রাজনীতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়া, ষড়যন্ত্র নিয়ে লেখকের অনুসন্ধানী গবেষনা ১১ জানুয়ারি ২০০৭। বিকেলে বঙ্গভবনে মঞ্চস্থ হলো রুদ্ধশ্বাস নাটক। হঠাৎই বদলে গেল দেশের হালচাল। ক্ষমতায় এলো সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। লাইনচ্যুত গাড়ি ফের লাইনে তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকার হাত দিলো অনেকগুলো কাজে, যা প্রশংসা ও নিন্দা দুটোই কুড়িয়েছে। উথাল-পাথাল এই দুই বছর ছিলো ঘটনাবহুল। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ অধ্যায়। ১১ জানুয়ারির পালাবদলের ক্ষণটির নাম হলো ওয়ান-ইলাভেন বা এক-এগারো। প্রশ্ন হল - এই সেনা হস্তক্ষেপ কি বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের অনিবার্য পরিণতি, নাকি এর পেছনে ছিলো অনেক দিনের পরিকল্পনা? কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়া, নাকি ষড়যন্ত্র? লেখকের অনুসন্ধানী গবেষণায় ঐ সময়ের একটি সুরতহালের চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক মহাকাব্যিক চরিত্র সিরাজুল আলম খান। তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক, কৌতূকহল এবং বিভ্রান্তি। অনেকের কাছে তিনি রাজনীতির রহস্যমানব। তিনি ছিলেন একঝাক তরুণের স্বপ্নের সওদাগর। তাঁর নাটকীয় উত্থান ও বিয়োগান্ত পরিণতির অন্তরঙ্গ বিবরণ আছে এ বইয়ে।
সত্য গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর-মার্ক টোয়েনের এই বিখ্যাত উক্তিটি বাংলাদেশের রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই প্রাসঙ্গিক। এই ভূখণ্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রধান মাইলফলক মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ দেশের মানুষকে বদলে দিয়েছে আমূল, নড়বড়ে করে দিয়েছে এ অঞ্চলের সামাজিক বুনন ও রাজনীতির চালচিত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে দিয়েছে রাজনীতির ব্যাকরণ। বলা চলে, একরকম শূন্যতার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে প্রতিবাদের অন্য একধরনের প্রবণতা, যার সংগঠিত রূপ হচ্ছে জাসদ নামের একটি রাজনৈতিক দল। দলটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের উপজাত ফসল এবং একই সঙ্গে দ্রোহের চরমতম প্রতীক। এই বইয়ে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে দলটির উত্থান, বিস্তার ও ভেসে যাওয়ার কাহিনি, যা উপন্যাসকেও হার মানায়। সে কাহিনিতে স্বপ্ন আছে, রোমাঞ্চ আছে, আছে নাটকীয়তা ও বীরত্ব। সব মিলিয়ে বইটি হয়ে উঠেছে স্বাধীনতা-পরবর্তী অস্থির সময়ের এক দলিল, যার অনেকটাই লেখা হয়েছে রক্তের অক্ষরে।
‘বিএনপি সময়-অসময়’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ বিএনপির জন্ম সেনাছাউনিতে, একজন সেনানায়কের হাতে, যখন তিনি ছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্রে। এ ধরনের রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বৃত্ত থেকে ছিটকে পড়লে সাধারণত হারিয়ে যায়। বিএনপি এদিক থেকে ব্যতিক্রম। দলটি শুধু টিকেই যায়নি, ভোটের রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। দেশে গণতন্ত্র আছে কি না, বিএনপিতেও গণতন্ত্রের চর্চা হয় কি না, তা নিয়ে চায়ের পেয়ালায় ঝড় তোলা যায়। কিন্তু দলটি দেশের জনগোষ্ঠীর এক বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, এটা অস্বীকার করার জো নেই। বিএনপির সুলুক সন্ধান করতে হলে আমাদের যেতে হবে একাত্তরে। জানতে হবে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের মনস্তত্ত্ব। পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত ঘটনাপ্রবাহকে এড়িয়ে গিয়েও বিএনপি সম্পর্কে আলোচনা হবে অসম্পূর্ণ। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি ষড়যন্ত্রের ফসল, নাকি এর উত্থান ছিল অনিবার্য। লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ এই বইয়ে দলটির একটা সুরতহালের চেষ্টা করেছেন। প্রথমবারের মতো এই বইয়ে উঠে এসেছে জানা-অজানা নানা প্রসঙ্গ, যা একদিন ইতিহাসের উপাদান হবে।