আকবর আলি খানের বিপুল বিচিত্র রচনা ও চিন্তাজগতের সামগ্রিক খতিয়ান এক মলাটে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর লেখায়। আকবর আলি খান বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস আর সমাজ বিষয়ে নিবিড়তম অনুসন্ধানকারীদের অন্যতম। স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে সদ্যস্বাধীন দেশের প্রশাসনব্যবস্থা ও উন্নয়নকৌশলের ভিত্তি রচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। কেন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা একটা বৃত্তের মধ্যেই ক্রমাগত ঘুরপাক খায়, দেশের উন্নয়নকৌশলগুলো কেন সাফল্যের সম্ভাবনা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়—এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তিনি এই ভূখণ্ডের মানুষের মানস গঠন ও ইতিহাসের ধারা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। তাঁর আগ্রহের ব্যাপ্তি প্রসারিত ছিল জীবনানন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও বিষয়ের অনুসন্ধান ও মূল্যায়নে। সারা জীবনের এই অনুসন্ধান লিপিবদ্ধ করেছেন একাধিক শ্রমসাধ্য গবেষণাকর্মে, সুলিখিত জনপ্রিয় বই আর প্রবন্ধে। এই বইয়ের লেখক আমিনুল ইসলাম ভুইয়া ছিলেন আকবর আলি খানের সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজন। তাঁর অন্তরঙ্গ উপস্থাপনায় পাঠক আকবর আলি খানের জীবনব্যাপী সাধনার একটা পরিচয় পাবেন বলে আমরা আশা করি।
পাকিস্তানের রাজনীতির মঞ্চে তখন তিনটি প্রধান পক্ষ—আওয়ামী লীগ, পিপলস পার্টি এবং সেনাবাহিনী। আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা প্রবেশ করেছিলাম একটা রক্তাক্ত অধ্যায়ে। এই বইয়ে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ-পর্বের একটা ছবি এঁকেছেন গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম স্বাভাবিকভাবে হয়নি। একটি রাষ্ট্র ভেঙে আরেকটি রাষ্ট্র, তা-ও আবার আপসে নয়, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন উদাহরণ বিরল। বাংলাদেশের ঠিকুজি খুঁজতে গেলে আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। এই বইয়ে আছে দলটির ওই সময়ের পথচলার বিবরণ, যখন দেশ একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এই যুদ্ধ ছিল বাঙালির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের অনিবার্য গন্তব্য। আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা একটা রক্তাক্ত অধ্যায়ে প্রবেশ করেছিলাম। আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ওই পর্বের একটা ছবি আঁকা হয়েছে এই বইয়ে।
বাংলাদেশ থেকে হাতে গোনা কয়েকজন এ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে পা রেখেছেন। তাঁদেরই একজন মহুয়া রউফের অ্যান্টার্কটিকা অভিযাত্রার গল্প নিয়ে এ বই দখিন দুয়ার খোলা। নারী হিসেবে তাঁর এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। নানা দেশ ঘুরে, অনেক ঝামেলা অতিক্রম করে পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের মহাদেশে পা রাখেন তিনি। অর্ধশতাব্দী আগেও যেখানে নারীর প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। পুরুষেরা একে নারীদেহের সঙ্গে তুলনা করতেন, যা জয় করার অধিকার শুধু তাঁদের! বিগত শতকে ঘটে যাওয়া নানান দুঃসাহসিক ও ঐতিহাসিক অভিযানের বর্ণনা, ভূরাজনীতি ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, উষ্ণায়নের প্রভাব, প্রাণী ও প্রাণবৈচিত্র্য আর ভৌগোলিক বৃত্তান্তের বিবরণ রয়েছে বইটিতে। তা ছাড়া নৌকা থেকে মাত্র এক হাত ব্যবধানে তিমি দেখার মতো দুঃসাহসিক আর রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতার কথা পাঠক জানতে পারবেন বইটি পাঠে।
"একটি পরোক্ষ রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি (১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে) জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে একটি ‘একতরফা’ এবং ২০১৮ সালে আরেকটি ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন হয়। যার ফলে নির্বাচনী ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পুরো প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাক্রম নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি ও উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়েও। এ বইয়ে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক বা সংকট চলছে, সেই সংকটের কারণ অনুসন্ধানের জন্য বইটি সচেতন নাগরিকদের অবশ্যপাঠ্য। "