সুদূর অতীত থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত হজযাত্রার অভিজ্ঞতা, যাত্রাপথের বর্ণনা এবং পবিত্র স্থানগুলো সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণ, বিভিন্ন যুগের হজযাত্রীদের স্মৃতিকথা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। হাজার বছর ধরে মানুষ পায়ে হেঁটে ও উটের পিঠে চড়ে, পরে জাহাজ, রেল আর এখন বিমানযোগে হজব্রত পালন করে আসছে। একসময় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একরকম চিরবিদায় নিয়ে হজে যাওয়া হতো। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে দীর্ঘ, দুর্গম ও বিপত্সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ছিল এই যাত্রা। পৃথিবীর একেক প্রান্ত থেকে একেক পথে এই যাত্রায় কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না সঞ্চিত হয়েছে মানুষের, যুগে যুগে। প্রাচীনকাল থেকে সাম্প্র্রতিক সময় পর্যন্ত সেই যাত্রাপথের বিবরণ এবং পুণ্যপথের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আরব দেশে যাতায়াতের স্মৃতি এবং সেখানকার পবিত্র স্থানগুলোর ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা নিয়ে লিখিত বইটি পাঠকের অন্তর্লোককে আলোকিত করবে।
সরদার ফজলুল করিমের পৃথিবী ছিল নিরন্তর অনুসন্ধানের। বিপুল বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞতা আর অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর জীবন। ফলে দিনপঞ্জিতে লেখা নিত্যদিনের খুব সাধারণ ঘটনার মধ্যেও জীবন-জগৎ আর ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর গভীর বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। সরদার ফজলুল করিমের দার্শনিক মন সারাক্ষণ জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানা জটিল জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে ফিরেছে। আপন জীবন এবং সমকালীন ইতিহাসকে পরিপ্রেক্ষিতে রেখে তিনি দেশ ও সমাজকে উপলব্ধির প্রয়াস করেছেন। সমস্যা আর সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছেন। আবার জীবন বলতেও জীবনের বহুমাত্রিক দিক উঠে এসেছে তাঁর এসব ভাবনালিপিতে। আমার পৃথিবী বইয়ে তাঁর লেখাগুলো ডায়েরি-আশ্রিত। সেগুলোকে দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, দেশ, জীবন, সাহিত্য—এভাবে পর্ববিন্যস্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্য অংশে স্থান পেয়েছে বই ও লেখক নিয়ে তাঁর পাঠানুভূতি। সরদার ফজলুল করিমের চিন্তাজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে বইটি।
"১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ঘটনা। বলা যায়, বাংলাদেশের জন্ম একঝাঁকুনিতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেয়। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা, ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিকীকরণ, সিয়াচেন হিমবাহ ও কারগিলের সংঘাত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা—সবকিছুরই পেছনে ভূমিকা রাখে ১৯৭১ সালের ওই উত্তাল ৯ মাস। প্রচলিত বয়ানের বিপরীতে শ্রীনাথ রাঘবন দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের সৃষ্টি কোনো পূর্বনির্ধারিত ঘটনা নয়। এই ঘটনাকে বিচার করতে হবে সেই সময়ের বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতা, স্নায়ুযুদ্ধ এবং জায়মান বিশ্বায়নের পটভূমিতে রেখে। উপরন্তু এ ঘটনাজুড়ে আছেন শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, রিচার্ড নিক্সন, হেনরি কিসিঞ্জার, চৌ এন লাই, জুলফিকার আলী ভুট্টো, তারিক আলী, জর্জ হ্যারিসন, রবি শঙ্কর ও বব ডিলানের মতো ব্যক্তিত্বরা। রাঘবনের লেখা এই মৌলিক ইতিহাসগ্রন্থটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট এবং ঘটনার ফলাফল বা প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বুঝতে পাঠককে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।"
অভিজাত পরিবারে জন্মেছিলেন কল্যাণী রায়। বাবা ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি। কল্যাণী ভালোবেসে একজনকে বিয়ে করেছিলেন, নাম বদলে হয়েছিলেন মমতাজ বেগম। তাঁর রায়বাহাদুর বাবা বিয়েটা মেনে নেননি। ফলে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। দেশভাগের পর শিশুকন্যাকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে পূর্ববঙ্গে চলে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের মর্গান গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই নিজ স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে সরকারের রোষানলে পড়ে জেলে যেতে হয় তাঁকে। স্বামীর কথামতো দাসখত দিয়ে কারামুক্ত হতে চাননি। কারাগারে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের সঙ্গে একই সেলে ছিলেন মমতাজ। এই কারাবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনদৃষ্টি ও চেতনাকে এমনভাবে গড়ে দেয় যে ৪৪ বছরের আয়ুর বাকি দিনগুলো তিনি ব্যক্তিগত জীবনযাপনের ঊর্ধ্বে উঠে সমষ্টির কল্যাণব্রতে উৎসর্গ করেছিলেন। মমতাজ বেগমের জীবনে রয়েছে একই সঙ্গে এপিকের বিস্তার ও গভীরতা। তাঁর সেই অসাধারণ জীবন নিয়ে লেখা এই উপন্যাসটিকে আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবময় সময়ের দলিলও বলা যায়।
"সুন্দরবনে বাঘের সন্ধানে" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘের চোখের দিকে তাকিয়েছেন কখনো? কল্পনা করুন, ওই বাঘ আর আপনার মাঝখানে কোনো লোহার বেড়া নেই। শুধু একজোড়া জ্বলজ্বলে সোনালি চোখ তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। সে চাউনির যে কী মহিমা-একমাত্র বাঘের নিজের রাজ্যে দাড়িয়ে দেখলে তা বুঝতে পারবেন। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে লেখক মনিরুল খান অনেকবার গিয়েছেন সে রাজ্যে। মুখোমুখি হয়েছেন সুন্দরবনের রাজাধিরাজের। শৈশবে বাবা সাদত আলী খানের মুখে বুনো বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছেন বারবার। এখন মানুষ তার কাছে বাঘ দেখার গল্প শুনতে চায়। গল্পের মতো অভূতপূর্ব সব স্মৃতিচারণা মূলত সেই বাঘেরই মহিমাকীর্তন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিকথা প্রচুর লেখা হয়েছে। কিন্তু দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর বাহাত্তরের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিবরণ বিশেষ পাওয়া যায় না। একটি বড় যুদ্ধ ও রক্তপাতের পর এ দেশের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠভাবে জানা যাবে শওকত ওসমানের এই স্মৃতিলিপি থেকে। তাঁর ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের কথাও লিখেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পুরাে সময়টাই তিনি ছিলেন ভারতে, কলকাতায়। সেখানে প্রবাসী বাঙালিদের জীবনযাপন কাছে থেকে দেখেছেন তাদের অনেকের আচার-আচরণ সম্পর্কে কৌতুহলােদ্দীপক বিবরণ রয়েছে এ বইয়ে।