দেশের প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যের এ স্মৃতিকথায় বাংলাদেশের গত ছয় দশকের ইতিহাস অন্তরঙ্গ বর্ণনায় উঠে এসেছে। ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য পাঠক এ বইটি পাঠেই প্রথমবারের মতো জানতে পারবেন। বাংলাদেশের গত ছয় দশকের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিল বলা যায় এ বইটিকে। লেখক পঙ্কজ ভট্টাচার্য ষাট দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক। পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সঙ্গে প্রায় একই সময়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। বন্দী অবস্থায় জেলখানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছাকাছি সেলেই তাঁর স্থান হয়। অন্য দল করলেও তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশেষ আস্থাভাজন। প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরেও বরাবর সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাসের ভেতর-বাইরের অনেক ঘটনার তিনি জীবন্ত সাক্ষী। ফলে আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথার আঙ্গিকে লেখা হলেও, বইটি পাঠককে ব্যক্তি বা রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য—তাঁর জীবন ও সংগ্রামের সঙ্গে তাঁর সময়টিকেও জানতে ও বুঝতে সাহায্য করবে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিল্পী মুর্তজা বশীর। ভাষাশহীদ বরকত মারা যান তাঁর চোখের সামনে। হাসপাতালে দেখেছিলেন রফিকের খুলি উড়ে যাওয়া লাশ। তিনি তখন আর্ট কলেজের ছাত্র। মার্ক্সবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন। মনে শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন। ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠল তাঁর আজীবনের প্রেরণা। পরের বছর হাসান হাফিজুর রহমানের একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলনে প্রধান দুই রেখাচিত্রশিল্পীর একজন। সেই থেকে শুরু। এ বই ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুর্তজা বশীরের স্মৃতি ও স্বপ্নভরা লেখা এবং শিল্পকলার সমারোহ।
বাবা বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ছেলে শিল্পী মুর্তজা বশীর। বাবা খ্যাতিমান। ছেলেও কম নন। কিন্তু দুজনের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য একেবারেই বিপরীতমুখী। বাবা কমনীয়, পণ্ডিত ও ধার্মিক। ছেলে বিদ্রোহী, শিল্পী, কমিউনিস্ট। বাবা চেয়েছেন ছেলে বেড়ে উঠুক পরিশীলিত সামাজিক হয়ে। ছেলে চাইলেন বাবার প্রভাবের গণ্ডির বাইরে নিজের পরিচয়ে উঠে দাঁড়াতে। দুর্বিনীত সন্তান মুর্তজা বশীর শেষ বয়সে আবার প্রবলভাবে ফিরেও এলেন বাবা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কাছে। নিজেদের চিঠিপত্র, লেখা আর ড্রয়িংয়ে এ বই তুলে ধরেছে দুই বিখ্যাত পিতা-পুত্রের সম্পর্কের সজীব রসায়ন।
বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘটনাবহুল সময়ে এ কে এম শহীদুল হক পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বত্রিশ বছর কর্মজীবনের নানান পর্যায়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে দাগি অপরাধীদেরকে কাছ থেকে দেখেছেন, সাক্ষী হয়েছেন ঐতিহাসিক সব ঘটনার। এসব ঘটনার কোনোটির যেমন রয়েছে জাতীয় স্তরে তাৎপর্য, কোনোটি আমাদের সমাজবাস্তবতাকে গভীরভাবে চিনতে সাহায্য করবে। পুলিশ বিভাগের সাথে জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন, সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগের সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং ব্যক্তিত্বের সংঘাতের মুখোমুখি হওয়ার অকপট বিবরণও তিনি এই গ্রন্থে দিয়েছেন। বিশেষ করে জঙ্গিদের ভয়ংকর আত্মপ্রকাশ ও দমনের পর্বটিতে তিনি পুলিশের প্রধান হিসেবে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনাপ্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করে জঙ্গিদমনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। লেখকের কর্মজীবনের অর্জনের মাঝে রয়েছে কমিউনিটি পুলিশিংসহ বহুবিধ সফল ও সৃজনশীল উদ্যোগের কৃতিত্বও। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ তাঁরই উদ্যোগে চালু হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। পুলিশসদস্যরা তো বটেই বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও প্রশাসন বিষয়ে উৎসুক যে-কোনো সচেতন পাঠক গ্রন্থটি আনন্দ নিয়ে পাঠ করতে পারবেন।