পূর্ব নির্ধারিত সত্য বিশেষ কোনো কারণে আড়ালে চলে গেলেও একদিন নিজস্ব আলোকচ্ছটায় প্রকাশিত হবেই। অতীতকে নিয়ে আম্মিরার আত্মবিস্মরণ হলেও সেই বিশেষ সত্তাগুলো এখন যেন তার নিশ্বাসের সঙ্গে মিশে আছে। ক্ষণে ক্ষণে আম্মিরা তাদের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারে। বিশেষ করে হাতের শিরাগুচ্ছ সবুজবর্ণ ধারণ করলে। কেন এমন হয় তা সে জানে না। মাঝেমধ্যে মেয়েটির স্মরণে আসে যে জীবনটা সে উপভোগ করছে সেটা তার নিজস্ব নয়। আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোন সে জীবনযাপন করলেও, রাস্তার পাশে অবস্থিত বাদামি কাঠের বাড়ির সামনে দাঁড়ানো সেই শোভন ছেলেটির নীল চোখ দুটো সময়ে সময়ে তাকে বড় উদাসীন করে তুলে। সবটা হারিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে ফিরে পাওয়ার গাথা কেমন হবে? নাকি ফিরে পাওয়া মানেই হচ্ছে হারিয়ে ফেলা?
ফারিহার গাড়িতে ছোটাচ্চুকে ওঠানো হয়েছে। তবে আজকে ছোটাচ্চু বসেছে পেছনের সিটে। তার চোখ একটা গামছা দিয়ে শক্ত করে বাঁধা, যেন সে কোনোভাবেই দেখতে পারে। তার এক পাশে টুনি অন্য পাশে শান্ত, তারা শক্ত করে ছোটাচ্চুর হাত ধরে রেখেছে যেন ছোটাচ্চু হাত দিয়ে তার চোখের বাঁধন খুলে ফেলতে না পারে। গাড়ির সামনের সিটে ফারিহাপুর পাশে বসেছে ঝুমু থালা। ঝুমু খালা অনেক আপত্তি করেছে কিন্তু কেউ শুনে নাই। সবাই মিলে তাকে আবার মার্দানা ম্যাডামের মতো সাজিয়ে দিয়েছে, তার কপালে টিপ আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক।
মতিঝিলে গভীর রাতে একটি বাঘ ঢুকে পড়েছে, টহলরত পুলিশের একেবারে সামনে দিয়ে। যেনতেন বাঘ নয়, প্রকাণ্ড রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেই বাঘটিকে কিছুতেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না। চিড়িয়াখানা থেকেও কোনও বাঘ পালিয়ে যায় নি। সেটা এলো কোথা থেকে? গেল কোথায়? নানা মুনির নানা মতো। এমনকি কোনও বাঘই নয়, কি দেখতে কি দেখেছে, তেমন মন্তব্যও আসতে থাকে। সেই বাঘ খুঁজতে গিয়ে অতর্কিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক সদস্য হতাহত হয়ে যান। কিন্তু বাঘটিকে মারা সম্ভব হয় না। সেটা আবারও পালিয়ে যায়। ওদিকে ভোর হওয়ার আগেই মানুষ সব জেনে ফেলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় গুজব, আর ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তড়িঘড়ি তৈরি করা হয় ‘বাঘ সঙ্কট নিরসন কমিটি।’ তারা যুক্তিসংগত কোনও ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছেন না। মতিঝিলের চারদিকে বেস্টনী দেয়া হয়। ভারী অস্ত্র নিয়ে রীতিমতো সেনাবাহিনী নেমে পড়ে। বিদেশ থেকে পরামর্শ আসে। কিন্তু অতি ধূর্ত এবং ভয়ংকর বাঘটিকে ধরাও যায় না, মারাও যায় না। বাঘ সঙ্কট নিরসন কমিটির এক সময় মনে হয়, বাঘটার বিশেষ একটা উদ্দেশ্য আছে। এরপরে ঘটনা যেভাবে এগুতে থাকে, তাতে সব কল্পনা হার মেনে যায়।