মধ্যমপন্থা - মধ্যমপন্থা কী, কেন, কীভাবে- ড্ড কঠিন সময় পাড়ি দিচ্ছে মুসলিম উম্মাহ। প্রান্তিকতার এই অস্থির সময়ে তাই মধ্যমপন্থার আলোকমশাল জ্বালিয়ে দিতে হবে প্রতিটি অন্তরে। চরম কিংবা নরম-দুটোই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রান্তিকতার দেয়াল ভেঙে মুক্তির নতুন সূর্য আনতে ‘মধ্যমপন্থা’ হতে পারে সফল মাধ্যম। মধ্যমপন্থার ব্যাখ্যা, ক্ষেত্র, পরিসীমা ও প্রয়োগবিধি নিয়ে শাইখ ইউসুফ আল কারজাভির চমৎকার উপস্থাপনা ‘মধ্যমপন্থা’ (ওয়াসাতিয়্যাহ) পড়ে নতুন করে ভাবার খোরাক পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।
মুমিন জীবনে সময় - মুসলিম মানসে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভাবনা যা এইমাত্র অতীত হলো, সেটাই সময়। এখন যে মুহূর্ত অতিক্রম করছি, সেটাই সময়। কিছুক্ষণ পরে যেখানে প্রবেশ করব, সেটাই সময়। সময় নামের অক্টোপাস থেকে কে, কখন, কবে মুক্তি পেয়েছে বলুন? সফল তিনি, যিনি এই সময়কে ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারেন। বিশেষত মুমিন জীবনে সময় মানেই নিজের মুক্তি ও পুরস্কার নিশ্চিত করে নেওয়ার মওকা! সময় নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির বোঝাপড়া তাই অতীব জরুরি আলাপ। সেই আলাপ খুঁজে নেব এই গ্রন্থে।
বিশ্বায়ন ও আধুনিকায়নের নাম দিয়ে আমাদের পরিবারগুলো ভেঙে ফেলার আয়োজন করেছে জাহেলিয়াত। অথচ ইসলামি জীবনব্যস্থার মূল ভিত্তি পরিবার। যেখানে সুদৃঢ় পারিবারিক কাঠামো অনুপস্থিত, সেখানে সুস্থ জীবন গঠন এবং নৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অলীক কল্পনা-বিলাস! ইসলাম সর্বাত্মকভাবে একটা সুখী ও প্রশান্তচিত্ত ‘পরিবার’ নির্মাণে তৎপর। এই গ্রন্থে ইসলামের সেই আকাঙ্ক্ষা ও করণীয় বিবৃত হয়েছে। চলুন, দেখে নিই...
পৃথিবীতে মুসলমানরাই কেবল এমন এক জাতি, যারা শ্রম ও প্রচেষ্টার সাথে একটা আধ্যাত্মিক স্পিরিট নিয়ে পথ চলে। তারা সকল শক্তির ওপর শক্তিমান এক আল্লাহর ওপর ভরসা করে। একজন মুসলমান কল্যাণকর সবকিছু অর্জনের নিমিত্তে সাধ্যমতো সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে, আর ফলাফলের জন্য আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করবে, তাঁর প্রতি আস্থা রাখবে। বিশ্বাস রাখবে-আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন, ফলাফল তা-ই হবে। আর তাতেই রয়েছে চূড়ান্ত কল্যাণ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা দৃশ্যমান কল্যাণ না-ও হতে পারে। তাওয়াক্কুল অবলম্বনকারী কখনো হতাশ হয় না, স্বপ্নভঙ্গে মুষড়ে পড়ে না। বিপদ-মুসিবতে, যুদ্ধ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না। যেকোনো দুর্বিপাক-দুর্যোগে আল্লাহ তায়ালার ওপর দৃঢ় আস্থা রাখে। ঘোর অন্ধকারে প্রত্যাশা করে উজ্জ্বল সুবহে সাদিকের। জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নে সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না। তাওয়াক্কুল এমন এক প্রতিষেধক, যা মুমিন-জীবনকে হীনম্মন্যতা থেকে মুক্ত রাখে।
বিজয় হেসে-খেলে আসে না। এলোপাতাড়ি কর্মে বিজয়ের দেখা মেলে না। মাতাল উদ্ভট উটের পিঠে চড়েও বিজয় আসে না। বিজয় এত সহজ ব্যাপার না যে হাত বাড়ালেই কাছে চলে আসবে! বিজয়ের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি, পথ-পদ্ধতি আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে তার বর্ণনা দিয়েছেন। বান্দাদের সতর্ক করেছেন। নিয়ম-নীতি ও কৌশল মেনে চলার প্রতি জোর দিয়েছেন।
তাকফির নিয়ে বাড়াবাড়ি (পেপারব্যাক) - কাফির ঘোষণার শরঈ দৃষ্টিভঙ্গি; এতদ্সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি ও সীমালঙ্ঘন: একজন দাঈ ও বিচারকের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। বিচারককে অবশ্যই মানুষের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনুসন্ধান করতে হয়, যেন পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দিতে পারেন। সেজন্য বিচারককে বিচারাধীন মানুষজন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণ প্রয়োগ করতে হয়, তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে হয়। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ হলে বিচারক তাদের নির্দোষ ঘোষণা করতে কিংবা দোষী হলে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারেন। অন্যদিকে একজন দাঈর কর্তব্য হলো-তিনি সবাইকে আহ্বান করবেন, সবার কাছে তাঁর বার্তাগুলো পৌঁছে দেবেন, সবাইকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসবেন। একজন দাঈ ইসলামের বাণীকে সমগ্র মানবজাতির কাছে সাধ্যমতো ছড়িয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করবেন-যাতে একজন পথভ্রষ্ট ব্যক্তি পথ খুঁজে পায়, পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তওবা করে ফিরে আসে, মূর্খ ব্যক্তি শেখার সুযোগ পায়; এমনকী একজন অমুসলিম ব্যক্তিও যেন ইসলামকে সাদরে গ্রহণ করার আগ্রহ অনুভব করে। কোনো ভুলকারীর শাস্তি কী হবে, সেটি নিয়ে কখনো দাঈ কাজ করে না; বরং কীভাবে সেই ভুলকারী ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয় নিয়েই দাঈ কাজ করে। একজন দাঈ কখনো মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করার জন্য মুরতাদ খুঁজে বেড়ায় না; বরং একজন মুরতাদকে ইসলামের সংরক্ষিত আঙিনায় ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চালানোকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মনে করে।