ওই প্রবল ঝড় এসেছিল প্রায় সোয়া শ বছর আগে। এখন কোথায় সেই জাহাজ, সে-ঝড়ে যেটা হারিয়ে যায়? আর কোটি কোটি ডলারের হীরা? …আঁধার রাতে কঙ্গো নদীর এক পিয়ারে ভিড়ল পুরনো এক ধচাপচা জাহাজ। অস্ত্র পেয়ে খুশি হয়ে উঠল বিদ্রোহী-নেতা, ঠাণ্ডা মাথার জাত খুনি টমাস গাধাধারের দলের লোক গুলো। এখন হীরাগুলোও তাদের চাই। কিন্তু হাতে অস্ত্র পেলেই কি খুন করতে পারবে ওরা রানাকে? একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক দায়িত্ব। কোথায় গেলেন বিজ্ঞানী আসিফ হায়দার চৌধুরি? কারা কিডন্যাপ করল তাঁকে? …ওই দ্রুতগামী ইয়টের ওরা কারা? খুন করতে চাইছে কাদেরকে? সাগরে দানবীয় সাপ খুঁজতে যাওয়ার আগেই একের পর এক বিপদ এসে জুটল। রানা পণ করল, এসব রহস্য ভেদ না করে ছাড়বে না। কিন্তু উপকূল থেকে দেড় শ’ মাইল দূর-সাগরে বিধ্বস্ত হলো লাইফবোট, হাড়ে হাড়ে টের পেল ও, এবার বাঁচার সম্ভাবনা নেই! অপরূপা কার্টা অস্টিনকে নিয়ে ডুবে মরতে হবে নির্ঘাত। এর পরেও কি রানার সঙ্গে যাওয়ার সাহস আছে, পাঠক?
এত বড় বিপদে খুব কমই পড়েছে মাসুদ রানা। এত বড় অভিযোগের আঙুলও খুব কমই উঠেছে ওর বিরুদ্ধে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ও। কী, চমকে গেলেন? আগে পুরোটা পড়ুনই না! ভয়ঙ্কর জটিল এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে ও। ওসামা বিন লাদেনকে পিছনে ফেলে দুনিয়ার সমস্ত মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টের এক নম্বরে উঠে এসেছে মাসুদ রানার নাম, ওর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে দুই কোটি ডলার! পালিয়ে বেড়াচ্ছে রানা, একা, আহত অবস্থায়। সাহায্য করার কেউ নেই। একটাই পথ সামনে-নিজের সেই নিষ্ঠুর রূপটা আরেকবার সবাইকে দেখিয়ে দেয়া। পাঠক, দমবন্ধ করে বসুন। শুরু হচ্ছে যুদ্ধ।
একটা খবর একই সঙ্গে কীভাবে ভাল আর মন্দ হয়, বলতে পারেন? ঠিক আছে, উদাহরণ দেয়া যাক। নাসার ডিপ স্পেস প্রোব ভয়েজার-টু রিসিভ করা হয়েছে। অত্যাশ্চর্য এক সিগ্নাল-ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার অকাট্য প্রমাণ। সুসংবাদ, তাই না? কিন্তু খারাপ খবরটা হচ্ছে, ওটার ভিতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর কোড, যা আগামী চারদিন পর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। আর এর পিছনে যারা জড়িত, তারা কোনও ভিনগ্রহবাসী নয়, এই গ্রহের দু-পেয়ে জানোয়ার। এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে সভ্যতাকে বাঁচাতে হ্যাকিং, সাইবার-ক্রাইম আর সাইবার-টেররিজমের সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতে টু মারতে চলেছে মাসুদ রানা। কিন্তু কাজটা সহজ নয় মোটেই। উদয় হয়েছে ওর পুরনো শত্রু ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। যে-কোনও মূল্যে রানাকে ঠেকাতে মরিয়া সে। রয়েছে অচেনা শত্রুর লেলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর খুনীরাও। আগামী ৯০ ঘণ্টা নরক দর্শন করে ফিরবে রানা।
প্রিয় পাঠক, মাসুদ রানার সঙ্গে আরও একবার সুমেরু অভিযানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাকে। এবারের গন্তব্য—আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উত্তরের নামহীন এক বরফ-দ্বীপ। দর্শনীয় অনেক কিছুই পাবেন ওখানে। দ্বীপের গভীরে আছে গোপন এক প্রাচীন গবেষণাগার… ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মানুষের লাশ! আরও কিছু চাই? পাবেন। গবেষণাগারের পাশে, জমাট বাঁধা বরফের ভিতরে রয়েছে পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা একদল হিংস্র, রাক্ষুসে, প্রাগৈতিহাসিক দানব! এবে রওনা দেবার আগে জানিয়ে রাখা ভাল, ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। দ্বীপের দখ। নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মার্কিন সরকার। খবর পেয়ে সাবমেরিন নিয়ে রাশান এক রিয়ার অ্যাডমিরাল আসছেন ওটাকে নিউক্লিয়ার বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। শুধু তা-ই নয়, শীতনিদ্রা ভেঙে খুব শীঘ্রি জাগতে চলেছে। রাক্ষুসে দানবের দল! ভীষণ খিদে ওদের পেটে। বুঝতেই পারছেন, যেতে হবে নিজ ঝুঁকিতে। রানা অবশ্য থাকছে আপনার সঙ্গে তবে… ওর নিজেরই তো.. ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোকে গ্রাস করতে চলেছে। পশ্চিমা দুনিয়া। প্রস্তুতির কাজ শেষ। এমন সময় মাসুদ রানার হাতে এল ওদের পরিকল্পনার নীল নকশা। পৌছে গেল ওটা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চিফ মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানের হাতে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে এমন কয়েকটি দেশের সিক্রেট সার্ভিস চিফের সঙ্গে বসে তৈরি করলেন তিনি পাল্টা পরিকল্পনা। প্রস্তুত রইল এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সেনাবাহিনী ঠিক হলো: ইজরায়েলের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে মার্কিন পারমাণবিক মিসাইল। ডাক পড়ল মাসুদ রানা, সোহেল আহমেদ, লিউ ফু-চুং, অনিল চট্টোপাধ্যায়, আসি ও উর্বশী দাসার। ওদের সঙ্গে সেই ধচাপচা জাহাজে করে চলেছে আরও অনেকে। জাহাজ কিন্তু আপনার খুবই চেনা… স্বর্ণ-বিপর্যয় সেই মার্ভেল অভ গ্রিস! পাঠক, এই আত্মঘাতী মিশনে যাবেন ওদের সঙ্গে?
পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাসুদ রানা। সি.আই.এ এবং জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে ওর মাথার ওপর। কদিন বিশ্রাম নেবে মনে করে আশ্রয় নিল সে বন্ধু রেমারিকের ওখানে, ইটালীতে। তারই সুপারিশে দেহরক্ষীর চাকরি নিল ইটালীর এক ধনী পরিবারে। সেখানে ছোট্ট একটি মেয়ে মিষ্টি একটা গান উপহার দিল রানাকে। দিয়েই চিরবিদায় নিল এ পৃথিবী থেকে। খুন করেছে ওকে কিডন্যাপাররা। কিছুর সাথে নিজেকে জড়াবে না প্রতিজ্ঞা করেছিল রানা; কিন্তু কখন যে ওকে জয় করে নিয়েছিল কিশোরী মেয়েটা, টেরই পায়নি। এখন আর ঘুমাতে পারে না ও। দাউ দাউ করে জ্বলছে বুকে প্রতিশোধের আগুন