ওদের মা কখনো গান করেননি কেন? মাকে ওদের মনে পড়ে না। শুধু চরাচর ভেঙে যখন জ্যোৎস্না নামে, তখন মায়ের শাড়ির আঁচলের গন্ধ পায় ওরা। টিনে ছাওয়া বাংলো ধরনের বাড়ি, বাড়ির সামনে বাগান, কাঁটামেহেদির বেড়া, কামিনী ফুলের পাগল-করা গন্ধ—এ-ই ছিল সত্তরের দশকের মফস্সল শহরগুলো। তেমনই এক শহরে দুই মায়ের সংসারে বড় হচ্ছিল চার ভাইবোন। চোরকাঁটাভরা মাঠে খেলা, বৃষ্টিতে তুমুল ভেজা শৈশব। টিউবওয়েলের নিচে গোসল, কয়লা দিয়ে দাঁত-মাজার শৈশব। কিন্তু ওদের মুক্তিযোদ্ধা বাবা সরকারি চাকরি হারান অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করার অপরাধে। কারাগারে যেতে হয় বাবাকে। বড় ভাই বাবুল সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নিজের ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে। কিন্তু এর চেয়েও ভয়াবহ সংবাদ দেন ছোটমা, হাসপাতালে শেষ শয্যায়। জানিয়ে যান, কেন মা কখনো গান করেননি। কে তাঁর কণ্ঠ থেকে গান নিংড়ে বের করে নিয়েছিল!
প্রত্যেক মানুষের জীবনের গল্প আলাদা। ভিন্ন তাদের সংকটের ধরনও। এ বইয়ের গল্পগুলো সংকটে জর্জরিত এমন কিছু মানুষকে ঘিরে। যাদের জীবন পাওয়া না-পাওয়ার দোলাচল, বিরূপ সামাজবাস্তবতা, মহামারির প্রকোপ, সাংসারিক টানাপোড়েন ও মানসিক হতাশার মধ্যে হোঁচট খায় পদে পদে। প্রত্যেক মানুষের জীবন যেন একেকটা আলাদা গল্প নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমাদের চারপাশে। এই গল্পগুলোও তেমনই। এখানে দেখা মেলে নানা সমস্যায় জর্জরিত বিহ্বল কিছু মানুষের জীবনের নানামাত্রিক ছবি, বেঁচে থাকার মর্মস্পর্শী কাহিনি। পাওয়া না-পাওয়ার দোলাচল, বিরূপ সমাজবাস্তবতা, মহামারিসহ আধিব্যাধির আক্রমণ, সাংসারিক টানাপোড়েন এসব মানুষের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু মানুষ কি হেরে যায় এসব প্রতিকূলতার কাছে? পরাজয়ই কি জীবনের চরম সত্য? বইয়ের গল্পগুলোর মধ্যেই পাঠক এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
জানা-অজানা প্রাণবৈচিত্রে্যর এক সমৃদ্ধ ভান্ডার পার্বত্য চট্টগ্রাম। এর কোনো বিস্তারিত জরিপ আজও হয়নি। লেখক সেই প্রাণবৈচিত্রে্যর সন্ধানে চষে বেড়িয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়শ্রেণি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণ, তুলেছেন বহু ছবি। পেয়েছেন বাংলাদেশের জন্য নতুন অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর সন্ধান। আবার চোখের সামনেই প্রাণবৈচিত্রে্যসমৃদ্ধ অনেক প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হতেও দেখেছেন তিনি। দেখেছেন কীভাবে সেখানকার বন্য প্রাণীরা ক্রমে তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে। লেখকের সে অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ বই। প্রকৃতি আর তার মাঝে বাস করা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য মমতায় সিক্ত রচনাগুলো পাঠককে শখের ভ্রমণের গণ্ডি পেরিয়ে অভিজ্ঞতার এক নতুন জগতে নিয়ে যাবে। সে আগ্রহ ও সচেতনতা দেশের প্রাণবৈচিত্রে্যকে ধ্বংস থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জন্য নতুন বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই দুর্গম অরণ্য-পাহাড়ে লেখকের দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনি নিয়ে এ বই।
"এ অঞ্চলের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয় পনেরো শতকের শেষ দিকে, যখন ইউরোপীয়রা ভারতবর্ষে আসতে শুরু করে। তারা নিজেদের মধ্যে বাজার ও ভূখণ্ড দখলের প্রতিযোগিতায় নামে। তাদের পক্ষে-বিপক্ষে থাকে এদেশীয় সামন্ত শাসকেরা। একপর্যায়ে অঞ্চলটি হয় ব্রিটিশ উপনিবেশ। পরস্পর-বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলোকে একসঙ্গে জুড়ে তারা আধুনিক ভারত রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে। প্রায় দু’শ বছর রাজত্ব করে তারা চলে যায়। আমাদের ইতিহাসের এ পর্ব নানান উত্থান-পতনের সাক্ষী—ষড়যন্ত্র, যুদ্ধ, বিদ্রোহ আর বিয়োগান্ত ঘটনায় ভরা। সেটা ছিল মধ্যযুগের শেষ আর আধ্ুনিক যুগের শুরু। এ সময়ের তিনটি ঘটনা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়—১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ এবং ১৯৪৭ সালে ভারতভাগ, যার পরম্পরায় জন্ম হয় পাকিস্তান নামে নতুন এক রাষ্ট্রের। এ ঘটনাক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান সামাজিক শক্তির ক্ষয় ও বিকাশ। নানান সূত্র ঘেঁটে এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে সেসব ইতিহাস। "
একদা মাছেরও মাংস হতো। খামখেয়ালির মধ্যে একটা আরবি, আরেকটা ফারসি শব্দ। জাঁদরেল কি আসলে জেনারেল? দীর্ঘদিন ব্যবহারে চারপাশের আরও সব শব্দের ধাক্কায় শব্দের আদি অর্থ পাল্টে যায়। কোনো কোনো শব্দের অর্থ পাল্টে হয়ে যায় একেবারে উল্টো। কিছু শব্দ আমাদের ভাষায় কোথা থেকে এল, তার হদিস খুঁজে পাওয়া যায় না। এ রকম কত গল্প আর ইতিহাস শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে! শব্দের অর্থ কখনো জটিল, কখনো রোমাঞ্চকর। শব্দের সঙ্গে জুড়ে আছে ইতিহাস। আমাদের খুব চেনা, প্রতিদিন আমাদের মুখে মুখে ফেরে এ রকম কিছু শব্দের মজার গল্প নিয়ে এ বই।
সাহিত্যের ভুবনে নিবেদিতপ্রাণ দম্পতি সৈয়দ শামসুল হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হক। সৈয়দ হককে আনোয়ারা হক একান্তে সম্ভাষণ করতেন হেমিংওয়ে নামে। এই যুগলের যাপিত জীবনের অপরূপ গাথা আর সমসময়ের সাহিত্য-শিল্পের ইতিহাস এ আখ্যানের উপজীব্য। বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে এক ব্যতিক্রমী উপন্যাস।