তামিম আনসারী রচিত ‘Destiny Disrupted: History Of The World Through Islamic Eyes’ বইটি ২০০৯ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক দিন সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১০ সালে বইটি নর্থান ক্যালিফোর্নিয়া বুক অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। মূলত পশ্চিমাদের জানা ইতিহাসের বাইরে এই বইটিতে ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের সাল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু করে ২০০১ সালে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪শত বছরের ঘটনাবলীকে এখানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পশ্চিমা বিকৃত ইতিহাস নয়, বরং ঘটনার শেকড়ে গিয়ে সত্যিকারের ইতিহাসকে নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বইটিকে ইসলামি ইতিহাসের এনসাইক্লোপিডিয়া বললেও অত্যুক্তি হবে না। বইটির পাতায় পাতায় আছে তথ্য, আছে শিহরণ জাগানো গল্প, আছে ঘটনার সামনের ও পেছনের প্রেক্ষাপটের চমৎকার পর্যালোচনা। পাঠকেরা বইটি পড়ে আনন্দ পাবেন নিঃসন্দেহে, তবে তার চেয়ে বড় কথা পাঠকবৃন্দ এই বইটি পড়ে আরও পরিণত হবেন, তাদের জ্ঞানের ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। ইসলামের চোখে তারা ইতিহাসকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন।
হামাস। বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক মুক্তি আন্দোলনের নাম। হামাসের চোখ দিয়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা আল কুদুস মুক্তির স্বপ্ন দেখে। জাতির বেঈমান বড়ো একটা অংশ যখন জয়োনবাদীদের সঙ্গে গোপন সমঝোতা ও আপসকামীতায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুরন্ত সাহসে গর্জে ওঠে আমৃত্যু লড়াকু হামাস যোদ্ধারা। মজলুম জননেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনের হাত ধরে জন্ম নেওয়া হামাস এখন রক্তাক্ত জনপদ ফিলিস্তিনের মুক্তির লড়াইয়ে আশা-ভরসার একমাত্র প্রতীকে পরিণত হয়েছে। আজকের এই অবস্থানে পৌঁছতে অসংখ্য শাহাদাত এবং ত্যাগের নজরানা পেশ করতে হয়েছে। ইজরাইলের মতো ঘৃণ্য অপশক্তির মোকাবিলায় হামাস যে দুঃসাহসিতার পরিচয় দিচ্ছে, তা অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাভাষী পাঠকবৃন্দ হামাস নিয়ে বেশ অনুসিন্ধুৎসু। বাস্তবে বাংলা ভাষায় এই বৈপ্লবিক মুক্তি আন্দোলন নিয়ে সেই অর্থে কোনো একাডেমিক কাজ হয়নি। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এই মুক্তি আন্দোলনকে বাংলাভাষীদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন তরুণ লেখক ও অনুবাদক জনাব আলী আহমদ মাবরুর। অনেক পরিশ্রম করে তুলে এনেছেন হামাস সম্পর্কিত অনেক আজানা তথ্য ও ঘটনা। দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান অনেক ঘটনা পড়ে পাঠকবৃজন্দ কখনো অশ্রুসিক্ত হবেন, কখনো রিক্ত হবেন, কখনো-বা শিহরণ জাগবে রক্তকণিকায়।
মুসলিম চরিত্র - সুন্নাহর চোখে চরিত্র গঠনের অবকাঠামো দীর্ঘ সময় ধরে তামাম দুনিয়ায় তাদের ঘোড়ার খুর ছুটত। গৌরবান্বিত মুসলিম জাতির আজকের দিনে ক্রমান্বয়ে ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণিত হওয়ার অন্যতম মৌলিক কারণ নৈতিক চরিত্রের চরম অবনতি। মুসলিম জাতিসত্তার অতীত শৌর্যবীর্য ও নেতৃত্বের প্রধান হাতিয়ার ছিল এক আল্লাহতে বিশ্বাস আর দৃঢ় চারিত্রিক শক্তি। একঝাঁক নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষের চারিত্রিক ছোঁয়ায় অসভ্য পৃথিবী সভ্য হয়ে উঠেছিল; পুরো দুনিয়া তাদের বরণ করে নিয়েছিল। কালের আবর্তে পার্থিব মোহে ঢিলে হয়ে যায় এই শক্তির বাঁধন, ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে মুসলিম উম্মাহ। সেখানে জন্ম নেয় নানা চারিত্রিক রোগ-জীবাণু, আর তাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে মুসলিম বিশ্ব। এক সময়ের প্রতাপশালী জাতি ক্রিড়নক হয়ে পড়ে অধঃপতিত জাতিসমূহের বহুডোরে। বিশৃঙ্খলতার সমুদ্রমাঝে ডুবে থাকা সত্ত্বেও আমরা অতীতের সোনালি অধ্যায় ফিরে পাওয়ার লড়াই করতে চাই। এই লড়াইয়ের মোক্ষম অস্ত্র- চরিত্র। নৈতিক চরিত্রে বলিয়ান হওয়া ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো একেবারেই অসম্ভব। আমাদের চরিত্রের মডেল সাইয়্যেদুল মুরসালির রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে আজমাইন। এই গ্রন্থে আমরা সুন্নাহর চোখে চরিত্র গঠনের অবকাঠামো দেখব।
স্টোরি অব বিগিনিং (হার্ডকভার) - আলমে আরওয়াহ থেকে দুনিয়া সফরের ইতিহাস জনপ্রিয় দা’ঈ ইলাল্লাহ ওমর সুলেইমান ‘The Beginning & The Ending’ শিরোনামে ৭০ পর্বের একটি সিরিজ বক্তব্য প্রদান করেন। ইবনে কাসিরের বিখ্যাত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে এই সিরিজ বক্তব্য তিনি এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। হাশরের দিন, হাশরের দিন সম্পর্কিত বিজ্ঞান, জান্নাত, জাহান্নামের বিষয়গুলো খুবই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কীভাবে মানুষ, বিশাল পৃথিবী, ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল, ফেরেশতা, জিন, প্রাণিকুল সৃষ্টি হলো, সে প্রসঙ্গে অত্যন্ত প্রাণবন্ত আলোচনা করা হয়েছে। রাসূল ﷺ-এর জীবনের নানা অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে অনুপম ভঙ্গিতে। রাসূল ﷺ-এর ওফাতপরবর্তী শতাব্দীগুলোতে ঘটে যাওয়া বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; বিশেষত সেই শতাব্দীতে উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহের সাথে ইসলামের ইতিহাস কীভাবে আবর্তিত হলো, তাও আলোচিত হয়েছে। তার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে খুবই সাবলীল ভাষায় বর্তমান সময়টাকেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
বিশ্বসভ্যতা নির্মাণের একচ্ছত্র দাবিদার পশ্চিমারা। সেই দাবিকে ফোকাস করে তাদের হাতে নির্মিত ইতিহাসে একপাক্ষিক ভাষ্যের জয়জয়কার। খুব সচেতনভাবে তারা এড়িয়ে গেছেন মুসলমানদের অবদান। এই ধরনের অভিব্যক্তি মূলত ইতিহাসের জঘন্যতম বিকৃতি। তবে পশ্চিমারা ইতিহাসের লম্বা একটি সময়কে যতই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, ইতিহাস কখনোই নীরব ছিল না; থাকার সুযোগও নেই।এর বিপরীতে আমাদের যদি সভ্যতা বিনির্মাণে ইসলাম ও মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে, তাহলে পশ্চিমা জগতের জাহেলিয়াতি ও মিথ্যা দাবিকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারর। সেইসঙ্গে মুসলমানদের সম্বন্ধে যে ধরনের সহিংস, বর্বর ও অসভ্য ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে একটি মোক্ষম জবাব দিতে সক্ষম হব। দেখাতে পারব আমাদের অসংখ্য সুপার হিরো কী পরিমাণ পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ, বিবেচনাবোধ ও পেশাদারিত্বের মধ্য দিয়ে নিজেদের কাজগুলোকে সম্পন্ন করে গেছেন। ‘বিশ^সভ্যতা বিনির্মাণে মুসলমানদের অবদান’ বইটি তারই ক্ষুদ্রতম প্রয়াস।