১৯৬৪ সালে দাঙ্গার শিকার হয়ে সপরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানস। জন্মভূমির প্রতি জন্মেছিল ঘৃণা, মুছে দিতে চেয়েছিল তার সব স্মৃতি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সে নিউইয়র্কে, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। সেখানে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায় এই নিজের জন্মভূমির ভাগ্য নিয়ে বৃহৎ শক্তিসমূহের দড়ি-টানাটানি। নিজের অজ্ঞাতেই সে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ে দেশটির মুক্তি আন্দোলনে। উপলব্ধি করে রাজনীতি ও মানচিত্রের বিভেদে ছিটকে পড়লেও জন্মভূমির সঙ্গে তার সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। ভাঙতে থাকে মানবিক সম্পর্কের ভুল-বোঝাবুঝি। আন্তর্জাতিক পটভূমিকায় রচিত হাসান ফেরদৌসের প্রথম উপন্যাস মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরই এক প্রামাণিক কাহিনি।
রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অনুবাদ এবং তার ভিত্তিতে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয় নিয়ে রয়েছে রহস্যঘেরা নানা তর্ক-বিতর্ক। বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব গ্রন্থিত করে অবগুণ্ঠিত করেছেন লেখক। বিশ্লেষণ করেছেন ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষতা নিয়ে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুই মার্কিন সাহিত্যপ্রেমীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ও সম্পর্কের কাহিনি কণিকা। সাহিত্যের ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল এ বই। সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ
জনপ্রিয় লেখক আসিফ মেহ্দীর বিজ্ঞান কল্পগল্পের বই ‘মাছিম্যান’। জীবনঘনিষ্ঠতা ও রম্যের সমন্বয়ে লেখা তাঁর বিজ্ঞান কল্পগল্পগুলো একটু আলাদা। বইটিতে আছে আসিফ মেহ্দীর লেখা থেকে বাছাইকৃত ১৪টি বিজ্ঞান কল্পগল্প। তাঁর লেখা প্রকাশিত হচ্ছে ‘কিশোর আলো’, ‘বিজ্ঞানচিন্তা’সহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন পত্রিকায়; এছাড়াও দেশের বাইরে থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্রে। ‘মাছিম্যান’-এর গল্পগুলো পাঠককে আনন্দ দেবে, খোরাক যোগাবে নতুন নতুন ভাবনার। সাই-ফাই জগতে সবার আমন্ত্রণ। আসিফ মেহ্দী। পড়ালেখা বুয়েটে এবং পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে। পেশা সরকারি চাকরি, কিন্তু নেশা লেখালেখি। দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’ ও ‘রস+আলো’তে লেখার সুবাদে আসিফ মেহ্দী পাঠকের কাছে সুপরিচিত। তাঁর প্রকাশিত প্রতিটি বই পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তা, উঠে এসেছে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায়। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩০
বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির দুই পাপ, যা ঠেকাতে সরকারি নীতিনির্ধারকেরা তাত্ত্বিক নিষ্ঠা কিংবা সদিচ্ছার পরিচয় দিতে পারেননি—বিশেষত কোভিড-উত্তর সময়ের বাংলাদেশে। চলমান নীতি আর অনীতির দ্বন্দ্বে অনীতির জয় হয়েছে। সংকটে পড়েছে অর্থনীতি। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত গতি অর্জন করতে পারেনি। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়ে জাতিকে উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। প্রবৃদ্ধিও গেছে নেমে। বাংলাদেশের মতো একটি বিপুল সম্ভাবনাময় আর উন্নয়নমুখী অর্থনীতির জন্য যা শুভ ইঙ্গিতবহ নয়। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের অজুহাত বৈশ্বিক বিচারে গ্রহণযোগ্য নয়। বৈশ্বিক বাস্তবতা ও শাস্ত্রীয় অর্থনীতির আলোকে এর প্রতিকার জানতে চাওয়ার আগ্রহ আমাদের জন্য স্বাভাবিক। নীতি-অনীতির এই দ্বন্দ্ব এবং প্রাসঙ্গিক সব প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বই।
প্রতিদিনই আমরা নানা বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করি। সমাজ ও দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে কৌতুক করি, মিম বানাই। সে রকমই কিছু সমস্যা লেখক রম্য ভঙ্গিতে এ বইয়ের রচনাগুলোতে তুলে ধরেছেন, যা একই সঙ্গে আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে নাড়া দেবে, জাগিয়ে তুলবে। রম্যরস বাঙালি জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। একটা শক্তিও বটে। রম্যসাহিত্য গড়ে ওঠে কটাক্ষ, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, কৌতুক ইত্যাদি নিয়ে। শক্তিশালী কলমে লেখা হলে সাহিত্য হিসেবে যার ক্ষমতা অসামান্য। এই বইয়ের রম্যধর্মী রচনাগুলোতে কাল্পনিক চরিত্র ও সংলাপের মধ্য দিয়ে চলমান সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, কবি, শিল্পী কিংবা মস্তান —চরিত্রগুলোর সবই আমাদের চেনা। তবে রম্যরচনা বলেই চরিত্রগুলো এখানে আমাদের আমোদিতও করে। নাগরিক জীবনের ভোগান্তির কারণ মশার জন্যও যেন ভালোবাসা জাগে। কাক, কুকুর বা ইঁদুরদের যে সম্মেলন, তার মধ্য দিয়েও যেন মানুষের সমাজের চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, সমাজের অসংগতিকে কটাক্ষ করার সেই তাগিদ থেকেই লেখক বইয়ের পর্বগুলো তৈরি করেছেন।
'বেলা-অবেলার কথা' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ জীবনের চলার পথে খ্যাত-অখ্যাত কতজনের সঙ্গেই তো মানুষের দেখা হয়। কত ঘটনারই সম্মুখীন হতে হয় তাকে। এসব দেখাশোনা, আলাপ-পরিচয় মানুষের স্মৃতির সঞ্চয়কে সমৃদ্ধ করে তোলে। আবার তারই সূত্রে মানুষের মনে কিছু অনুভব-উপলব্ধি, ভাবনাচিন্তা জন্ম নেয়। তা যেমন আপন পারিপার্শ্বিকতা অর্থাৎ স্বদেশ ও সমাজ সম্পর্কে, তেমনি বিদেশ বা বিশ্ব সম্পর্কেও। কখনো হারিয়ে যাওয়া প্রিয়-পরিচিতজনদের কথা ভেবে স্মৃতিভারাতুর হয়ে ওঠে মন। বেলা-অবেলার কথা বইটিতে ড. সেলিম জাহান এক আশ্চর্য স্বাদু ও মমত্বময় ভাষা ও ভঙ্গিতে তাঁর সে বিচিত্র অভিজ্ঞতা, যাপিত জীবনের চালচিত্র ও ব্যক্তিগত ভাবনা তুলে ধরেছেন। ফেসবুকে লেখাগুলো প্রকাশের সময়ই তা ব্যাপক পাঠকের আগ্রহ ও মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাঁর সে লেখার ঝাঁপি থেকে নির্বাচিত কিছু রচনা প্রথমা প্রকাশন এবার মলাটবন্দী করে প্রকাশ করল।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর। মানুষ যেখানে সদা কর্মব্যস্ত। বাঙালি তাবাসসুম জীবনের নানা মোড় পেরিয়ে, বিচ্ছেদের দাহ সয়ে একসময় সেই মেলবোর্নেই চাচা- চাচির সংসারে থিতু হয়। যদিও তার স্বাচ্ছন্দ্যময় প্রবাসজীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে বিচ্ছিন্নতাবোধ আর একাকিত্ব। তবে এই অনুভূতিগুলোকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই পথ চলে সে; যতক্ষণ না একটি ঘটনার অভিঘাতে সবকিছু উল্টেপাল্টে যায়। ২০১৯ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন একান্নজন মানুষ। সে ঘটনার ধাক্কা এসে লাগে অস্ট্রেলিয়ায় তাবাসসুম আর তার পরিবারেও। মনের গভীরে জমে থাকা প্রশ্নেরা এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফিরে আসে ফেলে আসা জীবন, ভালোবাসা ও সন্তান হারানোর স্মৃতি। টালমাটাল এই সময় তাকে জর্জরিত করে আত্মজিজ্ঞাসায়ও। হাতড়ে ফেরে সে তার আত্মপরিচয়। আর তখনই তার ফোনে একের পর এক রহস্যময় বার্তা ভেসে আসে অতীতের হাতছানির মতো। কে আছে ফোনের ওপাশে? কেউ কি তাকে খুঁজছে?
এই বইয়ে আছে ইরানের বিপ্লবের জটিল ঘটনাপ্রবাহের বিস্তৃত আলোচনা। বিপ্লবে ধর্মের আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা, ইরানের কমিউনিস্ট তুদেহ পার্টিসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতা আর রক্ষণশীল বনাম সংস্কারপন্থার দ্বন্দ্ব কীভাবে ইরানের ভাগ্য নির্ধারণে সংগ্রামরত, তার বর্ণনা তুলে ধরেছে এই বই।
এ বইয়ে বিশাল ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে সোভিয়েত রাশিয়াকে। এতে রয়েছে ইতিহাস কাঁপানো রুশ বিপ্লব, আনকোরা নতুন সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন, বিভীষিকাময় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধের শীতল তিমিরাচ্ছন্ন পঞ্চাশ বছর। রুশ আত্মার সন্ধানে জারতন্ত্রের আদি থেকে শেষ ইতিহাস, তার শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলা, সিনেমা, সংগীত আর দর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। কোনোটাই এখানে বাদ পড়েনি। আছে সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙনের ইতিবৃত্ত, রাজনৈতিক উত্থান–পতন, ব্রেজনেভ, গর্বাচেভ, ইয়েলেৎসিন, পুতিনের মতো রাষ্ট্রনায়কদের গল্প, দুর্নীতি আর অলিগার্কদের উত্থান পবের্র সোজাসুজি বর্ণনা। সব মিলিয়ে বইটি হয়ে উঠেছে যেন নানা বর্ণের মিশ্রণে রুশ সমাজ ও ইতিহাসের রামধনতুল্য।
আমরা পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, আকাশের দিকে তাকালেই সবাই জ্যোতির্বিদ হয়ে যাই। এর জন্য দুরবিন লাগবে না, টাকা খরচ করতে হবে না। লাগবে না বড় ডিগ্রি, যেতে হবে না বিদেশে। শুধু থাকতে হবে ভালো চোখ। জানতে হবে আকাশের উজ্জ্বল তারার নাম। তাদের হাত তুলে চিহ্নিত করতে হবে। এর মধ্যে যে আনন্দ, তা নির্দোষ ও ঈর্ষাবিহীন। সেই আনন্দের মাঝে আমরা সবাই পাব পর্যবেক্ষকের তকমা। আর এই তকমা মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবস্থানকে বুঝতে সাহাঘ্য করবে। এখানে পেশাদারি ও অপেশাদারির মধ্যে কোনো তফাত নেই। বইটি জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার নয়। এখানে আকাশের তারা, নীহারিকা, গ্যালাক্সি ও গ্রহদের চিহ্নিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, তাদের পদার্থবিদ্যার ওপর নয়। আকাশ চেনানো, আর সেই চেনা থেকে আনন্দ পাওয়াই বইটির উদ্দেশ্য। সেই আনন্দের জগতে পাঠককে আমন্ত্রণ।
আফ্রিকার ছােট্ট রাজ্য লিসােটোতে বেড়াতে গিয়ে রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করতে না পেরে লেখক ম্যাডলক সাহেবের কটেজে আশ্রয় নেন । কথাবার্তায় জানতে পারেন, ম্যাডলক যে সুদর্শনা নারীর জন্য শৌখিন কটেজ তৈরি করেছিলেন, সে তাকে ত্যাগ করে ঘর বেঁধেছে এ কটেজের স্থপতির সঙ্গে। পাঠকদের সঙ্গে লেখক পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর এইডসগ্রস্ত গাইডের। স্বভাবে কবিয়াল মানুষটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর। বর্ণনা করেন ব্ল্যাকম্যাজিকের। জাদুটোনায় ব্যবহারের জন্য শ্বেতীগ্রস্ত এক মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্মমভাবে কেটে নেওয়ার ঘটনা। অনিরাপত্তায় মানুষটি অনুনয় করে তাকে যেন কারাগারে পােরা হয়। এক জমানায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন শরীরের তীব্র আবেদন ছড়ানাে এক রূপসী। এ যাত্রায় পাঠকও লেখকের সঙ্গে সেই রূপসীর তালাশ করেন। তাঁর দেখা পান উপত্যকার নিভৃত এক কুটিরে। বাশক্তিহীন স্ট্রোকে জর্জরিত মহিলা সেখানে একাকী বাস করছেন। কাউকে দেখাতে চান না তার মুখাবয়ব, তাই তিনি মুখে তুলে নিয়েছেন মুখােশ। লেখক মঈনুস সুলতানের অতুলনীয় বর্ণনায় পাঠক নানা ধরনের মানুষের দেখা পাবেন এবং উপভােগ করবেন তাদের বিচিত্র দিনযাপন।
দানাকিল ডিপ্রেশনে আগ্নেয়গিরির লাভালিপ্ত নিসর্গের বিবরণের সঙ্গে লেখক যুক্ত করেন স্থানীয় আফার সম্প্রদায়ের মানুষের দিনযাপনের খণ্ড কাহিনি। সমান্তরালভাবে উপস্থাপন করেন হরেক কিসিমের পর্যটকের চরিত্র। বিস্তারিত হয় শরণার্থীশিবির, মরুচারীদের গ্রাম বা বেসক্যাম্পের বিষয়-আশয়। পরিশেষে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি-সংলগ্ন লাভাহ্রদের পাড়ে রাত্রিযাপনের ঘটনাও পাঠকদের আগ্রহী করে তোলে।