‘আত্মহত্যার মৃত্যুদণ্ড’ উপন্যাসটি আমাদের সম-সাময়িক সমাজের প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ এবং সমাজ কাঠামো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। উপন্যাসের মূল দুই চরিত্র ইভান এবং ফুয়াদ। এদের একজন পড়াশুনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরেকজন এরই মাঝে বিসিএস দিয়ে পুলিশ অফিসার হয়ে গিয়েছে। এই দুজনের সাক্ষাৎ হয় একটি অসফল আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে। সেই আত্মহত্যার কারণ জানতে গিয়ে উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্র সামনে চলে আসে। যেখানে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরি, সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনীতি, প্রেম-ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক সম্পর্কগুলোও সামনে চলে এসেছে। সমাজের সাধারণ মানুষের না-বলা গল্পগুলো উঠে এসেছে এই উপন্যাসের মাধ্যমে।
রায়হানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। তার বাবা-মা অনেক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু তাদের মন সবসময় পড়ে থাকে বাংলাদেশে। রায়হানের বাবা-মা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলে-মেয়ে বড় হলে সবাই মিলে দেশে চলে যাবে। রায়হানকে একারণে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। দেশটা সম্পর্কে বাবা-মায়ের মুখে অনেক শুনেছে। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশে রায়হানের নানা অভিজ্ঞতা হতে থাকে। যেই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে ভাবতে শেখায়- এ কেমন সমাজব্যবস্থা। রায়হানের অভিজ্ঞতাগুলোই উঠে এসেছে এই বইতে।
ধরুন মাঝ রাতে আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ যদি কোনো আলোকিত বস্তু আপনার চোখে পড়ে, যেটি একবার সোজা মাটিতে নামছে কিংবা পাশের পুকুরে ডুবে যাচ্ছে আবার উপরে উঠে যাচ্ছে! তাহলে আপনি কী মনে করবেন? আপনি হয়ত ভাববেন, হবে হয়ত কিছু। এত ভেবে লাভ কী! কিংবা জিন-ভূত ভেবে একটু ভয় পেয়ে পরের দিন মনের আনন্দে সব ভুলে যাবেন। কিন্তু আপনার মনে এর পিছনের প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন জাগবে না, যা পৃথিবী নামক গ্রহে আবিষ্কৃত হয়েছে। পৃথিবীর আরেক প্রান্তের মানুষরা কিন্তু এইসব নিয়ে প্রশ্ন করছে, চিন্তা করছে। যে কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নিয়েই তারা প্রশ্ন করে। যার কারণে তারা বিভিন্ন নতুন জিনিস আবিস্কার করছে শিক্ষা ও সভ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে খেতে গেলে বকশিস দিচ্ছি, জিপিএ ফাইভ পেয়ে মেধাবী হয়ে যাচ্ছি! গতানুগতিক বিষয় নিয়েই আমরা ব্যস্ত। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আধুনিক বিশ্ব থেকে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এই বইটিতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক মনে করা এমন অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যে গুলো আদৌ স্বাভাবিক নয়। যেগুলো নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করা উচিত।
চেরি কে জাপানিরা বলে সাকুরা। বসন্তে এই ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে সমগ্র জাপানকে রাঙিয়ে তোলে। বিমোহিত হয় জনমন। এই উপন্যাসে ফুল এবং মানুষ, দুটো বিষয় এসেছে। অর্থাৎ এক কন্যার নাম সাকুরা। ব্যতিক্রমী একজন সে। কী অর্থে বলা হচ্ছে সেটা এই বই শেষ পর্যন্ত না পড়লে অনুমেয় নয়। বইয়ের প্রারম্ভ, মধ্যাংশ, সমাপনী এক ইস্টাইলের নয়। হৃদয়জ ভালবাসা; অতলান্ত অসীম তার প্রেমে সমুদ্র, পর্বত, আকাশ, দ্বীপপুঞ্জ ও মেঘমালারা এক হয়ে কথা বলেছে। স্বপ্ন, সংঘাত, চাওয়া-পাওয়া, লঙ্ঘন, জীবনের অসংখ্য টানাপড়েন ও কৌতুকবোধে পূর্ণ এখানটায়। সীমান্ত ছাড়িয়ে এদেশ থেকে সে দেশে। সেখান থেকে অন্যত্র! কতজীবনের গল্প এসব! পৃথিবীর পথে পথে জীবনের গল্পগুলো অবহেলায় ছড়িয়ে থাকে, আমরা কেউ দেখি; কেউ দেখি না, হিসেব করতে গিয়েও করি না।
দ্বীপদেশের এ শহরে নিশিরাত্রিতে সকলে ঘুমায়। জেগে থাকে হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকা, দোকানি, অথবা কোনো জেলখানার প্রহরী কিংবা কয়েদি। আর জাগে কয়েদির পরিবার। চারদিকে এত আলো ঝলমল করে; তবুও এরই মাঝে মানুষ কাঁদে! ৬৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে সূর্য উদয়ের ভূমি; বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সভ্য একটি দেশ জাপান। যার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করে। জুয়েল আহসান কামরুল তাঁর একত্রিশ বছরের জাপান প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে সেসব দুর্দান্ত ভালোবাসা, কলহ, বিশ্বাসঘাতকতা, সর্বোপরি জীবন-মরণের কাহিনির নিপুণ চিত্র এঁকেছেন এই উপন্যাসে।
ঘর থেকে বেরোয় তারা। পথিকের বেশে এদেশ থেকে ওদেশে হেঁটে চলে, কখনো-বা উড়ে চলে। ঘরে রেখে আসা মানুষের মুখে অন্ন যোগান দেয়ার লক্ষ্যে, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, এমন কী বরফের রাজ্য পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে, দেশের পরিবারের কাছে অর্থ প্রেরণ করে! কোনো কোনো সময়ে পরিশ্রম করতে করতে তাদের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে; তবুও তারা হাসে। হেসে হেসে অশ্রুকে ঢেকে রাখে। হৃদয়ের গহ্বরে এগিয়ে চলার স্বপ্ন তাদের! এরই মাঝে কেউ জীবনকে বিসর্জন দেয়; নিঃশেষ হয়ে যায়। কেউ আবার পৃথিবীর পথে দাঁড়িয়ে কাঁদে।