভাবে কীভাবে যেন তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল রাফসান ইবনে সেলিম। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে লোকটির। কিন্তু তার চাইতে অদ্ভুত ব্যাপার-লাশের পাশে পড়ে আছে একটি কাটা পা! কেন খুন হতে হলো তাকে? প্রখ্যাত এক এন.জি.ও.এর কর্মকর্তা ছিল ভিক্টিম, সেই সংস্থা সংক্রান্ত কিছু কি? নাকি ব্যাপারটা মাদক সম্পর্কিত? রহস্যের জাল ছিঁড়তে উঠে-বসে লাগল রাফসান। নিঠুর খেলা: বসের চাপে পড়ে রাজি হয়ে গেল সাব্বির। পরামর্শক হিসেবে যাবে ও গাজিপুর; বাজ মাল্টিমিডিয়ার নতুন ছবি ‘নিঠুর খেলা’-এর, পুলিসি কর্মকাণ্ডগুলোর ব্যাপারে দেবে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। তবে এই রাজি হবার পেছনে রয়েছে আরও কারণ। জীবন থেমে থাকে না। তাই ডন ওয়াসার পর শিকদার হয়ে এখন অপরাধ জগতের হর্তা-কর্তা হয়েছে ‘কান কাটা ফারুক’, ধারণা করা হয় যে অহিংশের সরাসরি লোক সে। সেই কান কাটা ফারুকের সংশ্লিষ্টতা আছে এতে। সেটে গিয়ে জানতে পারল সাব্বির-খুন হয়ে গিয়েছে ওর আগে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এক পুলিস অফিসার। খুনি সম্ভবত এই প্রোডাকশনের কেউ। একদিকে কান কাটা ফারুককে পাকড়াও করা, অন্য দিকে আইনের আওতায় আনা খুনিকে... দুটোই পারতে হবে... খুনি কিংবা অহিংশ, কাউকেই ছাড় দেবে না সাব্বির।
নির্মোক শব্দের অর্থ 'খোলস'। এই সমাজের অনেকেই খোলসের অন্তরালে আড়াল করে রাখে নিজের প্রকৃত স্বরূপকে। মুখোশধারী এই পৃথিবীতে আমরা সবাই ছদ্মবেশী। সংসার, সমাজ, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে, বন্ধুর এই পৃথিবীতে পথ চলতে গিয়ে নিয়ত আমাদের খোলস পরিবর্তন। বিষকাঁটা: হাজার বছরের পুরোনো এক গল্প, যার নাম সংসার। যুগ যুগান্তরের সময় ছুটছে দ্রুত-বর্ধমানশীল দ্রুততায়; আর যুগল ঘরটির প্রাসঙ্গিকতা স্থির, মানুষের চিরন্তনের আশ্রয়, অবকাশের নীড়। নীড়ে গল্পই 'বিষকাঁটা' করেছে, চিরন্তনী প্রেমকে, প্রেমের অভিমানকে, ভাঙনের দুঃখ ও বিচ্ছেদের কারণকে দেখিয়েছে বর্তমান অস্থির-ব্যস্ত-দ্রুত সময়ের ফ্রেমে বেঁধে। অদ্ভুত আঁধার এক: এই মহানগরীর সারি সারি অট্টালিকার মধ্যে একটি বহুতল ভবনের ছয়তলায় আচমকা একদিন পাওয়া যায় এক তরুণীর মৃতদেহ। কী তার পরিচয়? তার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয় কতজনের মুখোশ, বেরিয়ে আসে কত অজানা সত্য। এই নাগরিক সভ্যতার ইটে ইটে কত পাপ...কত অন্ধকার লুকিয়ে আছে! লোভ আর উচ্চাশা বরাবরই মানুষকে ধ্বংস করে দেয় জেনেও মানুষ কেন পা বাড়ায় আদিম অন্ধকারের পথে, ওপরে ওঠার সহজ পথ খুঁজে পাওয়ার মারণ নেশায়?
গ্যালিলি, ১০২৫, প্রাচীন এক ক্যাথেড্রালে টেম্পলার নাইটদের একজন খুঁজে পেল হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রাখা এক নিদর্শন। যেন তেন নয় তা—বাকাল ইশু, যিশু খ্রিষ্টের লাঠি। যার কাছে পাওয়া গেল, তিনিও যেন-তেন কেউ নন। তার দাবী শত শত বছর ধরে পৃথিবীর বুকে হাঁটছেন! সময়কে এক হাজার বছর সামনে নিয়ে আসি। হর্ন অভ আফ্রিকার উপকূলে সোমালি জলদস্যুরা হাইজ্যাক করল এক ইয়ট, সেই সাথে অপহরণ করল এক গর্ভবতী আমেরিকান মেয়েকে। কমান্ডার গ্রে পিয়ার্সকে মা হারাবার শোক ভুলে নামতে হলো কাজে। কেননা এই মেয়েটি কোনও সাধারণ মেয়ে নয়। সে যে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মেয়ে! সময়ের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা গ্রের দলের সাথে যোগ দিল আরও দুজন যোদ্ধা: প্রাক্তন আর্মি রেঞ্জার টাকার ওয়েইন আর তার সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর, কেইন। খোদ আমেরিকার ক্যারোলাইনাতে বোমা বিস্ফোরিত হলো এক ফার্টিলিটি ক্লিনিকে। সর্ষের ভেতর থেকে উঁকি দিল ভূত। জানা গেল, আমাদের জেনেটিক কোড অদল-বদলের চেষ্টায় মত্ত এক গুপ্ত সঙ্ঘ। মনুষ্যত্বকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সেই সঙ্ঘ: অমর হতে চাও? বাঁচতে চাও চিরদিন?
যুগে যুগে মানুষকে আকৃষ্টে করেছে তার চাইতে বড়, তার চাইতে বিস্তৃত এক শক্তি। কোনো সমাজে সেই শক্তির নাম জুপিটার, কোনো সমাজে অলিম্পিয়ান, কোনো সমাজে এইসির। প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের শোনাবো সেই এইসিরদের গল্প। যারা দেবতা হয়েও...ঠিক দেবতা নন। শোনাবো দানো কিংবা জতুনদের গল্প, যারা সৃষ্টির বিপক্ষের শক্তি হয়েও...ঠিক অশুভ নন। শোনাবো ওডিনের কিংবদন্তি...যিনি সর্ব-প্রথম, সর্ব-পিতা ও দেবপ্রধান। শোনাবো থরের নানা অভিযানের কথা...যার নাম শুনলে থর থর করে কেঁপে ওঠে প্রতাপশালী হিমদানোরা। শোনাবো লোকির চালাকির আখ্যান...অতি চালাকের গলায় দড়ি কথাটা সম্ভবত যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খাটে। আর শোনাবো র্যাগনোরকের কথা...এই অন্তিম দিবস যা মহাবিশ্বে জন্ম দেবে নতুন এক চক্রের। এইসির-জতুন-থ্রাল-রিগ-এলফ-বামন-সিগার্ড-হেল... প্রিয় পাঠক, এদের গল্প শোনার জন্য প্রস্তুত তো?