×
Categories
শৈশব এবং কৈশোরেই “কলিকাতা” বা “ক্যালকাটা” অথবা “কলকাতা” নামগুলোর সঙ্গে পরিচয়। কিন্তু কোনোদিন সেখানে যাওয়া হবে এমনটি কল্পনাও করিনি। দেশে থাকতে কলিকাতা, কলকাতা সম্পর্কে নানা গল্প শুনেছি, যেমন কলকাতা মহানগর বটে কিন্তু নোংরা, মশামাছি দিনরাত ভন ভন করছে, চরম দারিদ্র্য, রাস্তাঘাটে মানুষ মরে থাকলেও কেউ ফিরে তাকায় না ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, বেশকিছু চলচ্চিত্রেও এইসব চালচিত্র দেখার সুযোগ হয়েছে। গল্প, উপন্যাস, আকাশবাণীর নাটক তো আছেই। যেকারণে আমার কলকাতা সম্পর্কে একটা অনীহা ছিল, আদৌ তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু কলকাতা যে ভারত উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক নগর এবং বহুবছর ব্রিটিশ-ভারতের রাজধানী হিসেবে দেশে-বিদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল স্থান করে নিয়েছে এবং নগরটি বাঙালি জাতির সংস্কৃতির রাজধানীও বটে এই বিষয়ে আমি সচেতন ছিলাম। আধুনিক শিক্ষা, রাজনীতি, চিকিৎসা, সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, স্থাপত্য, রাজপ্রাসাদ, ধর্মচর্চা, ফ্যাশন, চলচ্চিত্র, নাটক-থিয়েটার, গ্রন্থবাজার, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাবারে, বার, পতিতালয়, ক্রীড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য– মোদ্দাকথা একটি আধুনিক মহানগরের অনস্বীকার্য উপদানসমূহ বলতে যা যা বোঝায় সবই কলকাতায় ব্রিটিশ আমলেই গড়ে উঠেছে, সেই তুলনায় পূর্ববাংলার ঢাকায় অনেক কিছুই গড়ে ওঠেনি। রাজধানী হিসেবে কলিকাতাই বরাবর প্রাধান্য পেয়েছে। প্রতিভাবিকাশের জন্য, প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সংমিশ্রণে অভূতপূর্ব বাঙালি সংস্কৃতির স্বাদ গ্রহণের জন্য আজও নতুন প্রজন্মের বাঙালি, বিদেশি তরুণ প্রজন্ম এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিবিদ এবং গবেষকরা কলকাতার প্রতি আকৃষ্ট, কারণ তিনশত বছরের পুরনো এই মহানগরটির আলাদা একটি ভাবমূর্তি বিদ্যমান বহির্বিশ্বে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই আধুনিক মহানগরটির পরিবেশ, সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের বহুবিধ পথপন্থা গড়ে তোলার পেছনে পূর্ববঙ্গের জমিদার, রাজা-মহারাজা, রানি-মহারানি এবং ধনী ব্যবসায়ীদের অবদান স্থানীয়দের চেয়ে ঢের-ঢের বেশি। ইতিহাস ঘাঁটলেই তা সহজে প্রমাণিত হবে। একদা ‘কলিকাতা’ বা ‘ক্যালকাটা’র জন্য খোদ ইংরেজরাই আত্মতুষ্টি লাভ করতেন। ইংরেজদের লন্ডন নগরীর পরেই স্থান ছিল কলিকাতার (The Second City of the British Empire) এবং ইংরেজ ও য়োরোপীয় অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ বিদেশিরা বলতেন, প্রাসাদনগরী কলিকাতা (The City of Palaces)। কারণ রাজপথগুলো ছিল বিচিত্র হর্ম্যমালায় সুসজ্জিত, যা কিনা বিদেশি পর্যটকদেরকে বিস্মিত করত। সেইসব অসামান্য নান্দনিক স্থাপত্য আজও কলকাতার ঐতিহ্য ও আভিজাত্যকে সগৌরবে উপস্থাপিত করছে। বলাই বাহুল্য, প্রথম দর্শনেই সুরম্য কলকাতা আমাকে বিস্মিত করেছিল ২০০৬ সালে প্রথম ভ্রমণেই। তবুও বলা হয়ে থাকে যে, যেরকম সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে লন্ডন, প্যারিস, মস্কো, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক অথবা প্রাচ্যের টোকিও গড়ে উঠেছে শতবর্ষ আগেই তেমন করে কলিকাতা বা ক্যালকাটা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ শহরটি ক্রমে ক্রমে সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে বিধিবিধান মানা যায়নি বা পরিকল্পনা করাও সম্ভব হয়নি ক্রমবর্ধমান বহিরাগত জনবৃদ্ধির কারণে। তথাপি, যা আছে কলকাতায় এবং ক্রমশ আরও আধুনিক পরিবেশ গড়ে তোলার পেছনে কর্তৃপক্ষের ক্রমপ্রচেষ্টা বিদ্যমান যা দেশি-বিদেশিদেরকে আকৃষ্ট করে চলেছে। যেকারণে কলকাতায় বহু বিদেশি পর্যটকের আগমন যেমন ক্রমবর্ধমান তেমনি বসতগেড়েবসা বিদেশির সংখ্যাও কম নয়। সত্যিকথা বলতে কি, দ্বিতীয়বার ভ্রমণের সময়ই আমার প্রবল ইচ্ছে জেগেছিল একটা জায়গা কিনে বাড়ি করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার বাঙালি এবং বাংলাদেশের বাঙালির তুলনা করলে যে পার্থক্যটি চোখে পড়ে তা হলো– ধর্ম, সাহিত্য, সঙ্গীত, স্পষ্টভাষণ তথা সামগ্রীক সংস্কৃতিচর্চার অবাধ পরিবেশ, উদ্যোগ ও নতুনত্ব কলকাতা মহানগরে যেভাবে পরিলক্ষিত হয় বাংলাদেশে তার পরিবেশ নিতান্তই সীমিত। যেকারণে কলকাতা আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময়, এটা বিদেশিরাও স্বীকার করে থাকেন। চারিত্রিক দিক দিয়ে কলকাতায় খেয়ালিপনা আছে, মারামারি-কাটাকাটি আছে, দুর্নীতি আছে, রাজনৈতিক দলগত সন্ত্রাস-ত্রাস আছে, বন্ধ্-হরতালও বিদ্যমান কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ ও মর্যাদা বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণে উন্নত এবং বাস্তববাদী। পাঁচবার ভ্রমণে যা বার বার আমাকে পীড়া দিয়েছে তা হল, সবত্রই আবর্জনা চোখে পড়েছে, মশামাছি দিনরাত উত্যক্ত করেছে। আর মানসিকভাবে যা আমাকে ব্যথিত করেছে, বিপর্যস্ত করেছে তা হল, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত যেসকল হিন্দু ওপারে গিয়েছে তাদের অনেকেই নানা কারণে চরম দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত। দেশত্যাগের মতো যন্ত্রণাময় অসুখের যে কোনো চিকিৎসা নেই এটা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি কলকাতাসহ উপশহরগুলোতে ভ্রমণ করে। উক্ত পাঁচবারের ভ্রমণে স্বল্প অবস্থান যেমন ছিল তেমনি দীর্ঘাবস্থানও ছিল। শতশত বছরের প্রাতঃস্মরণীয় গুণী, প্রতিভাবান এবং দিকনির্দেশক বাঙালির বিচরণক্ষেত্র হিসেবে কলকাতায় তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত অনেক রাজপথ, পথঘাট, ভবন, স্থান স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙালি জাতির শিক্ষা, মেধা, প্রতিভা এবং পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন পাশ্চাত্যের রেনেসাঁর চেয়ে কোনোভাবেই কম ছিল না! যা আজ গবেষণার বিষয় শুধু নয়, পিছিয়ে পড়া ধর্মীয় সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ বাঙালিকে আধুনিকতার দিকে, ঐতিহ্যিক সহমর্মিতা, পারস্পরিক সহিষ্ণুতা সর্বোপরি জাতিগত আত্মপরিচয়ের দিকে মোড় ফেরানোর একটা প্রবল ইচ্ছে জাগায় কলকাতায় পা রাখলেই। এটাই কলকাতার আত্মিক শক্তি যা পরিবর্তনের জোয়ারে বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও হারিয়ে যাবে না। উদার, স্বপ্নচারী এবং প্রেরণাদায়ক অনেকের সঙ্গেই কলকাতার বিভিন্ন শহরে সাক্ষাৎ ঘটেছে, মতবিনিময় হয়েছে, একসঙ্গে কিছু কাজও করার সৌভাগ্য হয়েছে এই ভ্রমণগুলোর সময় যা আজ কেবলি স্মৃতি, অমূল্য অনুভব এবং চলমান ইতিহাসের অংশ বলে মনে করি যা “কলকাতার স্মৃতিকথা” নামক এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। জানি না কার কেমন লাগবে। ভালো লাগলে আনন্দিত হব, পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে ধরে নেব আর যদি বিরক্তির কারণ কিছু থাকে তার দায়ভার আমারই, ক্ষমাপ্রার্থী। করোনার এই ক্রান্তিকালে গ্রন্থটি প্রকাশ করার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি উদীয়মান প্রকাশনা সংস্থা অনুপ্রাণন প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শ্রদ্ধেয় আবু মোহাম্মদ ইউসুফ ভাইকে। যিনি এর আগেও আমার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করে আমাকে যেমন ক্রমাগত উৎসাহিত করেছেন এবং তেমনি করেছেন চিরঋণী।
SKU: BNSP0240
490.00৳
Supported cards
Supported cards
Titleকলকাতার স্মৃতিকথা
Author
Publisher
ISBN9789849517276
Edition1st Published, 2020
Number of Pages221
Countryবাংলাদেশ
Languageবাংলা

কলকাতার স্মৃতিকথা - প্রবীর বিকাশ সরকার

490.00৳
Picture of Support | +8809613717171

Support | +8809613717171

24 Hours a Day, 7 Days a Week

Picture of Happy Return Policy

Happy Return Policy

All over Bangladesh

Picture of Worldwide Shipping

Worldwide Shipping

We Deliver Product All Over the World

Picture of Fastest Delivery

Fastest Delivery

Own Distribution Channel