কোনো বই পড়ে কি আপনার ঈমান বেড়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়েছে? মনে হয়েছে—মাত্রই কেউ আপনার হৃদয় বিধৌত করে গেছে অপার্থিব করুণাধারায়? পাঠক, ঈমানের ভিত নাড়িয়ে দেওয়ার মতো তেমনই এক অভূতপূর্ব রচনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন আপনি। ‘বিশ্বাসের জয়’ এমনই একটি বই যা পড়লে আপনি অব্যশই ঈমানের দৃঢ়তা উপলব্ধি করবেন, ইনশাআল্লাহ। বইটির মূল বিষয়বস্তু একজন মুমিন ও একজন সংশয়ীর মধ্যকার আন্তরিক আলাপন। তবে সংশয়ীর খোরাকের চেয়ে ঈমানদারদের কাঙ্ক্ষিত উপঢৌকনই বেশি এই বইয়ে। একপাঠে কিছু বইয়ের আবেদন শেষ হয়ে যায় না; কিছু বই তাই বারবার পড়তে হয়। এটি তেমনই একটি বই। আল্লাহর একত্ববাদ আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাসুল হিসেবে পৃথিবীতে আগমনের সত্যতার প্রমাণগুলো মমতা ও আন্তরিকতা দিয়ে অকাট্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই বইয়ে। বইটির বিষয়বস্তু তৃষ্ণার্ত ও আন্তরিক হৃদয় নিয়ে অধ্যয়ন করলে আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস কালিমার সত্যায়ন এবং আল্লাহর প্রতি একান্ত আত্মসমর্পণে উৎসর্গ করা ছাড়া গত্যান্তর থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।
তারা ডুবে ছিলেন ভোগবিলাসিতায়, প্রাচুর্য আর লোভ-লালসায়। গাড়ি, বাড়ি, অর্থকড়ি, সম্মান ও যশখ্যাতি—সবই ছিল তাদের জীবনে। ছিল না কেবল মানসিক প্রশান্তি। তাদের অন্তরে ছিল অন্তহীন এক অতৃপ্তি। কীসের যেন এক শূন্যতা। হৃদয়জুড়ে এক নীরব আর্তনাদ। দিনের পর দিন প্রার্থনায় লীন হয়েছেন তারা। সত্যকে খুঁজে পেতে কখনো দিনরাত গবেষণা, কখনো-বা করেছেন জ্ঞানীদের সাথে বৈঠক-আলোচনা। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ করুণায় তাদের সামনে উন্মোচিত হয় এক আলোকিত পথ। সেই সাথে নেমে আসে কালবোশেখী ঝড়। লন্ডভন্ড হয়ে যায় তাদের এতদিনের সাজানো পৃথিবী। পাহাড়সম বাধা, কল্পনাতীত পরীক্ষা আর সীমাহীন যন্ত্রণা তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। তবু তারা সত্যের পথে অবিচল থাকে। আল্লাহকে ভালোবাসে তারা আঁকড়ে ধরে ইসলাম। খ্রিষ্টবাদ ছেড়ে ইসলামে আসা পাদরিদের এমনই অশ্রুভেজা, ঈমানদীপ্ত, বাস্তব সব ঘটনায় গড়ে উঠেছে আমাদের এবারের আয়োজন—‘প্রত্যাবর্তন ২.০’।
শিশুরা গল্প শুনতে বা পড়তে ভালোবাসে। কিন্তু সব গল্পই কি শিশুদের ভালো লাগে? না। শিশুরা তাদের মতো গল্প পছন্দ করে। কখনো রূপকথা, কখনো বীরত্ব, কখনো বা শিক্ষণীয় গল্প প্রভাবিত করে তাদের। কখনো শুনতে চায় নিজের জীবনের গল্প। গল্প শিশুদের কল্পনাশক্তিতে প্রখর করে। তাদের ভবিষ্যত চিন্তাকে প্রভাবিত করে। তাদের জীবন বদলে দেয় অনেক গল্প। কিন্তু রূপকথার গল্পগুলো তো মিথ্যা। অনেক গল্প আছে যেগুলো অবাস্তব কাহিনিতে ভরা। আবার অনেক গল্প এমনও আছে যেগুলো ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাহলে কোন গল্প শোনাবো তাদের? কেমন হয় যদি শিশুদের গল্প শোনাই কুরআনের আয়াত দিয়ে? যে গল্পে নায়ক থাকবে সে নিজেই। যে গল্প কোনো রূপকথা নয়, কোনো কল্পনা নয়; বরং তার জীবনের গল্পই বলা হবে কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। তার পরিবার, বন্ধু, স্কুল আর চারপাশের পরিবেশই হবে তার গল্পের প্লট। কুরআনের এক-একটি আয়াত অনুযায়ী এমনই যুগোপযোগী গল্প বলেছেন নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। আমাদের সময়ের গল্পগুলোই সাজিয়েছেন কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। শিশুদের ঈমানি চরিত্র ও জীবন নির্মাণের এক অভিনব আয়োজন এক একটি বই।
পশ্চিমা ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সন্তানরা মূলত কী শিখছে? ইন্টারনেট-টিভির মুক্ত সংস্কৃতির বদৌলতে ছোটবেলায় তারা শিখছে হ্যারি পটার, সুপার হিরো, ডিসি-মার্ভেল, রাম-ভীম-শিব আর ঠাকুরমার ঝুলির সব মিথ্যা গল্প। এই মিথ্যা ও বানোয়াট গল্পগুলো শিশুদের মনে এমনই প্রভাব ফেলে, বিশ্বাস করতে শুরু করে—পৃথিবীকে ধ্বংস ও অন্যায়ের হাত থেকে বাঁচাতের পারে কেবলই সুপারহিরো আর হিন্দুদের দেবতারা। ফলে, একটু বড় হলে যখন আমরা আমাদের সন্তানদের ইসলাম ও ইবাদত পালনের কথা বলি, সেগুলো তাদের মনে কোনো রেখাপাত করে না। নবী, সাহাবি, আউলিয়া, আলেম আর পীর-মাশায়েখদের জীবন ও জীবনের গল্প যখন তাদের শোনাই, সেগুলো তাদের কাছে পানসে লাগে। একদমই মনে দাগ কাটতে চায় না। ফলতঃ দেখা যায়, ভবিষ্যত জীবনে ইসলামি অনুশাসনের পবিত্র পিঞ্জরে আগলে রাখা সম্ভব হয় না তাদের। এজন্য শিশু বয়সেই সন্তানদের মন-মস্তিষ্কে স্থান দিতে হয় নবী-রাসুল, সাহাবি-তাবেয়ি এবং ইসলামি আদর্শের চেতনা। আর শিশু-কিশোরদের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে নানা স্বাদের গল্প। হরেক রকম গল্প। গল্পের বুনন তাদের মনের মধ্যে রোপন করে বিশ্বাসের চারাগাছ। তাই তাদের শোনাতে হয়, দেখাতে হয়, পড়াতে হয় সত্য গল্প। যে গল্প তাদের জীবনকে উজ্জীবিত করবে ইসলামের পথে। নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর সাহাবিদের জীবনের এমন গল্প নিয়েই লিখেছেন ‘ছোটদের সাহাবি সিরিজ’-এর ৫টি বই। শিশুতোষ ঢংয়ে লেখা এবং চাররঙা ঝকঝকে কাগজে ছাপা বইগুলো শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দেবে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে। আধুনিকতা আর পাশ্চাত্যের মোহে যে শিকড়ের কথা আমরা ভুলতে বসেছি প্রায়।
আপনার শিশু নিশ্চয়ই গল্প শোনার বায়না ধরে, কখনোও-বা কিছু পড়তে চায়। তখন আপনি কী করেন? কী গল্প শুনিয়ে দেন? আচ্ছা, তাদের হাতে কি রূপকথার কোনো গল্পের বই তুলে দেওয়া কথা ভাবছেন? তাহলে নিশ্চিত থাকুন- মনের অজান্তেই শিশুর মনে শিরক ও কুফরের বীজ বপন করে দিচ্ছেন। অথচ, পবিত্র কুরআনেই রয়েছে অসংখ্য চমৎকার কাহিনি, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, পৃথিবীর সেরা ব্যক্তিদের জীবনী, মন্দ লোকদের করুণ ইতিহাস, শিক্ষামূলক ঘটনা, সঠিক পথে পরিচালিত করার দিক-নির্দেশনা, দুআ ও প্রার্থনা। এসবই আমাদের আলোর পথ দেখিয়ে দিতে পারে। কুরআনুল কারিমের অনুপম কাহিনিগুলো পড়ে আমাদের শিশুরা তাদের জীবনের দিশা খুঁজে পাবে। শিশু-মনে বিশ্বাসের পরশ বুলিয়ে দিতেই ‘গল্পে গল্পে আল কুরআন’ সিরিজ। এ সিরিজ শিশুদের জন্য দারুণ এক উপহার। এ সিরিজ পড়ে শিশুরা সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, সত্যবাদী এবং মা-বাবার জন্য সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।
শিশু আকীদা সিরিজের বইগুলোতে শিশুদের অবুঝ মনে বিশ্বাসের ভিত গড়ার জন্য অনেকগুলো ছোট ছোট কবিতার মতো করে দেয়া আছে। লেখাগুলো অনেক চমৎকার। আর এই কবিতার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বা তার সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে।
গল্পে গল্পে ৪০ হাদীস” বইটিতে গল্পের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চল্লিশ হাদীস শেখানো হয়েছে। মহানবী ﷺ এর মুখ নিঃসৃত আসমানী বাণী উঠে এসেছে গল্পে গল্পে। প্রতিটি গল্পের নির্যাসে রয়েছে নবীজি ﷺ এর সুপরিচিত হাদীস। বইটির লেখক দক্ষ হাতে গল্পে গল্পে সাজিয়েছেন নবীজি ﷺ এর চল্লিশটি হাদীস - যা সহজেই বোধগম্য এবং মনে রাখার মতো। শিশু-কিশোরেরা, এমনকি আমাদের বড়রাও অনেক সময় তাত্ত্বিক আলোচনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, সেই যায়গা থেকে এই বইটি স্বতন্ত্র। ছোট বড় সবাই গল্পে গল্পে নবীজি ﷺ এর এই চল্লিশটি হাদীস উপভোগ করতে পারবে বলে আমি মনে করি। আর উপভোগ্য জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ কয়েকগুণ বেশীই থাকে। বইটির গল্পগুলো নিছক কোন গল্প নয়। বরং প্রতিটি গল্পই শিক্ষণীয়। আদব, আখলাক, আচার-আচরণ, পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ নবীজি ﷺ এর হাদীস থেকে জীবন গড়ার পাথেয় রয়েছে প্রতিটি গল্পে। গল্পে গল্পে হাদীসের শিক্ষাগুলো শিশু-কিশোরদের একাধারে একজন ভালো মানুষ, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সেই সাথে একজন দ্বীনদার মানুষ হতে শিক্ষা দেবে। আমাদের শিশু-কিশোরেরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের তরবিয়ত আমাদের হাতেই নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে সে চিনতে পারে তার সৃষ্টিকর্তাকে। তার আদর্শকে। তার জীবন চলার পথকে। এ জন্য তাদেরকে কল্পকাহিনী আর গাল্পগল্প না শুনিয়ে এমন কিছু শোনানো উচিৎ, যাতে তারা জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পায়। বড় হয়ে যেন মাতা-পিতাকে সম্মান করতে শিখে। উত্তম আদব, আখলাকে একজন সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে – এই দুআ ও প্রত্যাশায়।
আমাদের জীবনী সিরিজের অন্যতম গ্রন্থ ও শায়খ নিজামউদ্দীন আউলিয়া জীবন ও কর্ম'ও ইতিমধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ইসলামী চিন্তাচেতনাজাত ধ্যান-ধারণা সমুন্নত রাখার জন্য ইসলামী জগতের মহাপুরুষদের জীবন চরিত অধ্যয়ন ও নিজ-নিজ জীবন ও কর্মে তার প্রতিফলন আজ বড়ই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এছাড়া গত্যন্তর নেই, কেননা, একদিকে বিজাতীয় কু-সংস্কৃতি বা অপসংস্কৃতির ঘৃণ্য প্রভাব অন্যদিকে মুসলিম নামধারী একশ্রেণীর অকালকুষ্মাণ্ড ও কূপমণ্ডুক— যারা বিজাতীয় ভাবধারা ও ইসলাম, মুসলমান, মনুষ্যত্ব ও মানবতার ঘৃণিত শত্রুদের উচ্ছিষ্টে লালিত, তারা এ ভূখণ্ডে অনবরত ইসলাম বিরােধী ধ্যান-ধারণার প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত— বলা যায়, তারা ইসলামী মূল্যবোেধ ধ্বংসের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেই শত্রুদের ঘৃণ্য অপপ্রচারের প্রভাব বলয় থেকে আমাদের এদেশের বিশ্বমুহম্মদীয় পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য ও নিবেদিতপ্রাণ আদর্শবাদী মুসলিম কবি-সাহিত্যিক-লেখক-বুদ্ধিজীবী-চিন্তাবিদদের শ্রমসাধ্য সাধনার ফসল এ শ্রেণীর গ্রন্থগুলি আমরা জাতির খিদমতে প্রকাশ করে চলেছি। সকলের সহযােগিতা ভিন্ন এ পথ বড়ই কঠিন এবং কণ্টকাকীর্ণ; এ সকল গ্রন্থাধ্যায়নের মাধ্যমে সে পথে আমাদের চলার পথের প্রেরণা লাভ করতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সামনে স্বচ্ছ-সুন্দর পবিত্র জীবনের দিশা দেখিয়ে দিতে হবে।
‘সাহাবীদের সাথে ৩৬৫ দিন’ বইটি একটি অনবদ্য গল্পের বই। বইটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের চমকপ্রদ কাহিনী এবং নিত্যদিনের ঘটনাচিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এসব কাহিনী ও ঘটনাবলি আমাদের ছােট্ট সােনামণিদের জন্য। নিঃসন্দেহে খুবই শিক্ষণীয় ও আনন্দদায়ক হবে। বইটিতে সাহাবীদের অসাধারণ গুণের। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিজীবনকেও তুলে ধরা হয়েছে। সাহাবীগণ ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম। মানুষ। তাদের জীবন ও কর্ম সব সময়ই ভালাে লাগার মতাে, প্রেরণা খুঁজে পাওয়ার মতাে।। সাহাবীদের সােনালী জীবনের সেই অনুপম সৌন্দর্যের কারণে সারা বিশ্বের মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ‘সাহাবীদের সাথে ৩৬৫ দিন' বইটিতে সাহাবাগণের জীবনের ৩৬৫টি ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী আছে। প্রতিটি কাহিনী থেকে আমাদের শিশুরা শিক্ষা নিয়ে তাদের জীবনে প্রয়ােগ করতে পারবে। বইটিতে হৃদয়কাড়া কাহিনীগুলাে অত্যন্ত সরল ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। আর বাড়তি পাওনা হিসেবে গল্পগুলাের সাথে আছে চমৎকার ছবি, যা শিশু-কিশােরসহ সব বয়সের। পাঠককে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করবে। বইটি পড়ে আমাদের প্রিয় সােনামণি শিশু | কিশাের-কিশােরীদের জীবন অনেক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কখনো কি ভেবেছি, ইন্টারনেট-টেলিভিশনের সহজলভ্যতা আমাদের শিশু-সন্তানদের কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে? যে বয়সটা শেখার, মানস গঠনের এবং নিজেকে গড়ে তোলার—সে বয়সে আমাদের শিশুরা ডিসি-মার্ভেল, হ্যারি পটার, সুপার হিরো আর ঠাকুর মা’র ঝুলি নিয়ে ব্যস্ত। ভিন ধর্ম ও সংস্কৃতি-প্রভাবিত গল্প-সিনেমা-গেমস তাদের মানসিকতাকে ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতি থেকে বহু দূরে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে একটু বড় হলে যখন আমরা তাদেরকে ধর্ম ও নৈতিকতার কথা বলি, ইবাদাত-বন্দেগীর প্রতি উৎসাহিত করি, তখন এসব কথা তাদের মনে কোনো রেখাপাত করে না। আমাদের মুসলিম সমাজে ৪০ হাদীসের চর্চা বহুল প্রচলিত ও বরকতময় একটি সংস্কৃতি। ইসলামকে যাঁরা নিজেদের জীবনে ধারণ করতে আগ্রহী, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই ৪০ হাদীসের চর্চা ও হাদীস থেকে আহরিত শিক্ষা নিজেদের জীবনে গুরুত্বের সঙ্গে লালন করেন। শিশুরা গল্প ভালোবাসে। আচ্ছা, কেমন হয়, হ্যারি পটার আর ঠাকুর মা’র ঝুলি ইত্যাদির বিপরীতে যদি আমাদের শিশু সন্তানদের সামনে গল্পে গল্পে ৪০টি হাদীস উপস্থাপন করা যায়? হাদীস ও গল্পের ভাষ্য থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা যদি তারা গল্পচ্ছলেই ধারণ করে নিতে পারে নিজেদের মধ্যে? নিশ্চয় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ-গঠনে হাদীস থেকে আহরিত এসব শিক্ষা তাদেরকে পথ দেখাবে, ইনশাআল্লাহ। মাকতাবাতুল আসলাফ এই মহৎ চিন্তা ও লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বক্ষ্যমাণ বইটি প্রকাশ করেছে। প্রসিদ্ধ ৪০টি হাদীসের আলোকে বিদেশি শিশু সাহিত্যিক ড. ইয়াসার কান্দেমির লিখিত শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ও আনন্দদায়ী ৪০টি গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। বাংলা ভাষ্যে রূপান্তরের সময় আমাদের অনুবাদক ও সম্পাদক একদম শিশুদের উপযোগী ভাষা ব্যবহার করেছেন; যেন বাংলা-অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন প্রতিটি শিশুই আনন্দের সঙ্গে গল্পগুলো হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। পাঠের এ আনন্দকে আরও আকর্ষণীয় করতে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় ব্যবহার করা হয়েছে গল্পের সঙ্গে মানানসই এবং শিশুদের চোখজোড়ানো নান্দনিক নানা চিত্র। প্রয়োজনে অভিভাবকরা এসব চিত্র দেখিয়ে দেখিয়ে শিশু-সন্তানকে গল্পগুলো পড়ে শোনাতে পারেন। চিত্র বা ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এ বিষয়ক শরয়ী দৃষ্টিকোণ সচেতনতার সাথে বিবেচনা করেছি এবং বিজ্ঞ আলিমদের পরামর্শ গ্রহণ করেছি। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী চিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রাণির মুখাবয়ব মুছে ফেলা হয়েছে। ‘গল্পে আঁকা ৪০ হাদীস’ আপনার কোমলমতি শিশুর ভবিষ্যৎ-জীবন গঠনের পথনির্দেশিকা হোক, এই প্রার্থনা আল্লাহ তাআলার দরবারে। শুরু ও শেষে, সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই জন্য। সবার জন্য শুভেচ্ছা।