মুক্তির মিছিল শুরু হলো ফিলিস্তিনে। আহমদ মুসারা ইজরাইলি গোয়েন্দা সিনবেথের সাংকেতিক পরিভাষা বুঝতে পেরেছিল। টের পেয়ে সিনবেথ পালটে ফেলে কমিউনিকেশন কোড। তখন এগিয়ে এলো ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকালীন কর্ণধার ডেভিড বেনগুরিয়ানের মেয়ে এমিলিয়া। কর্নেল মাহমুদের প্রতি দুর্বল এমিলিয়া ইসলাম গ্রহণ করে। সরবরাহ করে নতুন সাংকেতিক কোড। ইহুদি গোয়েন্দারা এমিলিয়াকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। খবর পেয়ে আহমদ মুসা উদ্ধার করে তাকে। স্বাধীন হয় ফিলিস্তিন। কিন্তু বন্দি হয় আহমদ মুসা। তাকে নেওয়া হয় মিন্দানাওয়ে। সেখান থেকে মুক্ত হয় সে। একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে থাকে। আহমদ মুসাকে হাতের মুঠোয় পেতে মুর হামসার ছোটো বোন শিরিকে অপহরণ করা হয়। শিরিকে উদ্ধার করতে আহমদ মুসাকে যেতে হয় জাম্বুয়াঙ্গোতে। সাগরপথে যাত্রাকালে আবারও বন্দি হয় আহমদ মুসা। শিরিকে হাজির করা হয় তার সামনে। নিহত হয় শিরি। সেখান থেকে আহমদ মুসাকে কফিনে ভরে প্লেনে করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্লেন ক্রাশ করে কফিন পড়ে যায় পামিরের আল্লাহ বকস গ্রামে। দৃশ্যপটে চলে আসে ফতিমা ফারহানা, হাসান তারিক, আয়েশা আলিয়েভা, উমর জামিলভ, কর্নেল কুতাইবারা। বরফে মোড়া পামির, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তানের পাথুরে মালভ‚মি, আগুনঝরা মরুমাঠ আর আমুদরিয়া, শিরদরিয়ার স্বচ্ছ নীল পানি সবটা জুড়ে প্রচণ্ড একটা ঝড়। ফ্র-এর অসুর শক্তির সঙ্গে সাইমুমের বিশ্বাসী শক্তির এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত। এ সংঘাতের পরিণতি কী? আহমদ মুসা, হাসান তারিকরা এক অসম্ভব এবং অসম মিশনে হাত দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাইচ- মজলুম মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।
সুবহে সাদিক। পিয়ালং উপত্যকায় শুরু হলো এক নতুন ইতিহাস। ফ্র-এর দলটি রওনা দিলো পিয়ালং উপত্যকায়। যেকোনো মূল্যে আহমদ মুসাকে হাতে পেতে জেনারেল বোরিস একেবারেই মরিয়া হয়ে উঠল। ঘটনাচক্রে আহমদ মুসা বন্দি হয় জেনারেল বরিসের হাতে। কিন্তু যাকে ঘিরে ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে, সে কি আর বন্দিত্বকে বয়ে বেড়াতে পারে? এদিকে হাসান তারিক, আব্দুল্লায়েভ পৌঁছে যায় তিয়েনশানের ওপারে। অন্যদিকে অপেক্ষার প্রহর গুনছে ফাতেমা ফারহানা আর আয়েশা আলিয়েভা। শিহেজি উপত্যকার নতুন এক ট্রাজেডি। আর সিংকিয়াং-এর ভাগ্য অনিশ্চিত। ইতোমধ্যেই জেনারেল বোরিস এক হাত হারিয়ে ভয়ংকর প্রতিশোধের নেশায় ফিরে এসেছে উরুমচিতে। এবার টার্গেট আহমদ মুসার পাশাপাশি মেইলিগুলি। এমতাবস্থায় ককেশাস থেকে আহমদ মুসার কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি চিঠি এলো। চিঠি পেয়েই আহমদ মুসা শুরু করল তার মিশন। ছুটে চলছে আহমদ মুসার গাড়ি। প্রসারিত দৃষ্টিতে দেখছে, ইয়েরেভেন শুধু আর্মেনিয়ার রাজধানী নয়; কমিউনিস্ট এবং খ্রিষ্টানদের শক্তিসন্তান হেয়াইট উলফ-এর রহস্যময় জায়গা। ককেশাসের নিপীড়িত মুসলমানরা মুক্তির প্রহর গুনছে। অভাব কেবল একজন সিপাহসালারের। ঠিক সেই মুহুর্তে দৃশ্যপটে হাজির আহমদ মুসা। তারপর... তারপর ককেশাসের কান্না থামতে না থামতেই যুগোশ্লাভেনেস্কার মুসলিম আজাদি আন্দোলনের উত্তরসূরি বলকানের হাসান সেনজিকের আর্তনাদ। দাদা আর বাবাকে হত্যা করার পর তাকেও খুঁজছে হায়েনারা। কী হতে যাচ্ছে? চলুন, খুঁজতে শুরু করি।
স্পেনের বিধ্বস্ত জনপদে নতুন করে গজাচ্ছিল চারাগাছ। ঠিক সেই মুহুর্তে এলো এক ভয়ংকর বিপর্যয়। ছুটে এলো আহমদ মুসা। আর এদিকে ফাঁদ যেন পাতাই ছিল। নিষ্ঠুর এক শত্রুর জালে পাকা ফলের মতো পড়ে গেল সে। শুরু হলো সংঘাত। একদিকে লাল রক্তের হৃদয়হীন তৃষ্ণা আর অন্যদিকে হৃদয় দেওয়া-নেওয়ার রোমাঞ্চকর দ্বন্দ্ব। এর মধ্য দিয়েই চলছে আহমদ মুসার মিশন। কিন্তু গোয়াদেল কুইভারের অশ্রুতে সেই মিশন কি পিছলে পড়বে? ক্লু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যান মাদ্রিদে মুসলমানদের নতুন অস্তিত্ব এবং স্পেনের স্মৃতিচিহ্নগুলো মুছে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে মজলুম মরিসকোরাও জেগে উঠেছে। নিউ ফ্যালকন অব স্পেনের আশাদীপ্ত উত্থান হলো। মুসলিম আন্দালুসিয়ার বিরান প্রান্তরে গোয়াদেল কুইভারের তীরে কি শুরু হচ্ছে আরেকটি পরিবর্তন? কে জিতবে এই পরিবর্তনের লড়াইয়ে? মরিসকো বিজ্ঞানী জোয়ান ও জেনকে নিয়ে চলা ঘটনার শেষ কোথায়? আহমদ মুসা কি মরিকোদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরেছিল? গোয়াদেল কুইভার কি নতুন রাত উপহার দিতে পারবে? স্পেনের মিশন শেষ না হতেই সিংকিয়াং-এ নতুন এক খেলা শুরু হলো। রেড ড্রাগন ও ফ্র-এর খপ্পরে সিংকিয়াং গভর্নর। মুসলমানদের ওপর আবারও শুরু হয়েছে নির্যাতন ও নিপীড়ন। বন্দি হলো আহমদ মুসার স্ত্রী মেইলিগুলি। ছুটল আহমদ মুসা। বন্দি হলো তাদের হাতে। আহমদ মুসাকে বাঁচাতে গুলিবিদ্ধ হলো মেইলিগুলি। তারপর...
শেষ পর্যন্ত মধ্য এশিয়ার পরমাণু বিজ্ঞানী নভিয়েভকে বাঁচাতে পারল না আহমদ মুসা। ভয়ংকর এক রুশ ষড়যন্ত্র মধ্য এশিয়ার মুসলিম প্রজাতন্ত্রকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে। আহমদ মুসা কিছুতেই ওদের গায়ে হাত দিতে পারছে না। কেন তাদের এই ষড়যন্ত্র? কী চায় তারা? কেন এই কালো মেঘ? হঠাৎ করে সামনে চলে আসলো রুশ কন্যা এলেনা ও তাতিয়ানা। শুরু হলো গ্রেট বিয়ারের সঙ্গে আহমদ মুসার সংঘর্ষ। ‘ব্লাক ক্রস’ ক্রুসেডের মতোই নানা জায়গায় ছোবল মারছে। তারই একটা ছোবল গিয়ে পড়ল ক্যামেরুনে, ক্যামেরুন থেকে ফ্রান্সে। ওমর বায়ার সন্ধানে গিয়ে সংঘাতের মুখোমুখি হলো আহমদ মুসা। এই সংঘাত একজন ব্যক্তি বনাম একটি সন্ত্রাসী সা¤্রাজ্যের। ঊর্মিমালার মতো একের পর এক সংকট ঘিরে ধরেছে আহমদ মুসাকে। কী করবে সে? ওমর বায়া কি বাঁচতে পারবে? প্রমাণ হাতে নিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী একটি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য একাই অগ্রসর হলো আহমদ মুসা। শুরু হলো ক্রস এবং ক্রিসেন্টের সংঘাত। এদিকে আফ্রিকায় অন্ধকারের আড়ালে চলছে ভয়ানক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র আফ্রিকার পশ্চিম উপক‚ল ছাড়িয়ে গ্রাস করেছে দক্ষিণ ক্যামেরুনকে। ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে রয়েছে কিংডোম অব ক্রাইস্ট (কোক)। আর কোক-এর পেছনে রয়েছে খ্রিষ্টান জঙ্গি সংগঠন ওকুয়া। ষড়যন্ত্র রোধ করতে এগিয়ে আসে আহমদ মুসা। লক্ষ্য শুধু ওমর বায়া এবং ড. ডিফরেজিসের মুক্তি নয়; লাখো মানুষ।
ব্যাপক বিপর্যয়ে ক্ষ্যাপা কুকুর হয়ে উঠেছে ব্লাক ক্রস। জ্বলে উঠেছে তাদের হিংসার লেলিহান শিখা। তারই একটি স্ফুলিঙ্গ আঘাত হানল আফ্রিকার গভীরে। এক সেমিনার থেকে কিডন্যাপ করা হলো বিশ্ব বরেণ্য কয়েকজন মুসলিম নেতাকে। সবাই জানে তারা মৃত কিš‘ বাস্তবে তারা পণবন্দি হলো কঙ্গোর কালো বুকে। আহমদ মুসা আত্মসমর্পণ করলেই মিলবে মুক্তি। এবার কী করবে সে? আত্মসমর্পণ নাকি উদ্ধার? একের পর এক মুসলিম সাংবাদিক মরছে ফ্রি ওয়াল্ড টিভি এবং ওয়ার্ল্ড নিউ এজেন্সির। মৃত্যুর কারণ সি সি মাছির আড়ালে ভয়ংকর প্রাণীজ বিষ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল গোটা জেনেভায়। আফ্রিকা থেকে আহমদ মুসা ছুটল সুইজারল্যান্ডে। দেখতে পেল এক কালো থাবা। ঘটনাচক্রে রুশ কন্যা তাতিয়ানার আবির্ভাব। তাতিয়ানার দেওয়া দায়িত্ব ক্যাথেরিনের সন্ধান করতে গিয়ে ভয়াল এক চক্রের মুখোমুখি হলো আহমদ মুসা। হিংস্র গ্রেট বিয়ার, রুশ সরকার এবং ফরাসি পুলিশের বহুমুখী সংঘাতের মধ্যে পড়ল সে। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ক্যাথেরিনের কাছে পৌঁছতে হবে তাকে। কিন্তু কীভাবে? ছুটতে হলো মস্কোতে। অসম্ভব এক মিশন। এই অসম পরিস্থিতিতে হারিয়ে যায় ডোনা জোসেফাইন। এদিকে আটলান্টিকের ওপাড় থেকে অসহায় বালিকা লায়লা জেনিফার আর্তনাদ। ক্যারিবিয়ানর টার্কস দ্বীপপুঞ্জে কমে যাচ্ছে মুসলিম পুরুষের সংখ্যা। কেন? ছুটল আহমদ মুসা। লুকানো এক অশ্রু সাগরের ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের আবর্তে জড়িয়ে পড়ল সে। এ যেন এক রহস্য, রোমান্স, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের নতুন অধ্যায়।
আহমদ মুসা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রচণ্ড বিদ্রোহের নাম, একজন লড়াকু বীর সৈনিক। অন্ধকার ভেদ করে আলো খুঁজে ফেরেন জনপদ থেকে জনপদে। মুক্তির মিছিল নিয়ে ছুটতে থাকেন ক্লান্তিহীন। সীমানার সীমাবদ্ধতা পেড়িয়ে তিনি একজন বিশ্ব নাগরিক। কখনো সামষ্টিক লড়াই, কখনো দুঃসাহসী একক অভিযানে জুলুমের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেন। চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকি, ষড়যন্ত্র মাড়িয়ে মঞ্জিলপানে অবিচল আহমদ মুসাকে হামেশাই আবেগ, ভালোবাসা, রোমাঞ্চ এসে এক মায়াবী দুনিয়ার মুখোমুখি করে। তবুুও দুর্নিবার এগিয়ে চলেন মুক্তির পতাকাবাহী আহমদ মুসা। এ এক শিহরণ জাগানিয়া সফর!