"সাহসের মন্ত্র " বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: একজন লড়াকু সৈনিক কেবল গায়ে-গতরে শক্তিমান হয় না; মগজটাকেও কাজে লাগায়। জাহেলিয়াতকে রুখে দিতে হলে প্রথমে মনুষ্য মগজে প্রোথিত করে নিতে হয় জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। কী করছি, কেন করছি, কীভাবে করছি তার এক পূর্ণাঙ্গ চিত্র মানসপটে সদা জাগরুক রাখতে হয়। বুদ্ধি-বিবেক, মেধা ও মননের সর্বোচ্চ ব্যবহারই আগামীর মুক্তির ইশতেহার তৈরি করবে। আমাদের স্বকীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি আর জাতিসত্তা নিয়ে কিছু মৌলিক বোঝাপড়া সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই বোঝাপড়ায় আমাদের ভাবনা তুলে ধরার একটা প্রয়াস সাহসের মন্ত্র।
লেখক এই বইটিতে এমন এক জন ব্যাক্তিকে নিয়ে আলোচনা করেছেন, যাকে বল হয় জাতীয় অধ্যাপক। তিনিই আব্দর রাজ্জাক একাধারে অর্থশাস্ত্র, রাস্ট্রবিজ্ঞান, সামাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, ধর্ম-সংস্কৃতিসহ সকল শাখায় তার রয়েছে পান্ডিত্য। লেখক স্বশরীরে আব্দুর রাজ্জাক স্যারের সাখে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সে সব কথা ছিলো নানান প্রেক্ষাপট এবং বিষয় ভিত্তিক। আহমদ ছপার সাথে স্যারের কথাপকোথন এবং স্যারের জ্ঞান গর্ভ আলোচনা নিয়ে উপস্থাপন হয়েছে এই বই। তৎকালিন সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থার নানান অসংগতি উঠে এসেছে এই বইটিতে। আহমদ ছফা আবদুর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে ছিলেন প্রায় সাতাশ বছর। সুদীর্ঘ একটা সময়। সম্পর্কে ছাত্র-শিক্ষক হলেও মনে হয়নি তাদের সম্পর্কটায় আদৌ কোন ফর্ম্যালিটি ছিল। এত দীর্ঘ সময় ধরে কাউকে গুনমুদ্ধ করে রাখা কিন্তু খুব কঠিন ব্যাপার। কিন্তু আবদুর রাজ্জাক পেরেছিলেন, শুধু ছফা নয়, সমসাময়িক অনেক প্রতিভাবানেরাই তাকে গুরুর আসনে আসীন করেছেন। এই মানুষটিকে বিশ্বকোষ বললে বাড়িয়ে বলা হয় না, জ্ঞানের শাখায় শাখায় তার অবাধ বিচরণ। ছাত্রের মনের জানালা খুলে দেয়া শিক্ষক বুঝে এমন কাউকেই বলে। অথচ বিস্তর পড়াশোনা, অগাধ জ্ঞানী এই মানুষটি কখনও নিজে কিছু লেখেননি । আবদুর রাজ্জাক স্যার কেন লেখেননি এই ব্যাপারে ছফা ব্যাখা দিয়েছেন এভাবে, এই মানুষটি তার সমকালীনদের গন্ডি পেরিয়ে এতখানিই উপরে উঠেছিলেন যে তাদের কাতারে নেমে আসা হয়ত একটু মুশকিল হত তাঁর জন্য। আহমদ ছফা এই অসাধারন মানুষটির সান্নিধ্যের স্বাদ কিছুটা হলেও আমাদের কাছে পৌছে দিতে চেয়েছেন এই বইটির মধ্য দিয়ে। দুজন অসম বয়সী বন্ধুর টুকরো টুকরো আলাপচারিতার স্মৃতিচারণ বলে একে মেনে নিতেও আমার আপত্তি নেই। আবদুর রাজ্জাক স্যার বই পড়া প্রসঙ্গে খুব দারুন একটা কথা বলেছেন, “পড়ার কাজটি অইল অন্যরকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোনো বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লিখতে পারবেন কিনা। আপনের ভাষার জোর লেখকের মতো শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনের শব্দভান্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইর্যা নিবেন , আপনের পড়া অয় নাই।”