১৯৫১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে লেখা চিঠিপত্রের সংকলন এ বই। স্বজন-বন্ধু থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের এই পত্রাবলির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে একটি জাতির জাগরণ, নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সংগ্রামে বিজয় এবং সেই বিজয়কে ধরে রাখার প্রয়াসের ইতিহাস।
আমাদের জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে নিয়ে মৌলিক লেখালেখি ও তথ্য উপাত্ত খুব একটা পাওয়া যায় না। বঙ্গমাতা নিজেও অন্দরে থেকে ঠিক সময়ের ঠিক ভূমিকা পালন করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। লোকচক্ষুর আড়াল ভেঙে জনসম্মুখে আসার ব্যাপারে তাঁর ছিল দারুণ অনীহা। যদিও বাংলাদেশের জন্মের মহাকাব্যিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তিনি মহাকাব্যের কেন্দ্রের একজন অবশ্যম্ভাবী মনীষা। বঙ্গমাতা সম্পর্কে যথাসাধ্য পাঠ পরিক্রমা,কল্পনা আর ইতিহাসের প্রাপ্য সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানব ইতিহাসের বিরল এ মহিয়সী নারী আমাদের বঙ্গমাতাকে নিয়ে আনিসুর রহমানের লেখা এ মহাকাব্যিক স্বগত-সংলাপ বা এপিক মনোলোগ ‘আমাদের বঙ্গমাতা’। এই এপিক মনোলোগ কিশোর তরুণদের উদ্দেশে লেখা,একই সঙ্গে বেতার ও থিয়েটারে প্রযোজনা উপযোগী একক চরিত্রের একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক।
মাতৃত্ব! প্রতিটা মেয়ের জীবনে পরম আরাধ্য এক স্বপ্নের নাম, নারীজীবনে পূর্ণতা পাওয়ার অবিকল্প অনুষঙ্গ। কিন্তু মাতৃত্বের পথে এই সফর মোটেই সহজ ব্যাপার নয়; মা হওয়ার প্রতিটা ধাপে রয়েছে পাহাড়সম ত্যাগ, অপরিসীম মমতা আর সীমাহীন কষ্টের উপাখ্যান! আজন্মলালিত এই স্বপ্নকে ছুঁতে প্রতিটি নারী মুখোমুখি হয় নানাবিধ প্রশ্নের। তার ভেতর দানা বাঁধে হাজারো দ্বিধা, দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা। আর প্রথমবার মা হতে গেলে তো প্রশ্নের জট খুলতেই চায় না। এমনই সব প্রশ্নের উত্তর, ব্যাখ্যা ও তথ্যনির্ভর পর্যালোচনা নিয়েই লেখা হয়েছে মাতৃত্ব: স্বপ্ন বুননের পথে বইটি।
সরদার ফজলুল করিমের ভাবনা, সংগ্রাম ও সাধনায় প্রভাব রেখেছেন—এমন ১৮ ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁর লেখার সংকলন এ বই। তাঁদের কেউ জন্মেছেন অন্য কালে অন্য দেশে, কেউবা ছিলেন তাঁর সমসাময়িক ও সহযোদ্ধা। মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবাই তাঁর প্রিয় মুখ। মানবিক সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে সারা জীবন নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন সরদার ফজলুল করিম। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষকতা ও লেখালেখি—সব কাজের মধ্য দিয়ে সারা জীবন চেষ্টা করেছেন সমাজে শুভ চিন্তার প্রসার ঘটাতে। এই পথে তিনি যেমন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন দূর দেশের ও কালের সক্রেটিস কিংবা রুশোকে, তেমনি স্বদেশের ও সমকালের রণেশ দাশগুপ্তের মতো কাউকে কাউকে। দেশ আর কালের গণ্ডি পেরিয়ে এমন সব মানুষকে তিনি ভালোবেসেছেন, করেছেন তাঁর মানসসঙ্গী। লেখালেখির মধ্য দিয়ে তিনি বারবার তাঁদের স্মরণ করেছেন, বলে গেছেন তাঁদের কথা। প্রিয় এমন কিছু মুখ নিয়েই সরদার ফজলুল করিমের লেখার সংগ্রহ এ বই।
মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় নেতাদের অন্যতম। শতাব্দীর সমান বয়সী এই মানুষটির জীবন যেমন ছিল ঘটনাবহুল, তেমনি বৈচিত্র্যময়। সাধারণ গ্রামীণ কৃষিজীবী পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের নেতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে একাতÄতাবোধ ও সাদামাটা জীবনপ্রণালি তাঁকে ‘মজলুম জননেতা’র পরিচয়ে পরিচিত করে তোলে। সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত ভাসানীচরিত বইটিতে মওলানার বাল্যজীবন থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের বিবরণ, মানুষের অধিকারের জন্য তাঁর লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অবিভক্ত ভারতের আসাম পর্বের মতো ভাসানী জীবনের তুলনামূলক কম আলোচিত অধ্যায় সম্পর্কে এ বইটিতেই প্রথমবারের মতো আবুল মকসুদ বিশদ আলোচনা করেছেন। তেমনি পরবর্তী পাকিস্তান আন্দোলন, আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক, ন্যাপ প্রতিষ্ঠা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি—এই পর্বগুলোও তথ্যনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মওলানার ব্যক্তিজীবন ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে গিয়ে লেখক তাঁর দৃষ্টিতে যাকে মওলানার সীমাবদ্ধতা বা স্ববিরোধ বলে মনে হয়েছে, তার উল্লেখ করতেও দ্বিধা করেননি।
মান্টো যেন গালিবের পরিণতি। সাদত হাসান মান্টোর লেখা মির্জা গালিব এক অনন্যসাধারণ গল্পকারের কলমে উর্দু সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিকে নিয়ে চিত্রনাট্য। সঙ্গে আছে দুজনের জীবন ও জগত্ নিয়ে আলোচনা। মোগল ভারতের শ্রেষ্ঠতম অর্জন উর্দু-ফারসি কবি মির্জা গালিব (১৭৯৭-১৮৬৯)। ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। আর ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে ইংরেজ শাসনের অবসানের সাক্ষী সাদত হাসান মান্টো। মির্জা গালিবের একান্ত অনুরক্ত ছিলেন মান্টো। নিজের সমাধিফলক লিখেছেন গালিবের কবিতা দিয়ে। মান্টো গালিবকে নিয়ে একটি সিনেমার কাহিনিও লিখেছিলেন। দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ বোম্বেতে সেই ছবি কেউ বানাতে রাজি হয়নি। অনেক পরে তৈরি সেই ছবি বক্স অফিস মাতায়। ঠিক যখন কিনা মান্টো মারা যান কপর্দকশূন্য অবস্থায়। মূল উর্দু থেকে সেই ছবির চিত্রনাট্যের অনুবাদ এই বই। সঙ্গে আছে চিত্রনাট্যের প্রসঙ্গ ধরে ব্যক্তি গালিব ও মান্টো আর তাঁদের সময়ের ভারতবর্ষের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা।