“একাত্তরের চিঠি”বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ এত গৌরবময়, এত বেদনাময় বছর বাঙালির জীবনে আগে কখনাে আসেনি। বছরটি ১৯৭১। এই একটি বছরের। মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশকে জানল, চিনল এবং বুঝতে পারল সবজ শ্যামল প্রকৃতির কাদামাটির মতাে নরম বাঙালি প্রয়ােজনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। কোনাে সন্দেহ নেই, বাঙালি বর্ষাকালে যেমন কোমল, গ্রীষ্মে তেমনই রুক্ষ ও কঠিন। কে ভাবতে পেরেছিল, ‘ভেতাে বাঙালি' নামে অভিহিত, কাপুরুষ' পরিচয়ে পরিচিত বাঙালি জাতি। পাকিস্তান নামের অবাস্তব একটি রাষ্ট্রের জন্মের ছয় মাস। যেতে না যেতেই আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠায়, মাতৃভাষার অধিকার অর্জনে সােচ্চার হয়ে উঠবে? পৃথিবীতে এমন দৃষ্টান্ত বিরল যে শুধু ভাষার জন্য সংগ্রাম করে, স্বাধীনতা অর্জনের বীজটি বপন করে, ২৩ বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই একটি প্রদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল । এর জন্য সেই প্রদেশের অধিবাসীদের সশস্ত্র যুদ্ধ করতে হয়েছে যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে; এবং অবিশ্বাস্য সত্য হচ্ছে, 'ভীরু, অলস, কর্মবিমুখ, কাপুরুষ, ভেতাে, যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞ এই বাঙালিই মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। স্বাধীনতার জন্য প্রাণের আবেগ। যখন দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে, তখন পৃথিবীর যত ভয়ঙ্কর। মারণাস্ত্রই ব্যবহার করা হােক না কেন, সেই আবেগের কাছে। তা তুচ্ছ হয়ে যায় । তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি আমেরিকাভিয়েতনামের যুদ্ধে। বিশ্ববাসী সেই প্রমাণ পুনরায় প্রত্যক্ষ। করেছে ১৯৭১ সালে, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধকালে লিখিত চিঠিগুলাে শুধু লেখক-প্রাপকের। সম্পর্কে সীমাবদ্ধ নয়; যেন রক্ত দিয়ে রচিত এই কথামালা যেমন সবার সম্পদে পরিণত হয়, তেমনি পরিগণিত হবে। ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদরূপে
‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং (মহাবিশ্বের জন্ম এবং শেষ পরিণতি)’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক দুটি মহান আবিস্কার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স। প্রথমটির কাজ মহাকর্ষ, স্থানকাল তথা মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসর নিয়ে। দ্বিতীয়টি কাজ করে অতিক্ষুদ্র পরমাণুর গহন রাজ্য। নিজ নিজ ক্ষেত্রে পরীক্ষা থেকে শুরু করে ব্যবহারিক দিকে দুটি তত্বেই সফল। তবে দুটি তত্ব একই সাথে সফল হতে পারে না, অন্তত তাদের বর্তমান রূপে। কিন্তু এ দটিকে একত্রিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ তত্ব পেতে পদার্থবিদদের একাধিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। স্ট্রিং থিওরিকে একসময় এমনই এক পূর্ণাঙ্গ তত্ব বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এ তত্ব থেকে পাওয়া কোনো ভবিষ্যদ্বাণী এখনো বাস্তব পরিক্ষায় প্রমান করা যায়নি। ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবণা ক্ষীণ বলেই বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। তাই এখন নতুন এক তত্বের খোঁজে মাঠে নেমেছেন তারা, যা দিয়ে বিপুল পরিসরের মহাবিশ্ব ও ক্ষুদ্র পরিসরের পরমাণু রাজ্যকে একসুতোয় গাথাঁ যাবে। এ তত্বেরই পোশাকি নাম থিওরি অব এভরিথিং। কিন্তু কেমন হবে বহু প্রত্যাশিত সেই তত্ব? কী করা যাবে সেই তত্ব দিয়ে? তাতে কী এই মহাবিশ্বের সব রহস্যের জবাব পাওয়া যাবে। এ বইতে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। আকারে ক্ষীণ, বক্তব্যে সংক্ষিপ্ত হলেও যা গুরুত্ব ও তাৎপর্য্ বিপুল। এই ধারাবাহিক বক্তৃতাগুলোকে আমি মহাবিস্ফোরণ থেকে কৃষ্ণগহ্বর পর্যন্ত মহাবিশ্বের ইতিহাস নিয়ে আমাদের ভাবনার একটা রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রথম বক্তৃতায় মহাবিশ্ব সম্পর্কে অতীতের ধারণাগুলো সংক্ষেপে বলব। একই সঙ্গে মহাবিশ্বের বর্তমান চেহারা কিভাবে পেলাম, সেটিও থাকবে এখানে। দ্বিতীয় বক্তৃতায় মহাকর্ষ্ সম্পর্কে নিউটন আর আইনস্টাইন তত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মহাবিশ্ব স্থির হতে পারে না, মহাবিশ্বকে হয় প্রসারণশীল, নয়তো সংকোচনশীল হতে হবে-তাঁদের তত্বগুলো কীভাবে এই সিদ্ধান্তের দিকেই ইঙ্গিত করে, এখানে সেটিই দেখাব। এতে দেখা যায়, আজ থেকে ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন বছর আগের মধ্যবর্তী কোনো একটি সময়ে এই মহাবিশ্বের ঘনত্ব অবশ্যই অসীম ছিল। একেই বলে মহাবিস্ফোরণ। সম্ভবত মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই।
আফ্রিকার ছােট্ট রাজ্য লিসােটোতে বেড়াতে গিয়ে রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করতে না পেরে লেখক ম্যাডলক সাহেবের কটেজে আশ্রয় নেন । কথাবার্তায় জানতে পারেন, ম্যাডলক যে সুদর্শনা নারীর জন্য শৌখিন কটেজ তৈরি করেছিলেন, সে তাকে ত্যাগ করে ঘর বেঁধেছে এ কটেজের স্থপতির সঙ্গে। পাঠকদের সঙ্গে লেখক পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর এইডসগ্রস্ত গাইডের। স্বভাবে কবিয়াল মানুষটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর। বর্ণনা করেন ব্ল্যাকম্যাজিকের। জাদুটোনায় ব্যবহারের জন্য শ্বেতীগ্রস্ত এক মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্মমভাবে কেটে নেওয়ার ঘটনা। অনিরাপত্তায় মানুষটি অনুনয় করে তাকে যেন কারাগারে পােরা হয়। এক জমানায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন শরীরের তীব্র আবেদন ছড়ানাে এক রূপসী। এ যাত্রায় পাঠকও লেখকের সঙ্গে সেই রূপসীর তালাশ করেন। তাঁর দেখা পান উপত্যকার নিভৃত এক কুটিরে। বাশক্তিহীন স্ট্রোকে জর্জরিত মহিলা সেখানে একাকী বাস করছেন। কাউকে দেখাতে চান না তার মুখাবয়ব, তাই তিনি মুখে তুলে নিয়েছেন মুখােশ। লেখক মঈনুস সুলতানের অতুলনীয় বর্ণনায় পাঠক নানা ধরনের মানুষের দেখা পাবেন এবং উপভােগ করবেন তাদের বিচিত্র দিনযাপন।
ঈদ নিয়ে আসুক মিলনের আনন্দ দরজায় ঈদের কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঈদ মানে মিলন, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব। ঈদ মানে ভেদ ভুলে, মানুষের বিভিন্নতা মেনে সবাইকে নিজেদের করে নেওয়ার তৃপ্তি। বিশ্বজুড়েই সময়টা ভালো নেই। মাত্র কয়েক বছর আগেই প্রবল নাড়া দিয়ে সারা পৃথিবীকে এলোমেলো করে গিয়েছিল কোভিডের অতিমারি। তার ইতি ঘটলে আমরা ভেবেছিলাম, এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা করল রাশিয়া। বিপুল উত্তেজনায় শক্তিধর দেশগুলো তৎপর হয়ে উঠল। সংকুচিত হয়ে পড়ল জ্বালানি আর পণ্য চলাচলের বিশ্বব্যাপী ছড়ানো পথগুলো। ডলারের দাম আকাশ ছুঁল। বিশ্বমন্দা হানা দিল মানুষের ঘরে ঘরে। এই আবহে দেশে দেশে ঘটছে মানুষের সামাজিক গ্রন্থির ক্ষয়। উগ্রতা আর প্রতিক্রিয়াশীলতা অতি দ্রুত গ্রাস করে নিচ্ছে সত্য, সুন্দর ও শুভকে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিভিন্ন দেশে গত কয়েক বছরে নির্বাচিত সরকারপ্রধানদের আদর্শ আর ভাবনাই বলে দিচ্ছে, পৃথিবীর এখন গভীর গভীরতর অসুখ। তবু এরই মধ্যে ঈদ আসছে। এ যেন দীর্ঘ মরুপথ পার হয়ে মরূদ্যানে পৌঁছানো। ঈদ সেই বিরল মুহূর্তগুলোর একটি, যা আমাদের বলে, মানুষের নিয়তি অশুভে আবদ্ধ থাকার মধ্যে নয়। সুন্দরের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তার চিরন্তন দায়। কানা ছেলের নাম সে পদ্মলোচন রাখে, কারণ সন্তানের অন্ধত্ব নয়, সেটিকে পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়াকেই সে পবিত্রতম কর্তব্য বলে মনে করে। তাই আমাদেরও প্রচেষ্টা এই ঈদকে পাঠকদের কাছে আরও আনন্দময় ও অর্থবহ করে তোলা। দেশের সেরা লেখকদের লেখা দিয়ে ঈদসংখ্যার এই প্রকাশনা আমাদের সেই দায়মোচনের বিনীত প্রচেষ্টা। সবাইকে ঈদ মোবারক। - সাজ্জাদ শরিফ
বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে। থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর । পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে । বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি। বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে।উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা। ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের। শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তার। একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর। মানুষ যেখানে সদা কর্মব্যস্ত। বাঙালি তাবাসসুম জীবনের নানা মোড় পেরিয়ে, বিচ্ছেদের দাহ সয়ে একসময় সেই মেলবোর্নেই চাচা- চাচির সংসারে থিতু হয়। যদিও তার স্বাচ্ছন্দ্যময় প্রবাসজীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে বিচ্ছিন্নতাবোধ আর একাকিত্ব। তবে এই অনুভূতিগুলোকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই পথ চলে সে; যতক্ষণ না একটি ঘটনার অভিঘাতে সবকিছু উল্টেপাল্টে যায়। ২০১৯ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন একান্নজন মানুষ। সে ঘটনার ধাক্কা এসে লাগে অস্ট্রেলিয়ায় তাবাসসুম আর তার পরিবারেও। মনের গভীরে জমে থাকা প্রশ্নেরা এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফিরে আসে ফেলে আসা জীবন, ভালোবাসা ও সন্তান হারানোর স্মৃতি। টালমাটাল এই সময় তাকে জর্জরিত করে আত্মজিজ্ঞাসায়ও। হাতড়ে ফেরে সে তার আত্মপরিচয়। আর তখনই তার ফোনে একের পর এক রহস্যময় বার্তা ভেসে আসে অতীতের হাতছানির মতো। কে আছে ফোনের ওপাশে? কেউ কি তাকে খুঁজছে?